আলু পেঁয়াজ রপ্তানি করতে না পেরে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ভারতের কৃষকরা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা আর ভারত থেকে কোনও পণ্য আমদানি করবে না। এর ফলে ভারতের আলু পেঁয়াজ পচে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। সেখানকার কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা। আর এই জেদ ধরে তাঁদের এই পরিণতির জন্য কলকাতার ব্যবসায়ী এবং কৃষকেরা মোদি প্রশাসন, শুভেন্দু অধিকারী এবং উন্মাদ সাংবাদিক ময়ূখকে দায়ী করছে এবং তাদের শাস্তি হোক।

নতুন ন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক থমাস কোন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টিতে ভারত গত কয়েক বছর ধরে ভুল পক্ষে ছিল। ভারতীয় সরকার বাংলাদেশে কোনো ধরনের পরিবর্তন দেখতে চাইনি৷ এবং গত কয়েক বছরে তা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প তাঁরা দেখছেন।

নয়। এরপরই ১৫ বছরের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া দুই দেশের সম্পর্ককে নাজুক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে৷ এ ছাড়া ভারতীয় মিডিয়া গুলো প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ও ভারতের পণ্য বর্জন আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে।

লকার বন্ধ করে ওদের আলু পিঁয়াজ কী করে খাই? আমরা সেটা দেখিয়ে যাব। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা অধিকারী এ ভাবেই বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছিল যে বাংলাদেশ ভারত থেকে আলু, পেঁয়াজ পাবে না। মোদি প্রশাসন ভেবেছিল বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছে তারা। কিন্তু এতদিন পর যখন তাদের আলু পেঁয়াজ পচতে শুরু করল তখন নয়াদিল্লি বুঝতে পারল হুমকি তাঁদের উপরে এসে পড়েছে।

ভারতের দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আয় হয়, যা ভারতের গড় আয়ের বড় অংশ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক ভালো না করে ভারতের নেতা কর্মীরা তাঁদের কথায় দম্ভ এবং হুমকি দেখিয়েছে। তাতে তাদের ফল এখন তারাই ভোগ করছে।

প্রতিবছর ভারতের পেঁয়াজ নীতি বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন আমেরিকার আছে উন্নত প্রযুক্তির মিসাইল, রাশিয়ার আছে অত্যাধুনিক অস্ত্র, সৌদি আরবের আছে তেল, আর ইরানের আছে ড্রোন-তেমনি ভারতের মিসাইল যেন পেঁয়াজ! বাংলাদেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিলেই দিল্লি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, শুল্ক বসায়, কিংবা নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে এবার মোদির সেই চাল উল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ।

এবার ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদনের পাশাপাশি বিকল্প উৎসের দিকেও নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও দেশে কোনো সংকট দেখা দেয়নি, বরং ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে তেমন একটা টিকছে না।

সম্প্রতি ভারতের রাজস্ব বিভাগ পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল ১লা এপ্রিল থেকে দেশটির রপ্তানিকারকেরা বিনা শুল্কে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন। এতদিন পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ছিল। এর আগে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ধরে রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর‌্যন্ত রপ্তানিতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলেও রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতীয় কৃষকেরা সেই সুবিধা নিতে পারছিলেন না। এ নিয়ে দেশটিতে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং তারা আন্দোলনে নামেন। অবশেষে আন্দোলনের মুখে ও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪ মার্চ থেকে ভারত আবার পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয়।

তবে বাংলাদেশ আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ নীতি আর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এবার বাংলাদেশ ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পেঁয়াজকে মিসাইল বানিয়ে চাপ সৃষ্টি করার দিন শেষ! বরং বাংলাদেশে রপ্তানী করতে না পারায় কারণে ভারতে মহাদুর্ভিক্ষের দিন শুরু।



-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ আরিফ।