বিপজ্জনক পথে পাকিস্তানিদের ইউরোপ যাত্রা
, ০২ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) বিদেশের খবর
ইউরোপে কাজ পেতে হাজার হাজার পাকিস্তানি ‘লিবিয়া রুট’ ব্যবহার করছে। এই পথে ইউরোপে যেতে হলে নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে হয়। এই পথ কতটা বিপজ্জনক- তা বোঝা যায় জুন মাসের একটি ঘটনায়, যখন গ্রিসের উপকূলে একটি অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। চলতি বছর প্রায় ১৩ হাজার পাকিস্তানি এজন্য মিসর ও লিবিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই ফেরেনি। এর মধ্যে ছিল ফরহাদ ও তৌহিদ নামের দুই তরুণ। তাদের মায়ের কাছে শেষ বার্তা ছিল দুশ্চিন্তা না করার।
পাঞ্জাব প্রদেশের একটি থানা। ভ্যাপসা গরম পড়েছে, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একটু বাতাসও বইছে না। ঘাম গড়াচ্ছে পিঠ বেয়ে, আর থানার কর্মকর্তাটির কপালও ঘামে চকচক করছে। একটা খোলা করিডোর দিয়ে কয়েকটা কাগজপত্রে-ঠাসা কক্ষ পেরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো একটা ছোট সেলে। তার সিমেন্টের মেঝেতে ১৬ জন পুরুষ পাশাপাশি বসা। কুঠরিটির শিকের দরজার বাইরে একটি ফ্যান ঘুরছে। নিচু একটা দেয়ালের ওপাশে দেখা যাচ্ছে একটা টয়লেট। আটক লোকগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত।
গত ১৪ জুন লিবিয়া থেকে গ্রিসে যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে যায় একটি অভিবাসীতে ভর্তি নৌযান। তাতে প্রায় ৩০০ জন পাকিস্তানি আরোহী নিখোঁজ হয়- যাদের সবাই ডুবে মারা গেছে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আটক লোকদের অধিকাংশই ধরা পড়েছে ওই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে। নিখোঁজ ৩০০ জনের মধ্যে ছিল ফরহাদ ও তৌহিদও- যাদের বয়স যথাক্রমে ১৫ ও ১৮ বছর। একজন লোক উঠে দাঁড়াল- তার নাম হুসেইন শাহ। গত এক দশক ধরেই সে একজন মানব পাচারকারী এবং এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হয়েছে সে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- ১৪ জুনের জাহাজডুবিতে সে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তবে তা অস্বীকার করছে হুসেইন শাহ। সে জানায়, ‘এখানে বেকারত্ব এত বেশি যে, লোকে নিজে থেকেই আমাদের বাড়িতে এসে জানতে চায়, আমি এমন কাউকে চিনি কিনা- যে তার ভাই ও ছেলেদের বিদেশে নিয়ে যেতে পারবে। ’ তার ধারণা, এত বছর ধরে মানব পাচারের কাজ করার ফলে সে হাজার হাজার লোককে নিয়ে গেছে। হুসেইন বলে, ‘আমি এই কাজ শুরু করেছিলাম, কারণ এখানে আর কোনো ব্যবসা নেই। এই কাজে আমি প্রধান ভূমিকায় নেই। বরং লিবিয়ায় যারা বসে আছে, তারাই বিরাট লোক, অনেক ধনী। আমরা অর্থের সিংহভাগ পাই না। এমনকি ১০ ভাগের এক ভাগও নয়। ’
এভাবে যেতে গিয়ে যারা মারা গেছে, তাদের জন্য কি তার কোনো অপরাধবোধ কাজ করে না? এই প্রশ্ন করতে হুসেইন শাহের গলার স্বর পাল্টে গেল। বলল, ‘আমি দুঃখবোধ করি, আমরা সত্যিই লজ্জিত। কিন্তু আমরা কী করব? আমি যদি না করি, তাহলে অন্য কেউ এই কাজ করবে। ’
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন গুরুতর সংকটাপন্ন। মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৪০ শতাংশ, দেশটির মুদ্রা রুপির মূল্যমান ক্রমাগত নামছে। এ কারণে অনেকেই চাইছে বিদেশে চলে যেতে- সেখানে নিম্ন বেতনের কাজ করলেও তা হবে দেশে থেকে তারা যা আয় করবে, তার চেয়ে বেশি।
গত বছরের শেষ দিকে করা এক জরিপে দেখা গেছে, পাকিস্তানে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সের তরুণদের ৬২ শতাংশই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়। এর মধ্যে কিছু আছে, যারা বৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু অন্যরা বের করে নেবে ‘বিকল্প পথ’।
