সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
(মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ বালিকা মাদরাসা)
, ১৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত হারিছ ইবনে সুহাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাদেরকে ২টি কথা বলেছেন। একটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে, আরেকটি উনার নিজের পক্ষ থেকে। তিনি উনার নিজের পক্ষ থেকে বললেন, মু’মিন ব্যক্তি তার গুনাহকে এমনভাবে দেখে যে, একজন ব্যক্তি পাহাড়ের নিচে বসা আর সে আশংকা করছে পাহাড় ভেঙ্গে তার উপর পড়বে। আর যারা বদকার তারা গুনাহকে এমনভাবে দেখে যে, তার নাকের উপর একটা মাছি বসল এবং সে তা হাত দিয়ে তাড়িয়ে দিল। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন বান্দার তওবা করাতে এত অধিক খুশি হন, যেমন- কোন এক ব্যক্তি এক ধ্বংসকারী মরুভূমিতে পৌঁছল আর তার সাথে রয়েছে বাহন তার উপর খাদ্য এবং পানীয়। সে বাহনটাকে পাশে রেখে জমিনে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল। আর যখন সে জাগ্রত হল, সে দেখল তার বাহন তার কাছ থেকে চলে গিয়েছে, সে তালাশ করল এমনকি তার উপর তাপ ও পিপাসা অধিক হতে লাগল। তখন সে ভাবল আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই, কেননা নির্ঘাত আমার মৃত্যু। সে তার বাহুর উপর মাথা রাখল যেন সে মারা যায়। হঠাৎ সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখল তার নিকটেই বাহন এবং তার উপরেই খাদ্য-পানীয় সব রয়েছে। তখন কেমন খুশি লাগবে? মহান আল্লাহ পাক তিনি (বান্দার তওবাতে) এর চেয়েও বেশী খুশি হন। (মুসলিম শরীফ, বুখারী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার তওবাতে শুধু যে খুশি হন তাই নয় বরং তিনি তার পূর্বের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে সম্মানিত জান্নাত দান করবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَااَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْا اِلىَ اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا عَسٰى رَبُّكُمْ اَنْ يُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّاٰتِكُمْ وَ يُدْخِلْكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِىْ اللهُ النَّبِىَّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَه نُوْرُهُمْ يَسْعٰى بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَ بِاَيْمَانِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْلَنَا اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ . (سورة التحريم -٨ )
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তওবা কর খালেছ তওবা। অবশ্যই তোমাদের রব মহান রব্বুল আলামীন তোমাদের থেকে তোমাদের গুনাহ মোচন করবেন বা মিটিয়ে (ক্ষমা) দিবেন। এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। সেদিন মহান আল্লাহ পাক অপমানিত বা লজ্জিত করবেন না অর্থাৎ সম্মানিত করবেন। নবী আলাইহিমুস সালাম এবং মু’মিনগণ উনাদের সাথে উনাদের নূর উনাদের সামনে এবং ডানে ছুটাছুটি করবে। উনারা বলবেন, আয় আমাদের রব! আমাদের জন্য আমাদের নূর পূর্ণ করে দিন। এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
কিন্তু আফসুসের বিষয় হল- মানুষ গুনাহ করার পরও তওবা করে না। আর তাদের কৃতকর্মের কারণেই তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হয়। অথচ মহান আল্লাহ তিনি কোন বান্দাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে চান না।
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা কোন এক জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম। জিহাদের ময়দানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটা কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, এটা কোন কওম? তখন উনারা বললেন, আমরা মুসলমান কওম। উনাদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন, তিনি হাড়ির নিচে আগুন ধরালেন। উনার পাশে একজন সন্তান ছিলেন, যখন আগুনের ফুলকি উপরে উঠল তখন মা তার সন্তানকে দূরে সরিয়ে দিলেন, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলেন অতঃপর বললেন, আপনি কি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, মহান আল্লাহ পাক তিনি কি রহমানুর রহীম অর্থাৎ সর্বাধিক দয়ালু নন? তিনি (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই (মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমানুর রহীম)। অতঃপর (সেই মহিলা) বললেন, একজন মা তার সন্তানের প্রতি যতটুকু দয়া করে তার চেয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দার প্রতি অধিক দয়ালু নন? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই। সেই মহিলা বললেন, একটা মা তো তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারবে না। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারক) ঝুকালেন এবং কাঁদলেন। তারপর সেই মহিলা ছাহাবী উনার দিকে মাথা মুবারক তুলে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাদের মধ্যে যে মহান আল্লাহ পাক উনার অবাধ্য হয় এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে অস্বীকার করে সে ব্যতিত আর কাউকে আযাব দেন না। (সুবহানাল্লাহ)।
একজন মা যদি তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে না পারে তাহলে যিনি রহমানুর -রহীম মহান আল্লাহ পাক তিনি কী করে বান্দাকে আযাব দিতে পারেন? কখনই দেন না। কিন্তু বান্দা গুনাহ করে তওবা-ইস্তেগফার না করার কারণে তাকে জাহান্নামের আগুন ভোগ করতে হয়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












