ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৯) কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ০২ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) ইলমে তাছাউফ
উল্লেখ্য যে, একবার হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে, আবেগ-আপ্লুত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করলেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনার এমন একজন খাছ বান্দা আমাকে মিলিয়ে দিন, যিনি আমার ধারণকৃত মহান নিয়ামতের যথাযথ কদর করতে পারবেন। তৎক্ষণাৎ গায়েবী নেদা হলো, “আপনি রোম দেশে যান। ”
এ গায়েবী নেদা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি রোম দেশের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। পথিমধ্যে কাউনিয়া নামক স্থানে পৌঁছে সওদাগরদের পান্থশালায় অবস্থান করেন। পান্থশালার দরজার সামনে একটি উঁচু বেদী ছিলো, অধিকাংশ সময় আমীর ও রাজ কর্মচারীগণ এসে এর উপর বসতো। হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সে বেদীর উপর বসলেন। এদিকে উনার আগমনের সংবাদ পেয়ে অনেক আগ্রহ নিয়ে হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সাথে সাক্ষাত লাভের উদ্দেশ্যে পান্থশালায় পৌঁছলেন।
হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখে বুঝতে পারলেন যে, উনার সম্বন্ধেই আমাকে মূলত: জানানো হয়েছে। হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এসে পায়ে পরে পূর্বের অবস্থার জন্য ক্ষমা চাইলেন। হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে ক্ষমা করে দিলেন। অতঃপর উনারা উভয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পরস্পর আলোচনা করলেন। সবশেষে হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হুযূর! আমাকে বাইয়াত করান। হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, বাইয়াত হতে হলে কিছু শর্ত পালন করতে হবে। যদি তাতে রাজী হন তাহলে বাইয়াত গ্রহণ করাবো।
কি সেই শর্ত? ......... হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, দু’ বোতল শরাব নিয়ে আসতে হবে। তিনি তৎক্ষনাত দু’ বোতল শরাব নিয়ে উপস্থিত করলেন। তারপর বললেন, দু’জন মেয়ে নিয়ে আসুন। সাথে সাথে হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার দু’জন মেয়েকে নিয়ে এসে হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হাজির করলেন। তিনি পূণরায় বললেন, এবার ক্বারীবুল বুলূগ বা বালেগের নিকটবর্তী দু’জন (আমরাদ) দাঁড়ি গোফহীন (বালক) আমার কাছে নিয়ে আসুন। তিনি দু’জন ছেলে এনে যথাসময়ে হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে হাজির করলেন। এরপর হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং বললেন, এখন এগুলো ফেরত পাঠিয়ে দিন। হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তৎক্ষণাৎ ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পূণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিপরীত মুখী এ দু’ অবস্থার মধ্যে কেমন করে সামঞ্জস্য সাধিত হতে পারে। কারণ, একদিকে উনার অবস্থা এরূপ ছিলো যে, তিনি সারা জীবন খরবুজা খাননি। কেননা, তিনি জানতে পারেননি যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি প্রকারে খরবুজা খেয়েছেন, অপরদিকে তিনি নিজের সম্বন্ধে বলতেন-
سُبْحَانِى مَا اَعْظَمَ شَاْنِى
অর্থাৎ আল্লাহু আকবার! আমার শান কত উচ্চে! অথচ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন উচ্চ মর্যাদার মালিক হয়েও (উম্মতকে শিক্ষাদানের জন্য) বলতেন, আমি দিনে সত্তর থেকে একশবার তওবা করি। তদুত্তরে হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি যদিও অতি উচ্চ মর্যাদাশীল বুযূর্গ ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু বেলায়েতের ক্ষেত্রে তিনি এক নির্দিষ্ট স্তরে এসে স্থির হয়ে গিয়েছেন। আর সে স্তরেরই মহত্তের প্রভাবে উনার জবান থেকে এ সমস্ত বাক্য বের হতো। পক্ষান্তরে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সর্বোচ্চ মাক্বামে উপনীত। উনার সাথে তো তুলনা দেয়াই চরম আদবের খিলাফ। আর মূলত তিনি উম্মতকে তা’লীম বা শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়।
হযরত শায়েখ শামস তাবরেজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলিম-আমল-আকল ও সমঝ সর্বোপরি উনার প্রতি একাগ্রতা দেখে বাইয়াত করালেন এবং পূর্ববর্তী কামিল মাশায়িখগণের প্রাপ্ত যাবতীয় নিয়ামতরাজী হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বরকতস্বরূপ অর্পণ করলেন এবং সাথে সাথে বলে দিলেন, এগুলো যথাযথ ব্যবহার করবেন যাতে পরকালে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট লজ্জিত হতে না হয়। (তাযকিরাতুল আউলিয়া) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












