শিক্ষামূলক ঘটনা:
যিনি আলিম, উনার ফতওয়া তদ্রুপ হবে যেরূপ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের মধ্যে বর্ণনা রয়েছে (১)
, ০৬ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২২ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি বিশিষ্ট বুযূর্গ এবং আলিম, উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ উনাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। অনেক কিতাবাদি তিনি লিখেছেন, উনার অনেক কিতাব মাদরাসায় পড়ানো হয়ে থাকে। সেই মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি ছিলেন বাদশা আলমগীরের উস্তাদ, শাহজাহান তখন বাদশা। যে বাদশা শাহজাহান ছিলেন, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ ও বাদশা জাহাঙ্গীরের ছেলে। বাদশা শাহজাহান ছোটবেলা থেকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত ইখতিয়ার করেছিলেন। ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে তাছাউফ যথেষ্ট অর্জন করেছেন এবং হক্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য উনার পিতা বাদশা জাহাঙ্গীরের সাথে জিহাদও করেছেন।
একবার জিহাদ করছিলেন, তখন জিহাদের অবস্থা বাদশা শাহজাহানের অনুকূলে ছিলো। বাদশা জাহাঙ্গীর পরাস্ত হচ্ছিলো। কিন্তু পরক্ষণে দেখা গেলো, বাদশা জাহাঙ্গীরই জয়লাভ করার দিকে, উনার সৈন্য জিতে যাচ্ছে। তখন বাদশা শাহজাহান এসে আরয করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আমি তো পূর্ব থেকেই আপনার খাদেম। আমি জিহাদ করার মূল কারণ হচ্ছে, হাক্বীক্বী ইসলামী আইন-কানুনগুলো জারী করা। আপনি যদি আমার প্রতি ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ নিক্ষেপ করতেন, তাহলে অবশ্যই আমি কামিয়াবী হাছিল করতে পারতাম। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে শাহজাহান, তুমি অস্থির হয়ো না, পেরেশান হয়ো না। তাছাউফের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার পরে আমার ছেলে হযরত ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গিয়ে পৌঁছবে অর্থাৎ জিম্মাদারীতে যাবে। আর যাহেরান যে রাজত্ব বা সালতানাত রয়েছে, তার জিম্মাদারী তোমার পিতা জাহাঙ্গীরের পরে তোমার উপরেই গিয়ে পড়বে। কোন অস্থিরতার কারণ নেই, ধৈর্য্য ধারণ করো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমার কাছে বাদশাহী পৌঁছাবেন।
সেই বাদশা শাহজাহান বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ, তার শরীরে খুজলী-পাঁচড়ার মতো চুলকানী হয়েছে। তখন সে তার দরবারের যে মুফতী ছিলো। যেহেতু সে সময়ে প্রত্যেক বাদশাহর দরবারেই একজন মুফতী ছাহেব থাকতেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে মুফতী ছাহেব, আমার শরীর তো অসুস্থ, কাজেই এখন আমার জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে কি? মূলতঃ চুলকানি জাতীয় কোন রোগ হলে, রেশমী কাপড় যদি কেউ পরিধান করে, তাহলে তার শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও আরো কয়েকজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন, অতিরিক্ত চুলকানী হওয়ার কারণে রেশমী কাপড় পরিধান করার। এতে সুস্থতা লাভ হয়।
বাদশা শাহজাহানের কিছু অসুস্থতা দেখা দিয়েছিলো। তাই মুফতী ছাহেবের কাছে বলেছিলো যে, মুফতী ছাহেব, আমার জন্য কি রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে? মুফতী ছাহেব বললো যে- হ্যাঁ, আপনার জন্য জায়িয রয়েছে। আপনি ব্যবহার করতে পারেন। বাদশা শাহজাহান যেমন ছূফী ছিলেন, তেমন ফক্বীহ বা সমঝদারও ছিলেন। কেননা তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত লাভ করেছেন। তাই তিনি বললেন যে, আপনার একার কথায় হবে না, লিখিত ফতওয়া দিতে হবে। কারণ অন্যান্য আলিমরা যদি আমাকে প্রশ্ন করে, আমি কি জাওয়াব দিবো? তখন সে মুফতী ছাহেব লিখিত দিলো। তখন তিনি বললেন যে, আপনার একার লেখা অর্থাৎ স্বাক্ষরের ফতওয়ায় হবে না, আরো আলিমদের ফতওয়া বা স্বাক্ষর থাকতে হবে। তখন সে মুফতী ছাহেব সারা দেশ থেকে তিনশত আলিমের স্বাক্ষর সংগ্রহ করলো। তারা সকলেই ফতওয়া দিলো যে, জরুরতবশতঃ অর্থাৎ অসুস্থতার কারণে বাদশা শাহজাহানের জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয রয়েছে।
কেননা বাদশা শাহজাহান যদি সুস্থ থাকেন, তবে সারা দেশ সুস্থ থাকবে। যেহেতু তিনি বাদশা। বাদশা শাহজাহান সে ফরদ বা ফতওয়াটা নিয়ে লক্ষ্য করলেন, কার কার স্বাক্ষর রয়েছে, দস্তখত রয়েছে। সকলের দস্তখত তিনি লক্ষ্য করলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি বললেন যে- দেখ, সকলেরই দস্তখত রয়েছে কিন্তু হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন দস্তখত এখানে নেই। উনার দস্তখত থাকতে হবে, অন্যথায় আমি এটা গ্রহণ করবো না। যেহেতু তিনি বিশিষ্ট আলিম, বুযুর্গ, উনার স্বাক্ষর বা দস্তখত থাকতে হবে। তখন সে কাগজটা পাঠানো হলো হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে। তিনি সেটা দেখে বললেন যে, ঠিক আছে, আমি আজকে জবাব দিবো না। আমি জুমুয়াবার দিন, যেহেতু বাদশা আমার মসজিদে জুমুয়ার নামায পড়ে থাকেন, জুমুয়ার নামাযের পূর্বে আমি কিছু বয়ান করে থাকি, সে বয়ানের মধ্যে আমি এ ব্যাপারে ফতওয়া দিবো। কাগজটা আমার কাছে দিয়ে যাও। কাগজটা উনার কাছে রেখে দেয়া হলো। (অসমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












