মহিলাদের নিয়ে ছফর করার শরয়ী ফায়সালা কি?
, ০৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফের” ইফকের ঘটনার পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে, “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ছফরের ইচ্ছা করতেন তখন তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মাঝে লটারি করতেন। এতে যাঁর নাম মুবারক আসতো উনাকেই তিনি সাথে নিয়ে ছফরে বের হতেন। এমনি এক জিহাদে তিনি আমাদের মাঝে লটারি করলেন এতে আমার নাম মুবারক উঠলো। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমিই ছফরে গেলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিলো। এ কারণে আমাকে হাওদাসহ ছাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হতো। এরূপভাবে আমরা চলতে লাগলাম। অবশেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন এ জিহাদ থেকে অবসর হলেন তখন তিনি বাড়ির দিকে ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। ”
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আহলিয়া বা মহিলাদেরকে নিয়ে ছফর করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। আরো প্রমাণিত হয় যে, আহলিয়া বা মহিলাদেরকে নিয়ে রাতের বেলা ছফর করাই খাছ সুন্নত ও পর্দার ক্ষেত্রে বিশেষ ফায়দাজনক।
“বুখারী শরীফের” কিতাবুল হজ্জ বাবু তাওয়াফিন নিসা মার্য়া রিজাল অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, “(হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) হযরত আমর ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন হযরত আবূ আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছান হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর দেন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি। (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) যখন হযরত ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি মহিলাদেরকে পুরুষদের সাথে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেন, তখন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আপনি কি করে নিষেধ করছেন? অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযওয়াজে মুতহ্হারাত অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা পুরুষ ছাহাবীগণের সাথে তাওয়াফ করেছেন। আমি (ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনাকে (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে) প্রশ্ন করলাম, তা কি পর্দার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পরে, না পূর্বে? তিনি বললেন, হাঁ, আমার জীবনের কসম, আমি পর্দার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল বা অবতীর্ণ হওয়ার পরের কথাই বলছি। আমি জানতে চাইলাম, পুরুষগণ মহিলাগণের সাথে মিশে কিভাবে তাওয়াফ করতেন? (উত্তরে বললেন) বরং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম তিনি পুরুষগণের পাশ কাটিয়ে তাওয়াফ করতেন। উনাদের মাঝে মিশে যেতেন না। একদা জনৈকা মহিলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, চলুন, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! তাওয়াফ করে আসি। তিনি জবাব দিলেন, “তোমার মন চাইলে তুমি যাও” নিজে যেতে অস্বীকার করলেন। উনারা রাতের বেলা পর্দা করে বের হয়ে (সম্পূর্ণ না মিশে) পুরুষগণের পাশাপাশি থেকে তাওয়াফ করতেন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বাইতুল্লাহ শরীফের অভ্যন্তরেও প্রবেশ করতে চাইলে সকল পুরুষ বের করে না দেয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন।
হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে গেলাম। তিনি তখন ‘ছবীর’ পর্বতে অবস্থান করছিলেন। ...” (ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্কিরমানী, তাইসীরুল ক্বারী)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা যে বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয়েছে তা হলো-
১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত হযরত আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে নিয়ে ছফর করেছেন।
২. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছফরে পুরুষ ছাহাবীগণ থাকতেন।
৩. হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদের সাথে মহিলা ছাহাবীও ছিলেন।
তবে উনারা সবক্ষেত্রেই খাছ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতেন। যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। স্মর্তব্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহিলাসহ পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে কারবালা পর্যন্ত ছফর করেছেন একথা তো সকলের মাঝেই মশহুর। সুতরাং দ্বীনি কাজে হোক কিংবা অন্য কোন জরুরতে হোক পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরকে নিয়ে ছফর করা জায়িয তো অবশ্যই খাছ সুন্নতও বটে। তবে অবশ্যই প্রতি ক্ষেত্রে খাছ শরয়ী পর্দা রক্ষা করতে হবে। (দলীল: মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৫২তম সংখ্যা)
-উম্মু রাফীফ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












