ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৭)
, ০১ লা শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
একদিন উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ে, শিয়া-সুন্নীর মত পার্থক্যের ওপর আলোকপাত করলাম “মুসলমানরা যদি জীবন সম্পর্কে খানিকটাও উপলদ্ধি করতো তাহলে নিজেদের মধ্যকার এ বিরোধ মীমাংসা করে এক হয়ে যেত।” আমার কথায় বাধা দিয়ে একজন বললো “তোমার কাজই হচ্ছে এই বিরোধকে উসকে দেয়া, মুসলমানদের কিভাবে একত্রিত করা যায় সে নিয়ে চিন্তা করা নয়।”
ইরাকের উদ্দেশ্যে আমার সফর শুরু করার পূর্বে সচিব বললেন, হেমপার, তোমার জানা উচিত যে, ঈশ্বর যখন হাবিল-কাবিলকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন থেকেই মানুষের মধ্যে স্বভাবসিদ্ধ মতানৈক্যগুলো আছে। এইসব মতবিরোধ যীশু খ্রীষ্ট্রের আগমন পর্যন্ত চলবে। কাজেই, জাতিতে-জাতিতে, ধর্মে-বর্ণে, গোত্রে এমনকি দেশে-দেশে এই মতভেদ রেষারেষি চলবেই। এবারের মত তোমার দায়িত্ব হচ্ছে, এই মতানৈক্যগুলো খুজে বের করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা। মুসলমানদের মধ্যেকার এই বিরোধ যত বেশী প্রজ্বলিত করতে সফলকাম হবে ইংল্যান্ডের প্রতি তোমার দায়িত্ব তত বেশী পালন করতে তুমি সফলকাম হবে। আমরা ইংরেজ জাতির কাজই হচ্ছে উপনিবেশ অঞ্চলগুলোতে অঘটন ঘটিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করা যাতে আমরা কল্যাণকর এবং বিলাসী জীবনযাপন করতে পারি। একমাত্র এরকম উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমেই আমরা পারি অটোম্যান সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করতে।
নইলে, অল্পসংখ্যক লোকের পক্ষে কিভাবে একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব? তোমার ধীশক্তি কাজে লাগিয়ে ফাটলগুলোর মুখ খুঁজে বের করো এবং যখনই তা খুঁজে পাবে তখনই সেখানে ঢুকে পড়ো। তোমার জানা উচিত অটোম্যান ও ইরানীয়ান শাসকরা তাদের অস্তিত্বের শেষ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। সেজন্য তোমার প্রথম কাজ হবে প্রশাসনের বিরুদ্ধে লোকদের ক্ষেপিয়ে তোলা। ইতিহাসে দেখা যায় সবধরনের বিদ্রোহের মূল উপাদান হচ্ছে গণ অসন্তোষ। তেমনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভাঙ্গন ধরানো গেলে তাদের পারস্পারিক সহমর্মিতা লোপ পাবে, তাদের সকল শক্তি নষ্ট হবে এবং আমরা তখন সহজেই তাদের শেষ করে দিতে পারবো।
সচিবের দিক-নির্দেশনা নিয়ে আমি ইরাকের বসরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সেখানে পৌঁছে একটি মসজিদে আশ্রয় নিলাম। মসজিদের ইমামের নাম ছিল শেখ ওমর তাঈ। তিনি সুন্নী সম্প্রদায়ের এবং আরব বংশোদ্ভুত। তার সঙ্গে দেখা হবার পর থেকেই গল্প জুড়ে দিতে চাইলাম। তথাপি প্রথম থেকেই তিনি আমাকে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগলেন এবং প্রশ্নের বানে জর্জরিত করলেন।
গল্পের মাঝেই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করি এই বলে যে, “আমি তুরস্কের ঈগদীর এলাকা থেকে এসেছি। আমি ইস্তাম্বুলের আহমেদ ইফেন্দীর একজন শিষ্য। সেখানে খালিদ নামের একজন মিস্ত্রীর নিকট কাজ করতাম। তুরস্কে থাকা অবস্থায় যা জেনেছিলাম তার থেকে কিছু তথ্য তাকে দিলাম। তুর্কী ভাষাতেও কিছু আলাপ আলোচনা করি। ইমাম একজনকে চোখের ইশারা করলেন আমি সঠিক তুর্কী ভাষা বলি কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। সে ইতিবাচক সম্মতি জানালো। ইমামকে সন্তুষ্ট করতে পেরে আমি খুব খুশি ছিলাম।
কিন্তু কিছুদিন পরই টের পেলাম তা ছিল মারাত্মক ভুল। চরম হতাশা নিয়ে উপলব্ধি করলাম ইমাম আমাকে তুর্কী গুপ্তচর হিসেবে ধরে নিয়েছেন। পরে জানতে পারি, অটোম্যান সুলতানের নিযুক্ত গভর্নর এবং ইমাম সাহেবের মধ্যে কিছু বিষয়ে রয়েছে মত বিরোধ এবং বৈরী মনোভাব।
শায়েখ উমর তাঈর মসজিদ ছাড়তে বাধ্য হলাম এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্যে যে সরাইখানা আছে তাতে একটা রুম ভাড়া করে উঠে গেলাম। সেই সরাইখানার মালিক ছিল একটু গবেট প্রকৃতির। নাম মুরশিদ ইফেন্দী। প্রতিদিন সকালে আযানের সাথে সাথে আমার দরজায় জোরে জোরে আঘাত করতো এবং ঘুম থেকে উঠাবার জন্যে বিরক্ত করতো। আমাকে তার কথামত চলতে হত। সুতরাং প্রতিদিন সকালে উঠে আমাকে ফযরের নামায পড়তে হত। তারপর সে বলতো, তোমাকে ফযরের নামাযের পর কুরআনুল কারীম পড়তে হবে। যখন আমি তাকে বললাম এটাতো ফরয নয় তবুও তুমি কেন আমাকে এতটা পীড়াপীড়ি করছো? সে বললো, এ সময় ঘুমিয়ে থাকলে সরাইখানা এবং এর বাসিন্দা সবার জন্যে দারিদ্রতা এবং দূর্ভোগ চলে আসবে। তার এই আদেশও আমাকে পালন করতে হত। নইলে সরাইখানা থেকে সে আমাকে তাড়িয়ে দেবে। কাজেই সকালে ফযরের নামায পড়ে এক ঘন্টা কুরআনুল কারীম পাঠ করতাম।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পূর্ব গণনাকৃত বর্ষপঞ্জী দিয়ে মাস শুরু করা শরীয়তসম্মত নয়
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৬)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশি বেশি মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশি বেশি পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছহিবে নিসাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী দেয়া ওয়াজিব (১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (২)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)