ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
মিথ্যার কুফল ও ভয়াবহ পরিণতি
, ২৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৪ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
মিথ্যা বলা ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়া উভয়টিই হারাম ও কবীরা গুনাহ। স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব্বুল আলামীন, মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি স্বীয় কালাম পাক উনার একাধিক আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মিথ্যার কুফল ও শাস্তি সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি কুল-কায়িনাতের যিনি নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বহু হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّوْرِ
অর্থ : তোমরা মিথ্যা হতে বিরত থাক। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: আয়াত শরীফ ৩০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ
অর্থ : মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: আয়াত শরীফ ৬১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُوْلًا◌
অর্থ : আর নিশ্চয়ই যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই অর্থাৎ যে বিষয় সম্পর্কে তুমি জাননা সে বিষয়ের অনুসরণ করো না অর্থাৎ সে বিষয় সম্পর্কে বলতে যেওনা। নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু ও অন্তরের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হবে। (পবিত্র সূরা বনী ইসরাইল শরীফ: আয়াত শরীফ ৩৬)
ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের মধ্যে বর্র্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা সত্য বলাকে অপরিহার্য করে নাও, কেননা সত্য বলা নেক কাজের পথ প্রদর্শন করে আর নেক কাজ জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলার চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সে ব্যক্তি ‘ছিদ্দীক্ব’ (পরম সত্যবাদী) বলে লিখিত হয়। আর তোমরা মিথ্যা বলা থেকে নিজেকে দূরে রাখো। কেননা মিথ্যা কথা গুনাহ্র দিকে পথ প্রদর্শন করে এবং গুনাহ দোযখের দিকে ধাবিত করে। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টা করে, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা যখন মিথ্যা বলে তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উক্ত মিথ্যার দুর্গন্ধের জন্য তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যান। (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّمَا الْكِذْبُ لِكُلِّ الذُّنُوبِ اُمٌّ
অর্থ : নিশ্চয়ই মিথ্যা সকল গুনাহ্র মূল।
ছহীহ মুয়াত্তা মালিক শরীফ ও বায়হাক্বী শরীফের মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন-মুসলমান ব্যক্তি কি ভীরু হতে পারে? তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, হতে পারে। উনাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন-মুসলমান ব্যক্তি কি কৃপণ হতে পারে? তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, হতে পারে। পুনরায় উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন-মুসলমান ব্যক্তি কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? এবার তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, না, মিথ্যাবাদী হতে পারে না।
ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কছম করে, কোন মুসলমানের হক্ব (স্বত্ব) আত্মসাৎ করে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন। এটা শুনে এক ছাহাবী বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেই বস্তু যদি সামান্য পরিমাণ হয়? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদিও এরাকি বৃক্ষের একটি শাখাও হোক না কেন।
ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্র্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহগুলোর সংবাদ প্রদান করবো না? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শরীক করা, পিতা-মাতা উনাদেরকে কষ্ট দেয়া। তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন, অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়া।
মূল কথা হলো: মিথ্যা বলা ও মিথ্যা স্বাক্ষ্য প্রদান করা উভয়টি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীসমূহের মধ্যে এক বড় নাফরমানী। মিথ্যা মু’মিন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য নয় বরং মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য।
কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসানের জন্য ফরয হলো- সর্বপ্রকার মিথ্যা থেকে বিরত থাকা। (সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












