ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৭)
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
, ১৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১১ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইলমে তাছাউফ
কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যদি কোন সময় বাহ্যিক দৃষ্টিতে শরীয়তের খেলাফ আমল করেন বা করার নির্দেশ দেন তাহলে বুঝতে হবে যে তাতে কোন হিকমত বিদ্যমান। যার শেষ পরিণতি উত্তম।
হযরত ইসমাইল হাক্কী বারূসুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে রূহুল বয়ানে” একথাই উল্লেখ করেছেন-
وغاية بان كل ماصدر عنه فله حكمة حميدة البتة وهذا من اداب المتعلم مع العالم والتابع مع المتبوع.
অর্থ: “উনার (পীর ও মুর্শিদ) থেকে যা প্রকাশ পায় তাতে হিকমত রয়েছে এবং শেষ পরিণতি উত্তম প্রশংসনীয়। আর এটাই হচ্ছে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষকের বা সালিকের (মুরীদের) জন্য শায়েখউনা র (পীর ও মুর্শিদের) প্রতি এবং সকল অনুসারীর জন্য অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গের প্রতি আদবের অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য যে, এ বিষয়টি ছোহবতের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যার প্রতি দৃষ্টি না রাখলে ছোহবতে থাকা অত্যন্ত কঠিন। কেননা পীর ও মুর্শিদ বা অনুসরণীয় ব্যক্তির আমলের প্রতি যদি মুরীদ বা অনুসরণকারী সন্দিহান হয় বা ই’তিরাজ করে তাহলে তার ছোহবতে থেকে কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবে না।
কাজেই যতদিন ছোহবত ইখতিয়ার করবে ততদিন কোন ই’তিরাজ করতে পারবে না।
জনৈক বুযূর্গ বলেছেন- “ওহে মন! যদি তুমি প্রেমাস্পদের সন্তুষ্টি চাও তবে তুমি তাই করো যা সে বলে। রক্তাশ্রু প্রবাহিত করতে বললে জিজ্ঞাসা করো না, কেন? প্রাণ বিসর্জন দিতে বললে, কারণ জিজ্ঞাসা করো না।” (মাকতুবাতে সদী)
হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীর গ্রন্থ, “তাফসীরে মাজহারীতে” উল্লেখ করেছেন-
يجب على المريد ترك الاعتراض على الشيخ وان ظهر على يديه منكر ظاهرا بعد ماثبت عنده انه اهل الكمال والتكميل فان كان المريد لايستطيع ذلك لاجل اختلاف المشرب يجب عليه ترك مصاحبة غير منكر كماله.
অর্থ: “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা কামিলে মুকাম্মিল এটা মুরীদের নিকট স্পষ্ট হওয়ার পর যদি শায়েখের থেকে বাহ্যিকভাবে মুনকার (অপছন্দনীয়) কাজ প্রকাশ পায় তবুও স্বীয় মুর্শিদের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা মুরীদের জন্য ওয়াজিব। আর মাসলাক বা মাসয়ালা-মাসায়েলের ইখতিলাফের কারণে মুরীদ যদি (তার) মুর্শিদ ক্বিবলার আমলে ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম না হয় বা মেনে নিতে না পারে তাহলে মুরীদের জন্য ওয়াজিব হলো, মুর্শিদ ক্বিবলার কামালতকে অস্বীকার না করে বরং (কিছুদিনের জন্য) মুর্শিদ ক্বিবলার ছোহবত থেকে বিরত থাকা।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে-
من اتى به من اولياء الله تعالى لايجوز عليه الانكار لانه من تقلد عالما لقى الله سالما.
অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণের ছোহবত ইখতিয়ার করবে তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণকে ইন্কার (অস্বীকার) করা বা উনাদের আদেশ-নিষেধের প্রতি চূ-চেরা, কীল-কাল করা জায়েয হবে না। কেননা যে ব্যক্তি কোন হক্কানী-রব্বানী আলেমের তাক্বলীদ (পূর্ণ অনুসরণ) করবে সে ব্যক্তি অতি সহজেই বা নিরাপদে মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত পাবে, দীদার লাভ করবে।” (তাফসীরে মাজহারী, ৬ষ্ঠ খ- ৫২)
আরো উল্লেখ আছে যে-
ومن الاداب ان لايكون معترضا على افعال الشيخ واقواله واحواله وجميع حركاته وسكناته معتقدا له فى جميع حالاته وان شاهد منه معاملة غير مرضية بنظر عقله وشرعه فلاينكره بها ولايسئى الظن فيه يحسن فيه الظن ويعتقد انه مصيب فى معاملاته مجتهد فى ارائه وانما الخطا من قصور نظرى وسخافة عقلى وقلة علمى.
অর্থ: “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি মুরীদের আদব হচ্ছে, মুর্শিদ ক্বিবলার কোন কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, উঠা-বসা, আচার-আচরণে, সুখে-দুঃখে, সচ্ছল-অসচ্ছল, কোন অবস্থাতেই মুরীদ বিরূপ মন্তব্যকারী হবে না। বরং মুর্শিদ ক্বিবলার প্রতি সর্বাবস্থায় পূর্ণ আক্বীদা-বিশ্বাস, হুসনে যন বা সুধারণা রাখতে হবে। যদিও উনার দ্বারা এমন কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ প্রত্যক্ষ করে যা তার সাধারণ আকল ও শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে (অপছন্দনীয়) মুনকার বলে মনে হয় তবুও কোন ক্ষেত্রে ঐ বিষয়কে এনকার (বিরূপ-মন্তব্য) করবে না এবং কোন বিষয়ে উনার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করবে না, বরং সুধারণা পোষণ করবে। আর এরূপ আক্বীদা-বিশ্বাস বদ্ধমূল রাখতে হবে যে, উনার সমস্ত কাজ-কর্ম সঠিক এবং তিনি অভিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত মুজতাহিদ। আর দৃশ্যতঃ ভুল-ত্রুটি যা আমার দৃষ্টির ভ্রষ্টতা, ইলিম ও আকলের স্বল্পতা হেতু অনুধাবনে অক্ষম।”(অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












