ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪)
, ১৭ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “Confession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(সংশোধিত ও পূণ:প্রকাশিত)
তিনি আমাকে ‘মুহম্মদ আফেন্দি’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন এবং স্নেহ মমতায় সমাদর করতেন। আমি একজন মেহমান, ইস্তাম্বুলে এসেছি কাজ করতে এবং খলিফার ছায়াতলে বসবাস করতে, এমনি বিবেচনায় আহমদ আফেন্দী আমাকে দেখতেন। সত্যি বলতে কি এ ছলচাতুরির মধ্যেই আমি ইস্তাম্বুলে অবস্থান করতে লাগলাম।
একদিন আমি আহমদ আফেন্দিকে বললাম ‘আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, আমার কোন ভাই-বোনও নেই এবং পৈত্রিক সূত্রে কোন জমি-জমাও পাইনি। আমি এসেছি পবিত্র ইসলাম উনার এ প্রাণকেন্দ্রে কাজ করে বেঁচে থাকার জন্য এবং পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ শেখার জন্যে অর্থাৎ ইহকাল এবং পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। আমার এ কথায় তিনি অত্যন্ত প্রফুল্ল হলেন এবং বললেন, “তিনটি কারণে তুমি শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। (তিনি যা বলেছিলেন তা হুবহু বর্ণনা করছি। )
এক. তুমি একজন মুসলমান এবং সব মুসলমান ভাই ভাই।
দুই. তুমি একজন মেহমান। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মেহমানদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শন করো। ”
তিন. তুমি কাজ করতে চাও; হাদীছ শরীফে আছে, যে কাজ করে, সে আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রিয়।
তার কথাগুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করলো। আমি মনে মনে বললাম, খ্রিষ্টান ধর্মেও কি এমন উজ্জ্বল সত্যের সন্ধান আছে? লজ্জার বিষয় সেখানে তা নেই। ” যা আমাকে অবাক করে তা হচ্ছে, ইসলাম উনার মত একটি মহান দ্বীন, এমন কিছু আত্মঅহংকারী লোকের হাতে পরে অবহেলিত এবং অধঃপতিত হচ্ছে, যারা জীবন সম্পর্কে অসচেতন।
আমি আহমদ আফেন্দীকে বললাম যে, আমি কুরআনুল কারীম শিখতে চাই। তিনিও আমাকে খুশি মনে শিখাবেন বলে জানালেন এবং সে অনুযায়ী সূরা ফাতিহা শিখাতে শুরু করলেন। আমরা যা পড়তাম, তিনি তার ব্যাখ্যা ভাল করে বুঝিয়ে দিতেন। কিছু শব্দ উচ্চারণে আমার যথেষ্ট সমস্যা হলেও দু’ বছর সময়ের মধ্যে আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়ে ফেললাম। প্রতিটি ছবকের পূর্বে তিনি অজু করতেন এবং আমাকেও অজু করতে বলতেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে বসে শিখাতে শুরু করতেন। অজু বলতে মুসলমানরা যা বোঝায় তা হচ্ছে নীচে বর্ণিত একের পর এক ধোয়ার তালিকা- (১) সমস্ত মুখ ধোয়া, (২) ডান হাত আঙ্গুল থেকে কনুইসহ ধোয়া, (৩) বাম হাত আঙ্গুল থেকে কনুইসহ ধোয়া, (৪) মাথা, কানের পেছন, ঘাড়ের পেছন উভয় হাত দিয়ে মাসেহ করা, (৫) উভয় পা ধোয়া।
মিসওয়াক ব্যবহার করাটা ছিল আমার জন্য এক বিড়ম্বনা। ‘মিসওয়াক’ হচ্ছে একটি ছোট্ট গাছের ডালা যা দিয়ে মুসলমানরা তাদের মুখ এবং দাঁত পরিস্কার করে। আমি ভেবেছিলাম এ গাছের ডালটি দাঁত ও মুখের জন্য ক্ষতিকর। মাঝে মাঝে ডালটি দিয়ে মুখে ব্যথা লাগতো এবং রক্ত ঝরতো, তথাপি তা আমাকে ব্যবহার করতে হত। মুসলমানদের মতে মিসওয়াক ব্যবহার হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত এবং এর ব্যবহার খুবই উপকারী। বাস্তবেই আমার দাঁতের রক্তপড়া বন্ধ হয়ে গেল এবং আমার মুখে যে দুর্গন্ধ ছিল তাও দূর হয়ে গেল। যদিও অধিকাংশ ব্রিটিশদের মুখেই এ দুর্গন্ধ থাকে।
ইস্তাম্বুলে থাকাকালে মসজিদের সেবায় নিয়োজিত এক খাদিমের কাছ থেকে আমি একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলাম। সে খাদিমের নাম ছিল ‘মারওয়ান আফেন্দি’। মারওয়ান ছিল একজন ছাহাবীর নাম। মসজিদের খাদিম ভদ্রলোক ছিল নার্ভাস প্রকৃতির তিনি তার নিজের নামের জন্য গর্ববোধ করতেন এবং বলতেন “ভবিষ্যতে আমার ছেলে হলে তার নাম রাখবো মারওয়ান, কেননা মারওয়ান ইসলাম উনার একজন বীর যোদ্ধা। ”
মারওয়ান রাতের খাবার তৈরী করতো। শুক্রবার মুসলমানদের ছুটির দিন বলে আমি কাজে যেতাম না। সাপ্তাহিক বেতন ভিত্তিতে, অন্যান্য দিনগুলো আমি খালিদ নামের একজন কাঠ মিস্ত্রীর জন্য কাজ করতাম।
যেহেতু আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খ-কালীন কাজ করতাম, সে অন্যান্য কর্মচারীদের বেতনের অর্ধেক বেতন আমাকে দিতো। কাঠ মিস্ত্রী খালিদ তার অবসর সময় ব্যয় করতো খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গুণাবলী বর্ণনা করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ। তিনি অনেক যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। তারপরেও ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম কর্তৃক উনার পদচ্যুতির ঘটনা এই কাঠ মিস্ত্রীর মনে দারুন আঘাত করেছে।
(খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় আবূ উবায়দা বিন র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এবং তিনিও অব্যাহত বিজয় লাভ করেন। তার মানে বিজয় অর্জিত হয়েছিল আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায়, খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্যে নয়। খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সেনাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে খলিফা ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। )
আমি যখন আহমেদ আফেন্দীর কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম তার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো এবং তিনি বললেন হে বৎস! আল্লাহ পাক তোমার সহায় হোন। তুমি আবার ইস্তাম্বুলে এসে যদি দেখ আমি আর নেই তবে আমাকে স্মরণ করে আমার আত্মার জন্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করো। শেষ বিচারের দিনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে আবার আমাদের দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমার মন এতটাই বেদনাক্লিষ্ট হয়ে পড়ে যে আমার দু’চোখ বেয়েও অশ্রু গড়িয়ে পরে। তারপরেও আমার কর্তব্য বোধ স্বাভাবিকভাবেই ছিল অধিকতর শক্তিশালী।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পূর্ব গণনাকৃত বর্ষপঞ্জী দিয়ে মাস শুরু করা শরীয়তসম্মত নয়
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৬)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশি বেশি মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশি বেশি পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছহিবে নিসাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী দেয়া ওয়াজিব (১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (২)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)