আপনাদের মতামত
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি শিখলেই কী মুসলমানরা উদ্ধার হয়ে যেতো?
, ৯ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আপনাদের মতামত
উপমহাদেশের, বিশেষত বাংলাদেশের প্রচলিত ইতিহাসের বইগুলোতে মুসলমানদের তাচ্ছিল্য ও হিন্দুদের প্রশংসা শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে হিন্দুদের দ্বারা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করা নিয়ে। এই এক ছুতো ধরে হিন্দু সম্প্রদায়কে শিক্ষানুরাগী, জ্ঞানী, প্রগতিশীল এসব উপাধি দিতে দিতে রীতিমতো আকাশে তুলে ফেলা হয়, আর মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষাহীন পশ্চাৎপদ আখ্যা দিতে দিতে তাদের সমস্ত অবদানকেই বস্তুতঃ অস্বীকার করা হয়।
বলাবাহুল্য, ইতিহাসের ভুল ব্যাখার ফলে এটি হচ্ছে। ¯্রফে ইংরেজি শিখলেই ব্রিটিশদের দৃষ্টিতে মুসলমানরা ভালো হয়ে যেতো না, কিংবা স্রেফ ইংরেজি শিখেই হিন্দুরা ব্রিটিশদের নৈকট্য লাভ করেনি। যারা ইংরেজি না শেখার কারণে মুসলমানদের তাচ্ছিল্য করতে ব্যাকুল, তাদের নিকট প্রশ্ন, তারা কেন ইংরেজি ভাষাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে?
এই প্রশ্নের উত্তর অনেক লম্বা। দাপ্তরিক চিঠিপত্র নোট লেখা ইংরেজি ছাড়া কি চলে? প্রকৌশল ও মেডিকেলের টার্মগুলো কি ইংরেজি ভাষা ছাড়া ব্যাখা করা যাবে? কম্পিউটার, ইন্টারনেট থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তির সব তো ইংরেজিতে এরকম অনেক উত্তরই দেওয়া যায়।
এবার আমরা দেখি, ফারসী ভাষা বাদ দিয়ে যখন ব্রিটিশরা ইংরেজি চালু করতে চাইলো, তখন তার প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল। গবেষক ড. ওয়াকিল আহমদ রচিত ‘বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবী’ বইটির ২৩৯ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে-
“১৮৩৭ সালে ফারসী রহিত করে অফিসের ভাষা ইংরেজি, জেলার আদালতের ভাষা বাংলা-উর্দু করা হলে দেশের মুসলমান-হিন্দু প্রায় আট হাজার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি প্রতিবাদ লিপি গভর্নর জেনারেলকে প্রদান করে। তাদের প্রধান যুক্তি ছিল অফিস-আদালতের চিঠিপত্র ও রায়াদি ফারসী ভাষায় যেভাবে লেখা যায়, অন্য ভাষায় সেভাবে লেখা যায় না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত ফারসীর বিশিষ্ট শব্দ, বাক্যাংশ, প্রবাদ ইত্যাদির ভাষান্তর সম্ভব নয়। ”
উল্লেখ্য, ইংরেজি ভাষা উপমহাদেশের বিচার ও প্রশাসনে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র দেড়শ বছরের কিছু বেশি সময় হলো। বিপরীতে ১৮৩৭ সালের প্রেক্ষাপটে ফারসী ভাষা ছয়শ বছরের অধিক সময় অতিক্রম করেছিল এ অঞ্চলের প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার কার্যক্রমে, ইংরেজি ভাষা তখন নেহায়েত শিশু। সুতরাং বর্তমানে ইংরেজি ত্যাগ করাটা একশ্রেণীর লোকদের কাছে যেরকম হাস্যকর শোনায়, তৎকালীন প্রেক্ষাপটে ফারসী ত্যাগ করে ইংরেজি গ্রহণ করাটা তারচেয়ে ঢের বেশি পাগলামি ও হাস্যকর শোনাত।
ব্রিটিশরাও কিন্তু তাদের শাসনামলের প্রথম ১০০ বছর ফারসী ভাষাকে কেন্দ্র করেই কাটিয়েছে। ফারসী ভাষা তখন এমনভাবে প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার উপযোগী হয়ে উঠেছিল যে, ১৮৩৭ সালে ইংরেজি চাপিয়ে দেওয়ার পর ফারসীর পক্ষে যেসব চিঠি গিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকদের নিকট, তাতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে প্রচুরসংখ্যক হিন্দুও ছিল। অর্থাৎ বর্তমানে যেমন একশ্রেণীর লোক বলে থাকে, ইংরেজি ছাড়া কি চলে? তৎকালীন প্রেক্ষাপটেও সেভাবে সবাই বলে উঠেছিল, ফারসী ছাড়া কি চলে? ১৮৩৯ সালে ঢাকা থেকে ৪৮১ জন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি প্রদান করা হয় ফারসী বহাল রাখার পক্ষে, যার ১৯৯ জনই ছিল হিন্দু। (সূত্র: বাংলাদেশে ফারসি অনুবাদ সাহিত্য, মুহম্মদ আবুল কালাম সরকার, এশিয়াটিক সোসাইটি, পৃষ্ঠা ৬৯)
-আদনান হামিদী আখন্দ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খ্রিস্টানদের অনুষ্ঠানকে ‘বড়দিন’ বলা যাবে না
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বাধীন আরাকান চাই!
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দেশের সার্বভৌমত্বের সংকটে- দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতেই হবে
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পৃথিবীর সবচাইতে কুখ্যাত কিছু নৌদস্যুর অপকীর্তি
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ফসলের একটি অংশ যায় রাজাকার ত্রিদিবের সন্তান দেবাশীষের ঘরে! -এদেশে উপজাতি চৌকিদারকে কেন ‘রাজা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে?
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উলামায়ে ছু’দের বদ আমলই কি এর জন্য দায়ী নয়?
২২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশে জিএম ফুড প্রচলনের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
জান্নাতী এবং জাহান্নামী ব্যক্তিদের কিছু আলামত
১৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঔ পনিবেশিক-ব্রাক্ষণ্যবাদী আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্র পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (১)
১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার অশ্লীলতাই হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিশ ধরায় বাংলাদেশ-ভারতের নিষেধাজ্ঞার সময়ে বড় পার্থক্য নিষেধাজ্ঞার নামে ভিনদেশী জেলেদের জামাই আদরে সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় আর দেশীয় জেলেদের জেলে পুরা হয় জেলেদের প্রতি এ নির্মম জুলুম আর কতকাল?
১১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আধুনিকতা নাম দিয়ে হারাম ‘ছবি’ তোলা থেকে বিরত থাকুন
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












