ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১)
, ২৩ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১০ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “Confession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(সংশোধিত ও পূর্ণ প্রকাশিত)
প্রথম পাঠ
হেমপার বলে, আমাদের ব্রিটিশ রাজ্য অনেক বড়। সূর্য বৃটেনের সমুদ্রের উপর দিয়ে উদিত হয়, আবার এরই সমুদ্রের নীচে অস্ত যায়। তথাপি ইন্ডিয়া, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের মত উপনিবেশিক দেশগুলোতে আমাদের রাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এ সকল দেশসমূহে সামগ্রিকভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। যাই হোক, এ সকল জায়গার জন্য আমরা জোরদার এবং সফল কার্যক্রম আনতে যাচ্ছি। আমরা শীঘ্রই তাদের সবার উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করতে যাচ্ছি। দু’টো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ১। যে সকল জায়গা নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলো ধরে রাখা।
২। যে সকল জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেই সে সকল জায়গা অধিকারে আনা। এ দু’টো কর্তব্য সম্পাদনের জন্য, উপনিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রনালয় থেকে প্রত্যেক উপনিবেশের জন্যে একটি করে মিশন নিয়োগ করা হয়।
আমি উপনিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রনালয়ে যোগদান করা মাত্রই মন্ত্রী মহোদয় আমার উপর তার আস্থা প্রকাশ করে এবং আমাকে আমাদের পূর্ব ভারতের কোম্পানীর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দান করে। বাহ্যিকভাবে সেটা ছিল ব্যবসায়িক কোম্পানী। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিস্তৃত অংশ নিয়ন্ত্রণে আনার বিভিন্ন উপায় বের করা। আমাদের সরকার ভারতবর্ষের ব্যাপারে মোটেও বিচলিত ছিল না। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ভাষাভাষির এবং পরস্পর বিপরীত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মানুষ একত্রে বসবাস করে। চীনের ব্যাপারেও আমরা ভীত ছিলাম না। চীনে প্রাধান্য বিস্তারকারী ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং কনফিউসিয়ানিজম যার কোনটাই আমাদের জন্য কোন রকম আশংকার ছিল না। দু’টোই ছিল মৃত ধর্ম যা জীবনের জন্য কোন সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেনি এবং বড় জোর এ দু’টি আহবান জানানোর নমূনামাত্র, তার বেশী নয়। এসব কারণে এ দু’টো দেশে বসবাসরত মানুষগুলোর নাম মাত্র দেশ প্রেমের অনুভূতি ছিল। এ দু’টি দেশ আমাদের অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকারকে ভীত করেনি তথাপি যে সকল ঘটনা পরবর্তীতে ঘটতে পারে তা আমাদের ভাবতে হয়েছে। কাজেই এসব দেশে বিরাজমান মতভিন্নতা, অজ্ঞতা, দারিদ্র্য এমনকি রোগবালাই নিয়ে দ্বন্দ্ব বিরোধ অব্যাহত থাকুক সে লক্ষ্যে এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে থাকি। আমরা অনুকরণ করেছিলাম এদেশের প্রথা ও ঐতিহ্যকে এবং এভাবে আমাদের অভিসন্ধিগুলো গোপন রাখছিলাম।
তবে ইসলামিক দেশগুলোর জন্য আমরা মানসিকভাবে দূর্বলতা অনুভব করছিলাম। ইতিমধ্যে রুগ্ন মানুষ (অটোম্যান সাম্রাজ্য) এর সঙ্গে কিছু চুক্তি সম্পাদন করেছিলাম, যার সব কিছুতেই আমাদের সুবিধাজনক অবস্থান ছিল। উপনিবেশ মন্ত্রনালয়ের অভিজ্ঞ সদস্যরা ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে, এই রুগ্ন মানুষ (অটোম্যান সাম্রাজ্য) এক শতাব্দীর কম সময়েই শেষ হয়ে যাবে। উপরন্তু আমরা কিছু গোপন চুক্তি করেছিলাম ইরানী সরকারের সাথে এবং এই দু’টো দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলাম যাদের আমরা মেসন (গঅঝঙঘ) হিসেবে তৈরী করেছিলাম।
