ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩)
, ১১ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৭ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ÒConfession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
২। ইসলাম ছিল এক সময় শাসন ও কর্তৃত্বের ধর্ম, আর মুসলমানরা ছিল সম্মানিত। এ সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের বলা এখন মুশকিল যে তারা এখন ক্রীতদাসের শামিল। তেমনি মুশকিল ইসলামের ইতিহাসকেও মিথ্যা প্রমাণ করা এবং মুসলমানদের এটা বলা যে, এক সময় তোমরা যে সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলে তার মূলে ছিল কিছু অনুকূল পরিবেশ। সেই সব দিন শেষ এবং আর কোন দিন ফিরে আসবে না।
৩। আমরা খুব আশংকা করছিলাম যে, অটোম্যান এবং ইরানীরা আমাদের চক্রান্ত বুঝে ফেলতে পারে এবং নস্যাৎ করে দিতে পারে। সত্য কথা বলতে গেলে এ দুটো দেশ যথেষ্ট পরিমাণ দূর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু আমরা তবু নিশ্চিত হতে পারিনি এ কারণে যে তাদের ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সম্পদ, অস্ত্র এবং ক্ষমতা।
৪। মুসলমান আলিমদের নিয়েও ছিল আমাদের চরম অস্বস্তি। ইস্তাম্বুল ও আল আজহারের আলিমরা এবং ইরাক ও দামেস্কের আলিমরা ছিল আমাদের উদ্দেশ্য সাধনের পাহাড় সমান বাঁধা। কারণ তারা ছিলেন এমনই সব ব্যক্তিত্ব যারা কখনই তাদের আদর্শের কাছে বিন্দুমাত্র আপোষ করেনি, কেননা তারা পৃথিবীর ক্ষণকালীন সুখ আর দুনিয়াবী সাজ-সজ্জা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাদের দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করেছিলেন কুরআনুল কারীম প্রতিশ্রুত বেহেশ্তের দিকে। মানুষ তাদেরই অনুসরণ করেছিল। এমনকি সুলতানও উনাদের ভয়ে ভীত ছিল। শিয়ারা যতটুকু শক্তভাবে তাদের আলিম ঘেষা ছিল সুন্নীরা ততটা শক্তভাবে আলিম ঘেষা ছিলো না। শিয়ারা কোন বই পড়তোনা তারা শুধু তাদের আলিমদের চিনত এবং সুলতানকে উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করতো না। সুন্নীরা বিপরীতপক্ষে বই পড়তো এবং আলিম ও সুলতানকে সম্মান করতো। ফলে আমরা একটার পর একটা সভার আয়োজন করে যাচ্ছিলাম। তথাপি যতবার আমরা চেষ্টা করছিলাম, দারুণ হতাশা নিয়ে লক্ষ করছিলাম যে আমাদের জন্য ছিল সব দরজা বন্ধ। গুপ্তচরদের থেকে যে সকল রিপোর্ট পেতাম তার সবই ছিল হতাশায় ভরা এবং আমাদের সম্মেলন ব্যর্থ হয়ে যায়। তথাপি আমরা আশা ছাড়িনি। কারণ আমরা হলাম এমনি ধরণের মানুষ যারা অভ্যাসে পরিণত করেছিলাম গভীর নিঃশ্বাস টানা ও ধৈর্য্যধারণ করা।
মন্ত্রীসহ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের যাজক এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা সেখানে ছিলাম ২০ জন। আমাদের সম্মেলন চলেছিল তিন ঘণ্টা ধরে এবং শেষ অধিবেশন কোন সফল সিদ্ধান্তে না পৌঁছেই শেষ হয়ে যায়। তথাপি একজন যাজক বলেছিল “দুঃখ করো না। মসিহ এবং তার অনুসারীরা কর্তৃত্ব অর্জন করেছিল তিনশ বছর যন্ত্রণা ভোগের পর। আশা করা যায়, অজানা জগত থেকে তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং অবিশ্বাসীদের (এখানে মুসলমানদের) তাদের কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করতে সৌভাগ্যদান করবেন, যদিও আরও তিনশত বছর পর তারা বিতাড়িত হয়। মজবুত ঈমান আর দীর্ঘ মেয়াদী ধৈর্য্য ধারনের মাধ্যমে আমাদের বাহুকে অবশ্যই অস্ত্রসজ্জিত করতে হবে। কর্তৃত্ব দখলের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচার মাধ্যমগুলো দখলে আনতে হবে। সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে অবশ্যই আমাদের খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার ঘটাতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্যটা (অটোমান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে ফেলা) অনুধাবন করা মঙ্গলজনক হবে, যদিও তা এক শতাব্দী পরে হয়। কেননা বাপের কাজ তো ছেলেদের জন্য। ”
আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল- যেখানে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড থেকে কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্মীয় লোকজন যোগদান করেছিল। আমি ছিলাম খুব সৌভাগ্যবান কারণ আমার এবং মন্ত্রীর মধ্যে সু-সম্পর্কের কারণে আমিও সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলনে মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনা এবং স্পেনে যেমন করা হয়েছিল তেমনিভাবে মুসলমানদের খ্রীষ্টধর্মে বিশ্বাস করানো বা খ্রিষ্টান বানানোর ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে যে সব আলোচনা হয় তার সবই আমার (হেমপার) “ইল্লা মালেকুতুল মসিহ” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি।
কিন্তু এটা খুব কষ্টসাধ্য যে, একটি গাছকে হঠাৎ উপড়িয়ে ফেলা যার শিকড় জমিনের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু আমাদের অবশ্যই এই কষ্টগুলোকে সহজভাবে নিতে হবে এবং এর থেকে পরিত্রানের উপায় বের করতে হবে। খ্রিষ্টানধর্ম এসেছে প্রচার লাভের জন্য। আমাদের প্রভু মসিহ্ও তারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পূর্ব ও পশ্চিমের বিরাজমান খারাপ অবস্থা হযরত মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাহায্য করেছিল। এখন সে রকম অবস্থা নেই। পূর্ব-পশ্চিমকে ঘিরে থাকা বিরক্তিকর জিনিসও (তার মতে ইসলাম) অপসারিত হয়েছে। আমরা আজ আনন্দের সাথে লক্ষ্য করছি যে, পরিস্থিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মন্ত্রনালয় এবং অন্যান্য খ্রিষ্টান সরকারের মহৎ (অসৎ) উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার ফলে মুসলমানগণ এখন পতনের মুখে, অপর দিকে খ্রিষ্টানরা উন্নতির পথে। এ সময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি সে সকল বিষয় যা হারিয়েছিলাম শতবর্ষ ধরে। গ্রেট বৃটেনের মত শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসলামকে নির্মূল করার মত এ মহতি (নিকৃষ্ট) প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












