ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৯) সালিক বা মুরীদ তার গুরুত্বপূর্ণ সকল কাজ যথাযথভাবে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পরামর্শ অনুযায়ী করবে
(গত ০৯ রজবুল হারাম শরীফের পর)
, ১৫ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ১২ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
স্বরণীয় যে, পারস্পরিক পরামর্শের বিষয়টি দ্বীন ইসলামের এক বিরাট গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পারস্পরিক পরামর্শ দ্বারা একদিকে যেমন দ্বন্দ্ব-কলহ, বিবাদ-বিসম্বাদ ও বিভিন্ন ফিৎনা-ফাসাদের অবসান ঘটে, শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। তেমনি স্থিরকৃত কাজের গতি ছহীহ্ ও সঠিক পথে পরিচালিত হয়, বিধায় অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকত বয়ে আনে। কাজেই যারা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার পরামর্শ মোতাবেক কাজ করেন উনারা যে জীবন উদ্দেশ্যের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে তা বলাই বাহুল্য।
তবে সর্বপ্রকার লোকের পরামর্শ দ্বারা আশানুরূপ ফল অর্জিত হয় না। বরং কোন কোন লোকের পরামর্শ গ্রহণ অনেকাংশে সমাজে নানাবিধ অশান্তির কারণ হয়ে থাকে। কাজেই পরামর্শ গ্রহণের পূর্বে কাদের পরামর্শ গ্রহণযোগ্য, রহমত, বরকত ও সাকীনাহ্ লাভের কারণ তা ভালভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اَلْاِمَامِ الْاَوَّلِ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَلَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْأَمْرُ يَنْزِلُ بِنَا بَعْدَكَ لَمْ يَنْزِلْ بِهِ الْقُرْآنُ وَلَمْ نَسْمَعْ مِنْكَ فِيهِ شَيْئًا، قَالَ اَجْمَعُوا لَهُ الْعَابِدِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَاجْعَلُوْهُ شُورَى بَيْنَكُمْ وَلَا تَقْضُوْا فِيْهِ بِرَأْيٍ وَاحِدٍ
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার অবর্তমানে আমরা যদি এমন কোন বিষয়ের সম্মুখীন হই যে বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফে সুস্পষ্ট কোন ফায়ছালা নেই এবং আপনার নিকট হতে এ ব্যাপারে কিছু শুনা যায়নি তবে আমরা এ ব্যাপারে কি করবো? তখন মহাসম্মানিত রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এর জন্য আমার উম্মতের ইবাদতকারী (ছূফী) গণকে একত্রিত করবেন এবং পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে কর্তব্য স্থির করবেন। কারো একক মতের উপর কোন ফায়ছালা দিবেন না। অপর একটি রেওয়ায়েতে فُقَهَاءُ (ফক্বীহ্গণ) এবং عَابِدِيْنَ (ইবাদতকারী) শব্দদ্বয় উল্লেখ করা হয়েছে। (তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ খন্ড ১০ পৃষ্ঠা, মাআরেফুল কুরআন)
আলোচ্য পবিত্র হাদীছ শরীফে الْعَابِدِيْنَ (ইবাদতকারী) দ্বারা যারা উবূদিয়্যাতের মাক্বামে উন্নত হয়েছেন, উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। কাজেই যারা নিছক ইলিম ও ইখলাছবিহীন কিছু নফল ইবাদতকে পুঁজি করে তার উপরেই দায়িম-ক্বায়িম থাকে এবং এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের একমাত্র সম্বল ও পথ বলে প্রচার করে তারা উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ যারা পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ, জাহির-বাতিন উভয় দিক থেকেই পরিশুদ্ধ ও ইছলাহপ্রাপ্ত অর্থাৎ হক্কানী-রব্বানী আলিম, খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত, হাক্বীক্বী মু’মিন, হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী পরহেযগার উনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে। উনারাই পরামর্শের জন্য উপযুক্ত ও উনাদের পরামর্শই শরীয়তে গ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرُسُلِهٖ أُولٰئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ وَالشُّهَدَاءُ عِنْدَ رَبِّهِمْ
অর্থ: “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে উনারাই উনাদের মহান রব তায়ালা উনার নিকট ছিদ্দীক্ব ও শহীদ হিসেবে গণ্য। ” (পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ১৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফের তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, “ছিদ্দীক্ব ও শহীদ বলতে প্রকৃতপক্ষে মু’মিনদের বিশেষ এক উচ্চ শ্রেণীর আলিমগণ উনাদেরকে বলা হয়েছে, যারা মহান গুণাবলীর অধিকারী।
তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে আরো বর্ণিত আছে যে, উদ্ধৃত আয়াত শরীফে কামিল ও ইবাদতকারী অর্থাৎ পরিপূর্ণ মু’মিনগণকেই বুঝানো হয়েছে। অন্যথায় যেসব মু’মিন অসাবধান বা খেয়াল-খুশিতে নিমগ্ন তাদেরকে ছিদ্দীক্ব ও শহীদ বলা যায় না। কারণ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إنَّ اللَّعَّانِيْنَ لَايَكُوْنُوْنَ شُهَدَاءَ
অর্থ: “যারা মানুষের প্রতি অভিসম্পাত করে তারা শহীদগণের অন্তর্ভুক্ত হবে না। ” (বুখারী শরীফ) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২০)
৩১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করার গুরুত্ব
০৭ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফায়িয-তাওয়াজ্জুহর বদৌলতে মৃত্যুর সময় অল্পের জন্য ঈমান রক্ষা...
০১ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (৩)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (২)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয (১)
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ সম্পর্কে
০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
انابة (ইনাবত) মাক্বাম হাছিলকারীগণের হালত বা অবস্থা
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ওলী আল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা ফরয।
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
একজন হক্কানী রব্বানী শায়েখ বা মুরশিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ইলমে তাছাওউফ অর্জন করাও ফরয
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত ইবাদত মূল্যহীন
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)