অবৈধ অভিবাসন এমন একটি জিনিস, যার সংখ্যা নিরূপণ করা খুবই কঠিন। কিন্তু পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ বলেছে, সাম্প্রতিক গ্রিসের জাহাজডুবি থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পাকিস্তানিদের জন্যে আজকাল সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হচ্ছে এটাই- বিমানে দুবাই হয়ে মিসর বা লিবিয়া, তারপর পূর্ব লিবিয়া থেকে একটা বড় নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ।
ইরান বা তুরস্ক হয়েও যাওয়ার পথ আছে, কিন্তু সেসব পথে পাকিস্তানিদের সংখ্যা কম। তুরস্কের মতো দেশগুলোর সম্প্রতি অবৈধ পথে আসা লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে- বলছেন মোহাম্মদ আলম শিনওয়ারি, যিনি গ্রিসের জাহাজডুবির ঘটনাটি তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১৩ হাজার লোক লিবিয়া বা মিসরের পথে দেশ ছেড়েছে। ২০২২ সালে এর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার। চলতি বছর যে ১৩ হাজার গেছে, তাদের মধ্যে ১০ হাজারই আর দেশে ফেরেনি। তারা এখনো লিবিয়ায় আছে কিনা বা কোনো ইউরোপীয় দেশে চলে গেছে কিনা, তা জানা নেই।
শিনওয়ারি বলেন, এসব রুটের ব্যাপারে তদন্ত করা এক জটিল ব্যাপার। কারণ কী ঘটেছে, তা জানাতে পরিবারগুলো পুলিশের কাছে আসে না। তিনি বলেন, ‘লোকে অভিযোগ করতে আসে না, বরং নিজেদের মধ্যে আপসরফা করে নেয়। পরিবারের সহায়তা ছাড়া এসব মামলা করা খুবই কঠিন। ’
জটিলতা আরও আছে। এসব যাত্রায় অনেক ভ্রমণকারীরই বৈধ ভিসা ও কাগজপত্র নিয়ে দুবাই বা মিসরে গেছে। ফলে তাদের থামানোও কঠিন। এ কারণে এই পথে যাত্রা এখন আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে গেছে- একেকজন খরচ করছে পাকিস্তানি মুদ্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ রুপি। এতে বোঝা যায়, দেশ ছাড়ার জন্য লোকে কত অর্থ খরচ করতে তৈরি।
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে পাকিস্তান কাজ করছে না তা নয়। শিনওয়ারি বলেন, তারা গত বছর সম্ভাব্য মানব পাচারের শিকার ১৯ হাজার লোকের যাত্রা ঠেকিয়েছেন, ২০ হাজার পাকিস্তানিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি এটাও বলছেন, কত লোক এভাবে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই। যারা এভাবে গেছে, তাদের অনেকে এখন লিবিয়ায় আটকে আছে। পাঞ্জাবের এ রকম একটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে জানা যায়, এ রকম পরিবার ওই এলাকায় আরও অনেক আছে। কেউ কেউ গেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। তারা বন্ধু ও আত্মীয়দের কাছে বার্তা ও ভিডিও পাঠিয়ে আরও টাকা পাঠানোর অনুরোধ করছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হামাসের সাথে আলোচনা ছাড়া গাজায় শান্তি আসবে না: কাতার
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সংকট কাটাতে ‘অপপ্রচারে’ বড় বাজেট বরাদ্দ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সুদানে হাসপাতাল ও স্কুলে ড্রোন হামলা, নিহত ৭৯
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
শ্রীলঙ্কায় বন্যার মধ্যেই নতুন করে ভূমিধসের শঙ্কা
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইসরায়েলি দখলদারিত্ব শেষ হলেই অস্ত্র সমর্পণ
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইসরাইলপ্রীতি বন্ধে ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধানকে আহ্বান
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি পরিবার চালাচ্ছে নারীরা -জাতিসংঘ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাবরি মসজিদ বানাতে চাওয়া বিধায়ককে বহিষ্কার করেছে কংগ্রেস
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাবরি মসজিদ শহীদ দিবসে পুনরায় বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন - ৩ লক্ষ মানুষের গণজমায়েত
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












