বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান:
বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শল্যবিদ আবু মারওয়ান আবদুল মালিক ইবনে আবীল আলা ইবনে যুহর
, ২১ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ২৮ জুন, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আবু মারওয়ান আবদুল মালিক ইবনে আবীল আলা ইবনে যুহর (হিজরী ৪৮৭-৫৫৭; ১০৯৪-১১৬২ খ্রি.) ছিলেন আল আন্দালুসিয়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক, শল্যবিদ ও কবি। তিনি ছিলেন ইবনে রুশদ ও ইবনে তুফাইলের সমসাময়িক।
কাফের-মুশরিকরা উনার নামকে বিকৃত করে ‘এভেনযোর’ হিসেবে প্রকাশ করে মুসলমান বিজ্ঞানী হিসেবে উনার অবদানকে আড়াল করার চেষ্টা করে থাকে।
উনাকে উনার সময়ে সেরা চিকিৎসক গণ্য করা হয়। উনার চিকিৎসার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল উনি খুব ভাল ঔষধ নির্বাচন করতে পারতেন, যা উনার অভিজ্ঞতার আলোকে করতেন। তিনি বিশেষ কিছু রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিবিধান করে চিকিৎসা ও শল্যবিদ্যাকেও নতুন উচ্চতায় নিয়েছিলেন। ইবনে যুহর সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলক ট্রাকিয়াটমি সম্পন্ন করেছিলেন একটি ছাগলের উপর। ধারণা করা হয় যে, তিনিই সর্বপ্রথম পরিপাকতন্ত্রে পাথর বা এ জাতীয় বস্তুর উপস্থিতি বর্ণনা করেন।
ইবনে যুহর আল আন্দালুসিয়ার সেভিলে হিজরী ৪৮৭ (খ্রি. ১০৯৪) সালে বনু জুহর নামক আরবীয় বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ৪র্থ হিজরী (১০ম খ্রি.) শতক হতে বংশ পরম্পরায় উনার পূর্বপুরুষগণ আল আন্দালুসের শাসকদের দরবারে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। উনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় দ্বীন ও সাহিত্য শিক্ষা করে।
পরে তিনি চিকিৎসা বিদ্যায় শিক্ষা লাভ করেন। তিনি চিকিৎসক জীবন শুরু করেন আল মুরাবিতুন শাসকদের দরবারে। তবে কোন বিষয়ে আল মুরাবিতুন শাসকদের সাথে বিরোধের কারণে হিজরী ৫৩৪ (১১৪০ খ্রি.) সালে উনাকে মারাক্কেশে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। পরে আল মুওয়াহিদুন শাসকরা সেভিল দখল করে নিলে তিনি আবার চিকিৎসক পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি সেভিলে হিজরী ৫৫৭ (খ্রি. ১১৬২) সালে ইন্তেকাল করেন।
‘কিতাবুল ইক্বতিছাদ’ (অনূদিত নাম- দা বুক অফ মডারেশন) ছিল উনার প্রথম জীবনে রচিত চিকিৎসা গ্রন্থ। তিনি এই কিতাবটি মুরাবিতুন শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচনা করেছিলেন। এই কিতাবে তিনি বিভিন্ন রোগ, রোগের প্রতিবিধান এবং সাধারণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর আলোচনা করেছেন।
তিনি নাক, ঠোঁট, বাকা দাঁত ঠিক করতে এক ধরণের শল্য চিকিৎসার পরামর্শ দেন যা আধুনিক প্লাষ্টিক সার্জারির অনুরূপ।
উনার লিখিত ‘কিতাবুল আগযিয়াহ’ (অনূদিত নাম- দা বুক অফ ফুডস) হচ্ছে খাবার ও খাদ্যগ্রহণ তালিকার উপর একটি কিতাব। এখানে বিভিন্ন খাবারের বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যেমন: রুটি, গোশত, পানীয়, ফল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য। গোশতের ক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন হালাল প্রাণীর গোশতের বিবরণ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ঋতুতে নির্দিষ্ট ধরণের খাবারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
উনার অনবদ্য কাজ হচ্ছে, ‘কিতাবুত তাইসীর ফীল মুদাওয়াতি ওয়াত তাদবীর’ (অনূদিত নাম- দা বুক অফ সিমপ্লিকেশন কনসার্নিং থেরাপিউটিকস এন্ড ডায়েট), যা ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। যার ফলে জ্ঞানের আলো শুন্য ইউরোপে শল্যবিদ্যার উন্নতিতে ব্যাপক প্রভাব রেখেছিল। এই কিতাব উনার বন্ধু ইবনে রুশদের আল কুল্লিয়াতের এক ধরণের সারসংক্ষেপ যেখানে ঔষধের উপর মূলত আলোকপাত করা হয়েছে। এই দুই কিতাব ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় অনুদিত হয়েছিল এবং দুইটি বই একসাথে মুদ্রণ করে একটি বইয়ের মত খ্রি. ১৮শ শতক পর্যন্ত ইউরোপে পাওয়া যেত। এই কিতাবে ৩০টি অধ্যায় রয়েছে। এখানে মাথা হতে শুরু করে দেহের অন্যান্য রোগের পরিষ্কার বর্ণনা ও রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উল্লেখ করেন।
ইবনে যুহর খাদ্য নালী, পেট ও মধ্যচ্ছেদার ক্যান্সার ও অন্যান্য কোষ-টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির উপর যথাযথ বর্ণনা দিয়েছেন। পেটের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তিনি ডুশের প্রতিবিধান দেন। তিনিই সর্বপ্রথম মধ্যকর্ণের প্রদাহ ও হৃদপিন্ডের বহিস্থ পেশির প্রদাহের রোগগত কারণ বিশদভাবে বর্ণনা করেন। খোস-পাচঁড়া সংশ্লিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে ইবনে যুহর উনাকেই প্রথম ব্যাখ্যা দেয়ার কৃতিত্ব দেয়া হয়, যা মাইক্রোবাইয়োলজি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে। তিনি কোন রোগের পরীক্ষামূলক প্রতিবিধান করার ক্ষেত্রে আগে অন্য প্রাণীর উপর প্রয়োগ করে পরে মানুষের উপর প্রয়োগ করতেন।
উনার অন্যান্য কাজ গুলো হচ্ছে: ফীল জীনাহ, আত তিরয়াকুছ সাবিনি, ফী ইল্লাতিল কিলা, ফী ইল্লাতিল বারাস ওয়াল বাহাক, আত তাজকিরাহ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