ঘুষ, অদক্ষ প্রশাসন, অসম্পূর্ণ শিক্ষা, দূর্নীতি, সুন্দরী মহিলায় আসক্তি এবং পরিশেষে কর্তব্যে অবহেলা এ দু’টো দেশের মেরুদ- ভেঙ্গে ফেলেছিল। এসব সত্ত্বেও আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম যে আমাদের কর্মকা- আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না। আমরা যে রকম আশা করছিলাম নীচে তার কারণগুলো উল্লেখ করা হলো-
১। মুসলিমরা দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি অত্যন্ত আত্মনিবেদিত। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক মুসলমানই খৃষ্টধর্মে আসক্ত পুরোহিত বা সন্নাসীর চেয়েও বেশী না হোক সমান অনুরাগী। জানা মতে, ধর্মযাজক এবং সন্ন্যাসীরা মারা যাবে তবু খৃষ্টধর্ম ত্যাগ করবে না। এরকম লোকের মধ্যে বিপদজনক হচ্ছে ইরানের শিয়ারা। যারা শিয়া নয় তাদেরকে শিয়ারা অবিশ্বাসী (কাফের) এবং মন্দ লোক হিসেবে গণ্য করে। শিয়াদের কাছে খ্রিষ্টানরা হচ্ছে ক্ষতিকর ময়লার মত। স্বাভাবিকভাবেই একজন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে কি করে এ ময়লা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়।
একবার এক শিয়াকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন তোমরা খ্রিষ্টানদের এ রকম নজরে দেখ? আমাকে উত্তর যা দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই- “ইসলাম উনার নবী ছিলেন (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) অত্যন্ত জ্ঞানী। তিনি খ্রিষ্টানদের একটা আধ্যাত্মিক নির্দেশনার মধ্যে রাখেন যাতে তারা আল্লাহ পাক উনার ধর্ম ইসলামে যোগ দিতে একটি সঠিক রাস্তা খুঁজে পায়। প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রেরও নীতি হচ্ছে একজন বিপদজনক ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক অনুশাসনে রাখা যাতে সে আনুগত্য স্বীকার করে। আমি যে নোংরামীর কথা বলছি তা বস্তুগত কিছু নয়, এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক অনুশাসন যা শুধু খ্রিষ্টানদের কাছে অদ্ভূত তা নয়, এতে সুন্নী এবং সব অবিশ্বাসীরা জড়িত। এমনকি আমাদের প্রাচীনকালের ইরানী মেগিয়ান পূর্বপুরুষেরাও শিয়াদের চোখে মন্দলোক। ”
তাকে বললাম, দেখুন সুন্নী এবং খ্রিষ্টানরা তো মহান আল্লাহ পাক, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং শেষ বিচার দিবসের উপরও বিশ্বাস করে; তাহলে তারা মন্দ হতে যাবে কেন? সে জবাবে বললো “তারা দু’ কারণে মন্দ। তারা আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। (আসলে শিয়া এবং খ্রিষ্টানরাই হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে। শিয়াদের বিশ্বাস, কথা, গলদ কাজকর্ম কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ মোয়াফেক নয় এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নীচের কিতাবগুলোর প্রত্যেকটিতে এর যথাযথ খ-ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ হযরত আহমদ ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত “আশ শাওয়াইক উল মুহরিকা’ হযরত শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিরচিত “তোহফা-ই-ইছনা আশারিয়া’ ইমাম-ই-রাব্বানি হযরত আহমদ ফারুকী রহমতুল্লাহি আলাইহির “তাঈদ-ই আহলে সুন্নত। ” হযরত আব্দুল আজিজ ফেরাহরেভী রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘নাহীয়া’ হযরত আব্দুল্লাহ সুয়েদি রহমতুল্লাহি আলাইহির ‘হোজাজ-ই-কাতিয়ে’ এবং হযরত মুহম্মদ শিরিস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখিত ‘মিলাল ওয়ান নিহাল’ গ্রন্থসমূহ পঠিতব্য। )
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












