ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
বুগয বা শত্রুতার নিন্দা ও তার প্রতিকার
, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا لَا تَتَّخِذُوْا بِطَانَةً مِّنْ دُوْنِكُمْ لَا يَأْلُوْنَكُمْ خَبَالًا وَدُّوْا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُـخْفِيْ صُدُوْرُهُمْ اَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْاٰيَاتِ ۖ اِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُوْنَ ◌
অর্থ : হে ঈমানদাররা! তোমরা ঈমানদার ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা তোমাদের ক্ষতি সাধনে কোন ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাকো, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই প্রকাশ হয়ে পড়ে আর যা কিছু তাদের অন্তরে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। আমি তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দিলাম। যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ১১৮)
উদ্ধৃত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃতপক্ষে কাফির, মুশরিকরা হচ্ছে মুসলমানদের শত্রু। ফলে তারাই মুসলমানদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে পারে এবং বাস্তবিক করেও থাকে। কিন্তু মুসলমানরা হচ্ছে পরস্পর ভাই ভাই। ফলে তারা একে অপরের সাথে সর্বদা মিত্রতা বা বন্ধুসুলভ আচরণ বজায় রাখবে। তারা একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ বা শত্রুতা করতে পারে না।
তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে ব্যক্তি মুহব্বত করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, বিদ্বেষ পোষণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, আদেশ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, নিষেধ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য তিনি ঈমানে পরিপূর্ণ। (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন ব্যক্তি কখনও বিদ্বেষ পরায়ণ হতে পারে না।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, বিদ্বেষভাবের তারতম্য অনুসারে মানুষ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত।
প্রথম শ্রেণী : ছিদ্দীক্বগণ। উনাদের মনে কারো প্রতি বিদ্বেষ জাগরিত হলে কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমে উনারা মূলোচ্ছেদ করে থাকেন। উনারা বিরাগভাজন ব্যক্তির উপকার করেন এবং পূর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠতার সাথে তার সাথে মিলিত হন।
দ্বিতীয় শ্রেণী : পরহেযগারগণ। উনারা বিরাগভাজন ব্যক্তির উপকার ও অপকার কিছুই করেন না। অর্থাৎ বিদ্বেষভাব উনাদের মানসিক অবস্থার কোনই পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।
তৃতীয় শ্রেণী : ফাসিক ও যালিম। এরা বিদ্বেষকারী ব্যক্তির অনিষ্ট বা ক্ষতি সাধনের নিমিত্তে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ তোমার অনিষ্ট করে থাকলে তুমি তার উপকার করো। ইহাই মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভের প্রকৃষ্টতম উপায়। ইহা সম্ভবপর না হলে অন্ততপক্ষে তাকে ক্ষমা করো।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনটি বিষয়ে আমি শপথ করতে পারি। তা এই-
(১) ছদকা দিলে ধন কমে না, কাজেই তোমরা ছদকা দাও।
(২) যে ব্যক্তি অপরের অপরাধ ক্ষমা করে, ক্বিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে অধিক মর্যাদা দান করবেন।
(৩) যে ব্যক্তি নিজের জন্য ভিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য দরিদ্রতার পথ উন্মুক্ত করে দেন।
হযরত উকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হাত ধরে বললেন, সংসারী লোক ও আখিরাতের পথিক উভয়ের জন্য যে ভাব উত্তম; তা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি। আপনার সাথে কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে আপনি তার সাথে মিলিত হবেন। আপনাকে কেউ বঞ্চিত করলে, আপনি তাকে দান করবেন। আপনার প্রতি কেউ অত্যাচার করলে, তাকে আপনি ক্ষমা করবেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি খালিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে নিবেদন করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনার বান্দাগণের মধ্যে কোন ব্যক্তি আপনার নিকট অধিক প্রিয়? খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, শাস্তি দানে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত লোক উত্থিত হলে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যাদের পুরস্কার মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট রয়েছে তারা উঠুন। কয়েক সহ¯্র লোক উঠবেন এবং উনারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবেন। কারণ উনারা দুনিয়াতে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিতেন।
বর্র্ণিত রয়েছে, খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের নিকট যুদ্ধবন্দীদেরকে আনয়ন করা হলো। তখন এক বুযুর্গ ব্যক্তি তথায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি খলীফাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যা চেয়েছ মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে তা দান করেছেন অর্থাৎ তোমাকে বিজয়ী করেছেন। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান, তা তুমি দাও অর্থাৎ তাদেরকে ক্ষমা করো। ইহা শুনে খলীফা সমস্ত বন্দীকে ক্ষমা করে দিলেন।
মোটকথা, মহান আল্লাহ পাক তিনি সদয় সহনশীল এবং তিনি সদয় সহনশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসেন।
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহিলাদের ইজ্জত-সম্মান, পর্দা রক্ষা করার জন্য সুখবর!
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৫)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত জরুরী মাসয়ালা (৫)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত জরুরী মাসয়ালা (৫)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করা জায়েয নেই
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মেয়েদের জন্য সবচাইতে উত্তম আমল হচ্ছে- ‘কোন পুরুষকে সে দেখবে না, কোন পুরুষও তাকে দেখবে না’
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












