মহিলাদের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ
, ০৯ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ৩০ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ১৭ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
মহিলাদের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আহাল বা স্বামীর যাবতীয় জিনিস যা তার অনুপস্থিতে স্ত্রীর কাছে আমানত হিসেবে রক্ষিত থাকে, তার হিফাযত করা। অর্থাৎ স্বামীর বংশ বা সন্তান, চরিত্র, ইজ্জত-আব্রু, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা ইত্যাদি যাবতীয় রক্ষিত বিষয়বস্তুর হিফাযত করা স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর পবিত্র দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সুতরাং নেককার আহলিয়াগণ (স্ত্রীগণ) উনাদের স্বামীদের অনুগত হয়ে থাকে এবং তাদের অবর্তমানে মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহে তার আহাল (স্বামীর) যাবতীয় অধিকার সংরক্ষণকারিনী হয়ে থাকে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ-পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩৪)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, একজন নেককার নারী কখনও স্বামীর অবাধ্য হতে পারেন না।
২. আহাল বা স্বামীর আনুগত্য করা:
আহলিয়া বা স্ত্রীর দ্বিতীয় দায়িত্ব, কর্তব্য হচ্ছে আহালের আনুগত্য করা। অর্থাৎ স্বামীর কথামত চলা এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে তার অনুপস্থিতে কোন কাজ না করা। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “যারা নেক, সৎ ও চরিত্রসম্পন্না আহলিয়া বা স্ত্রী, উনারা স্বামীর অনুগত হয়ে থাকে।”
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তাদের উপর তোমাদের (স্বামী) এই অধিকার রয়েছে যে, উনারা (স্ত্রী) এমন কোন ব্যক্তিকে তোমাদের ঘরে আসতে দেবে না, যাকে তোমরা আদৌ পছন্দ কর না।”
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে মহিলারা মহান আল্লাহ পাক এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে উনাদের জন্য এটা জায়েয (বৈধ) নয় যে, তারা স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হবে।” (তিবরানী এবং বায়হাকী সুনানে হযরত মু’আয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে বর্ণিত)।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র বলা হয়েছে, “আহাল বা স্বামীর উপস্থিতিতে আহলিয়া বা স্ত্রী তার অনুমতি ব্যতিরেকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা ছাড়া কোন নফল রোযা রাখবেনা।”
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “ আহাল বা স্বামীর সন্তুষ্টিতে আহলিয়া বা স্ত্রীর বেহেস্ত।” তবে আহাল বা স্বামী যদি মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানীমূলক কোন কাজে আদেশ দেয় তাহলে আহলিয়া বা স্ত্রীর জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, আহালকে বুঝানো অন্যথায় তার সেই আদেশ অমান্য করা। অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী কাজে আদেশ দিলে সেই আদেশ মানা যাবে না। অনুসরণ করা যাবেনা।
৩. ঘরের ভেতরে অবস্থান করা:
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে মহিলাদেরকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে এবং ঘরের ভেতরের সমস্ত দায়-দায়িত্ব মহিলাদের উপর অর্পন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “আহলিয়া বা স্ত্রীদের কর্তব্য হচ্ছে, ঘরে অবস্থান করা এবং পারিবারিক জিন্দেগীর আনজাম দেয়া।”
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আপনারা (মহিলা) আপনাদের ঘরের ভেতর অবস্থান করুন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৩)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহিলাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিওনা (অর্থাৎ বাইরের জগতের কাজ করতে না পাঠানো) এবং তারা নিজেরাও যেন ঘর থেকে বের না হয়।”
মহিলারা যে ঘরের ভেতর অবস্থান করবে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে। বলা হয়েছে, “মহিলারা পর্দার আড়ালে থাকবে, তারা ঘর থেকে বের হলেই শয়তান তাদেরকে অনুসরণ করে।” (তিরমিযী শরীফ)
অর্থাৎ মহিলারা ঘর থেকে বের হলেই শয়তান তাদের মাধ্যমে একটা অঘটন ঘটাবার জোর প্রচেষ্টা চালায়।
৪. সন্তান লালন-পালন করা:
সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা করা এবং তাদেরকে সম্মাানিত দ্বীনি ইলিম, আদর্শ জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া একজন মহিলাদের দ্বীনি দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “মায়েরা স্বীয় সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করাবে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩৩)
অন্যত্র বলা হয়েছে, “তোমরা সন্তানের যথাযোগ্য আহার্য ও পরিধেয় দাও এবং তাদেরকে সৎ উপদেশ ও দ্বীনি ইলিম (আদর্শ জ্ঞান-বিজ্ঞান) শিক্ষা দাও।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ)
উল্লেখ্য যে, কোন সন্তানের একজন আদর্শ শিক্ষক একমাত্র তার মা’ই হতে পারেন। মা হচ্ছেন সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষিকা। উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা থেকে পরিষ্কার বুঝা গেল যে, নারী-পুরুষ পরস্পর মর্যাদা সহকারে সমাজে বসবাস করবে। তবে নারীরা ঘরের ভেতরের যাবতীয় কাজ-কর্ম সমাধা করবে আর পুরুষরা ঘরের বাইরের যাবতীয় কাজ-কর্মের দায়িত্ব পালন করবে এবং পরিবারের জন্যে কামাই রোজগার করবে। অন্যভাবে বলা যায়, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নারী-পুরুষের সব ধরণের দায়-দায়িত্ব বা কাজ-কর্মকে দু’ভাগে ভাগ করে আলাদাভাবে এক ভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন পুরুষকে এবং অন্য ভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন মহিলাকে যা স্বভাবগত ও প্রকৃতিগতভাবেও সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ নারী-পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
আলোচনায় আরও প্রমাণিত হলো যে, পরিবারের সমস্ত ব্যয়ভার কেবলমাত্র পুরুষরাই বহন করবে, আর নারীরা ঘরের ভেতর অবস্থান করে পুরুষের (স্বামীর) অবর্তমানে তার যাবতীয় সহায় সম্পদের রক্ষনাবেক্ষণ করবে।
তাহলে সমাজের সব কর্মকা-ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অংশগ্রহণ করবে কিভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে? তাছাড়া পরিবারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহনে দায়িত্ব যদি একমাত্র পুরুষদের উপরই হয়ে থাকে, তবে ঘরের বাইরের দায়িত্ব যা শুধুমাত্র পুরুষদের তা অনর্থক নারী সমাজের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার পেছনে কি রহস্য থাকতে পারে?
এর পেছনে এক শ্রেণী নারীর উগ্র মন-মানসিকতা এবং সাধারণ নারীদের অজ্ঞতা, অধিকার সম্বন্ধে অসচেতনতা ও হীনমন্যতা অনেকাংশে দায়ী। এর পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তও অবশ্যই রয়েছে। কারণ ক্রুসেডের যুদ্ধে সুলতান হযরত সালাউদ্দিন আউয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে পৃথিবীর সমস্ত কাফেররা পরাজিত হওয়ার পর তারা বুঝতে পেরেছিল যে, শক্তি দিয়ে কখনও মুসলমানদেরকে পরাস্ত করা যাবে না। পরাজিত করতে হলে মুসলমানদের চরিত্র এবং মুসলমানিত্বকে নষ্ট করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মুসলিম নারী সমাজকে ঘর থেকে বের করতে পারলেই তা খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে। কারণ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “যখন কোন নারী এবং পুরুষ গোপনে কোথাও মিলিত হয়, তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় ইবলিস শয়তান।” আর শয়তান চায় উভয়ের চরিত্রকে নষ্ট করে দিতে। নাঊযুবিল্লাহ!
-আহমদ মারদ্বিয়া
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












