ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৫)
, ২১শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ০৮ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(সংশোধিত ও পূণ:প্রকাশিত)
তৃতীয় পাঠ
আমার বন্ধুরা, আমার আগেই লন্ডনে ফিরে এসে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশ লাভ করে। আমিও ফিরে আসার পর নতুন নির্দেশ পাই। তবে দুঃখজনকভাবে আমরা মাত্র ছয়জন ফিরে আসি।
সচিব বললেন, বাকী চারজনের একজন মুসলমান হয়ে মিশরেই রয়ে গেছে। তথাপি সচিব সন্তুষ্ট ছিল কারণ সে মিশরে রয়ে গেলেও বিশ্বাসঘাতকতা করে কোন গোপন তথ্য ফাঁস করেনি। দ্বিতীয়জন রাশিয়া চলে যায় এবং সেখানে থেকে যায়। জন্মগতভাবে সে ছিল রাশিয়ান। সচিব তার জন্য খুব দুঃখ পেল। সে রাশিয়া গিয়ে আর ফিরে আসেনি বলে দুঃখ পায়নি। দুঃখ পেয়েছিল এ কারণে যে, সে রাশিয়ার হয়ে উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির চালিয়েছে এবং মিশন শেষে সে দেশে ফিরে গেছে। তৃতীয়জন, সচিব যা বললেন, বাগদাদের পাশ্ববর্তী শহর ‘ইমরায়’ প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। চতুর্থজন, ইয়েমেনের সানায় অবস্থানকালীন সময় পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং বছরখানেক সময় ধরে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠায়; পরবর্তীতে তার রিপোর্ট পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হাজার চেষ্টা করেও তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। চারজনের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছিল মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। কেননা, লোক সংখ্যায় আমরা কম হলেও দায়িত্ব পালনের দিক থেকে আমরা ছিলাম একটা জাতি। সে জন্যে প্রত্যেকের উপর আমাদের খুব হিসেব নিকেশ করে কাজ করতে হয়।
রিপোর্টের কিছু অংশ বিশ্লেষণ করার পর, আমাদের চারজনের রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য সচিব এক সভা আহবান করে। আমার বন্ধুরা যখন তাদের রিপোর্ট দিল, তখন আমিও আমার রিপোর্ট পেশ করলাম। আমার রিপোর্ট থেকে তারা কিছু কিছু নোট নিলো। মন্ত্রী, সচিব ও অন্যান্য যারা সভায় যোগ দিয়েছিল সবাই আমার কাজের প্রশংসা করলো, কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে আমি হলাম তৃতীয়। আমার বন্ধুদের মধ্যে জর্জ বেলকাউড হয়েছিল প্রথম এবং হেনরি ফেনস হয়েছিল দ্বিতীয়।
সন্দেহ নেই যে, তুর্কী ও আরবী ভাষা, কুরআন শরীফ ও শরীয়ত শিখে আমি বড় সফলতা অর্জন করি কিন্তু অটোম্যান সাম্রাজ্যের দূর্বল দিকগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়কে কোন রিপোর্ট দিতে পারিনি। দু’ঘণ্টা ধরে সম্মেলন চলার পর সচিব আমার ব্যার্থতার কারণ জানতে চাইলে, আমি বললাম, “আমার প্রধান কাজ ছিল ভাষা, কুরআন শরীফ এবং শরীয়ত শিক্ষা করা। আমি অতিরিক্ত কিছুর জন্য কোন সময় ব্যয় করতে পারিনি। কিন্তু আপনি যদি আমার উপর আস্থা রাখেন তবে এবার আপনাকে খুশি করতে পারবো। ”
সচিব বললেন যে, তুমিও সফলতা অর্জন করেছো তবে সে আশা করেছিলো আমি প্রথম হবো। সে বলতে লাগলো, শোন হেমপার, পরবর্তী মিশনে তোমাকে দু’টো কাজ করতে হবে।
(১) মুসলিমদের দূর্বল জায়গাগুলো খুজে বের করতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা তাদের দেহে প্রবেশ করে তাদের শরীরের জোড়াগুলো আলাদা করে ফেলবো। নিশ্চয়ই, শত্রুকে আঘাত করার এটাই পথ।
(২) যেই মুহূর্তে এসব দূর্বল অবস্থানগুলো শনাক্ত করতে পারবে এবং যেভাবে বললাম সেভাবে কাজ করতে পারবে (অন্যভাবে বলতে গেলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করে তাদের পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারবে), তখন তুমি হবে সবচেয়ে সফল এজেন্ট এবং মন্ত্রণালয় থেকে মেডেল অর্জন করবে।
আমি ছয় মাস লন্ডনে অবস্থান করেছিলাম এবং সে সময়ে আমার চাচাতো বোন ‘মারিয়া ইসভয়’কে বিয়ে করি। তখন আমার বয়স ছিল ২২ এবং মারিয়ার ২৩ বছর। মারিয়া ইসভয় ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। তবে তার বুদ্ধি বিবেচনা গড়পড়তা এবং সাধারণ সংস্কৃতিমনা মহিলা। তার সঙ্গে যতটুকু সময় কাটিয়েছি তা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখময় এবং মধুর সময়।
আমার স্ত্রী যখন গর্ভবতী এবং আমরা একজন নতুন অতিথির অপেক্ষায় তখনই বার্তা পেলাম যে আমাকে ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। আমাদের সন্তান আসার সময়ে এ রকম বার্তা পেয়ে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। তবে ছেলের বাবা কিংবা কারো স্বামী হবার যে আবেগ আমার ছিল তার চেয়েও আমার কাছে আমার নিজের দেশ এবং বিশেষত আমার সহকর্মীদের মধ্যে প্রথম হবার গৌরবের বিষয়টি আমার কাছে বেশী গুরুত্ব পায়। ফলে বিনা দ্বিধায় আমি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করি। আমার স্ত্রী চেয়েছিল সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত যেন আমি মিশন স্থগিত রাখি। তথাপি আমি তার কথাকে উপেক্ষা করি।
আমরা যখন একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম, দু’জনেই ফুপিয়ে কাঁদছিলাম। আমার স্ত্রী বললো, আমাকে চিঠি লেখা বন্ধ করো না। আমি তোমাকে আমাদের নতুন সংসার সম্পর্কে লিখবো যা সোনার মত দামী। তার সে সকল কথা আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে। আমি প্রায় বাতিল করে দিতে চাচ্ছিলাম আমার সফর। তবু আমি আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি এবং বিদায় জানিয়ে চুড়ান্ত নির্দেশ নিতে মন্ত্রনালয়ের দিকে যাত্রা করি। ছয় মাস পরে আমি ইরাকের বসরা নগরীতে পৌঁছি। এই নগরীর অধিবাসীদের আংশিক সুন্নী এবং আংশিক শিয়া। বসরায় ছিল আরবী, পারসী এবং স্বল্প সংখ্যক খ্রিষ্টান গোত্রের বসবাস। জীবনে আমি তখন পারসিয়ান লোকের দেখা পাই।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












