সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার নছীহত মুবারক থেকে সংগৃহীত:
যিলহজ্জ মাসের মহিমান্বিত দশ দিন ও দশ রাত (১)
, ২৯ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ৩৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتَابِ اللّٰهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ
অর্থ : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আসমান এবং যমিন সৃষ্টির শুরু থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবে গণনা হিসেবে মাসের সংখ্যা বারোটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে হারাম অর্থাৎ সম্মানিত মাস।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وَعَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ بَكْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبيِّ قَالَ إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِه يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ والأَرْضَ اَلسَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلَاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ والْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِيْ بَيْنَ جُمادٰى وَشَعْبَانَ (متّفق عليه)
অর্থ: হযরত আবূ বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই সময় তার তরতীব অনুযায়ী ঘুরে থাকে। আসমান এবং যমীন সৃষ্টির শুরু থেকে বারো মাসে এক বছর। চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস। তন্মধ্যে তিনটি হলো ধারাবাহিক তথা একসাথে- পবিত্র যিলক্বদ শরীফ, পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ, পবিত্র মুহররম শরীফ। আর পবিত্র রজব শরীফ মাস যেটা মুদার গোত্র উনারা পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ এবং পবিত্র শা’বান শরীফ মাস উনাদের মধ্যবর্তী মাস হিসেবে গণনা করেন”। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
উল্লেখিত চারটি হারাম মাস উনাদের মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস। এই মহাসম্মানিত মাস উনার শুরুতেই বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে; যার মাধ্যমে জ্বীন-ইনসান সহজেই বহু নেকী অর্জন করতে পারবে।
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল:
পবিত্র সূরা ফজর শরীফ উনার দ্বিতীয় পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
وَلَيَالٍ عَشْرٍ ﴿٢﴾
“কসম! দশ রাত্রির”।
এখানে দশ রাত্রির কসম করে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার প্রথম দশরাত ও দশদিনের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। এই দিনগুলোর গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَعَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللّٰهِ مِنْ هٰذِهِ اْلأَيَّامِ الْعَشْرِ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ اِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِه وَمَالِه فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذٰلِكَ بِشَيْءٍ.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “এই দশদিনের (যিলহজ্জ শরীফ উনার প্রথম দশদিন) আমলে ছলেহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এত প্রিয়, পছন্দনীয় যে, অন্য কোনো দিনের আমলে ছলেহ এত প্রিয়, পছন্দনীয় নয়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করাও কি না? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করাও না। তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে তার মাল-জান নিয়ে (মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদে) বের হয়েছে এবং সেগুলোর কোন কিছুই নিয়ে ফিরেনি”। (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ)
মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَه فِيْهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের প্রথম দশ দিন অপেক্ষা এমন কোনো দিন নেই যাতে ইবাদত করা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক প্রিয়। দশদিনের প্রতিটি রোযায় একবছর রোযার সমপরিমান ছওয়াব রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! আর প্রতিটি রাতের ইবাদতে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ রাতের ইবাদতের সমতূল্য ছওয়াব রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
বলাবাহুল্য, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ পাওয়ার জন্য রমাদ্বান শরীফ মাসের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোতে তালাশ করতে হয়; কিন্তু পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে বিনা তালাশে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ উনার সমতুল্য দশটি রাত পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ বছরে একবার হয় যা এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। অপরদিকে এই দশ রাতের ইবাদত-বন্দেগী দশ হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগীর চেয়েও উত্তম। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












