ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৩)
, ১৪ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩১ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কাজেই যদি কোন ব্যক্তি স্বপ্নেও দেখে যে, আফদ্বালুল আউলিয়া ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাহবূবে সুবহানী কুতুবে রব্বানী সাইয়্যিদুল আউলিয়া গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা তাকে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দিচ্ছেন তাহলে বুঝতে হবে যে, স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পক্ষ হতেই ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দেয়া হচ্ছে। মূলতঃ একজনের মুরীদকে অন্যজন সেই মুরীদের শায়েখ উনার অনুমতি ব্যতিত ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দিতে পারেন না। আর তা তরতীবও নয়।
বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত শাহ কুতুবুদ্দীন হায়দার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন মুরীদ অতি ক্ষুধার্ত অবস্থায় হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খানকাহ শরীফে উপস্থিত হলেন। অতঃপর নিজ শায়েখের আবাসস্থলের দিকে লক্ষ্য করে দোয়া করতে লাগলেন যে-
يَا قُطُبَ الدِّيْنِ حَيْدَرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ شَيْأً لِلّهِ
অর্থ: “হে কুতুবুদ্দীন হায়দার রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমাকে সাহায্য করুন।” হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার খানকাহ শরীফের বাহিরে এ রকম ডাক শুনতে পেয়ে নিজ খাদিমকে নির্দেশ দিলেন যে, আগন্তুকের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতঃ উনাকে যেন সংবাদ দেয়া হয়। নির্দেশ মুতাবিক খাদিম সেই আগন্তুককে আহার করালো। সেই আগন্তুক ব্যক্তি খাবার গ্রহণ শেষে পুনরায় নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার আবাসস্থলের দিকে ফিরে শোকর আদায় করে বলতে লাগলো, হে আমার শায়েখ! আপনি আমার খুবই উপকার করলেন এবং এমনভাবে মেহমানদারী করালেন যে, আমি বেশ পরিতৃপ্ত হয়েছি। সেই খাদিম তার শায়েখ হযরত শিহাবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, “আমি এমন কৃতজ্ঞ ব্যক্তি কখনো দেখিনি যে, আপনার মত বুযূর্গ ব্যক্তির মেহমানদারী গ্রহণ করে তার নিজ শায়েখের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আসলে ঐ ব্যক্তি একজন ফেরেশতা ছিলেন, যে তোমাদেরকে তাছাউফের তা’লীম বা শিক্ষা দিতে এসেছেন। অতএব স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি মুরীদের আদব-কায়দা এবং আক্বীদা কিরূপ হওয়া উচিত তা সহজেই অনুমেয়।
স্মর্তব্য, যা কিছু নিয়ামতই অর্জিত হোক না কেন, তা নিজ শায়েখের তোফায়েলে ও উছিলাতে প্রাপ্ত হয়েছে বলে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করাই হচ্ছে প্রকৃত আদব। আর এর মধ্যেই রয়েছে তার কামিয়াবী বা সফলতা। কেননা কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
কোন এক মুরীদ একবার নদীতে ডুবতে ছিল, হঠাৎ দেখতে পেল যে, পানির উপর একখানা হাত বের হয়ে বলতে লাগলো, “এ হাত ধরো, তুমি নিমজ্জিত হওয়া থেকে উদ্ধার পাবে।” মুরীদ জিজ্ঞাসা করলো, এই হাত কার, উত্তর আসলো, “তোমার পীর ছাহেবের পীর ছাহেবগণের মধ্যে অমুক পীর ছাহেবের।” সে ব্যক্তি ঐ হাত ধরতে অস্বীকৃতি জানালো। তৎপর অপর এক হাত পানির উপর দৃষ্টি গোচর হলো এবং বললো, “এই হাত ধরো।” মুরীদ প্রশ্ন করলো, “এ হাত কার?” উত্তর আসল “এ হাত সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার।” মুরীদ সে হাতও ধরতে সম্মত হলো না এবং বলল, “আমি এ হাতে নিজ হাত দেইনি। অর্থাৎ আমি এ হাতের উপর বাইয়াত গ্রহণ করিনি।” তখন আবার অপর এক হাত পানির উপর প্রকাশ হলো এবং বললো “এ হাত ধরো।” মুরীদ পুনরায় প্রশ্ন করলো, “এ হাত কার?” উত্তর আসলো, “এ হাত তোমার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার।” তখন মুরীদ সেই হাত ধরলো এবং নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পেলো। কাজেই মুরীদকে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি কতটুকু ফানা হওয়া উচিত তা ফিকিরযোগ্য। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অনুসরণীয় চার মাযহাব উনাদের ফতওয়া মুতাবিক সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ইসলামী পোশাক সম্পর্কে ইলম (২)
০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দুনিয়াদার ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে-‘সূ’দের হাক্বীকত সম্পর্কে (৬০)
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ইসলামী পোশাক সম্পর্কে ইলম (১)
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
গোল্ডেন রাইস (২)
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে -১১
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)