রপ্তানি আয় বাড়াতে বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই
এডমিন, ৩০ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশ তথা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হবে ২০২৬ সালে। এখনো বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ পণ্য কোনো না কোনোভাবে অগ্রাধিকারমূলক (জিএসপি) বাজার-সুবিধার আওতায় রপ্তানি হয়। ২০২৯ সালের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা থাকবে না। তাতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রক্রিয়া ২০২৭ সালে শুরু হওয়ার প্রাক্কালেই যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তার পরিমাণ ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এমন এক পরিস্থিতিতে রপ্তানি বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই।
অথচ আমাদের পুরো রপ্তানি খাত দিন দিন তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়লে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় থাকে। তা না হলেই শীর্ষ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎসটি ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে।
এক যুগ আগে দেশের মোট পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল ৭৮ শতাংশ। গত বছর সেটি বেড়ে ৮২ শতাংশে উঠেছে। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং হিমায়িত খাদ্যের হিস্যা কমেছে। আবার পাট ও পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি হিস্যা বাড়লেও তা খুবই সামান্য।
তৈরি পোশাকের পর পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্রকৌশল পণ্য ও হিমায়িত খাদ্য-এগুলোই বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত। সুতরাং ওপরের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, রপ্তানি বাড়লেও পণ্য বহুমুখীকরণ কচ্ছপ গতিতেই এগোচ্ছে।
অথচ একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করতে রপ্তানিভিত্তিক এ ধরনের উদ্যোগের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের শীর্ষ রপ্তানি খাতের এসব পণ্যের রপ্তানি বাড়লেও বহুমুখীকরণে কোনো গতি নেই। পণ্যের উদ্ভাবনে সৃজনশীলতা নেই। হিস্যা বাড়ানোর প্রণোদনা নেই। নতুন বাজারের সন্ধান ও সৃষ্টির তাড়না নেই। ফলে পুরো রপ্তানি খাতই দিনকে দিন তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়লেই কেবল সামগ্রিক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় থাকে। এটা যদি কোনো কারণে ধস নামে, তাহলে কী হবে? এক কথায় বলা যায়, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের শীর্ষ এই উৎস প্রচ- রকম ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। সেখান থেকে উত্তরণের কোনো সহজ পথ নেই।
গত ১ জুন সংসদে পেশ করা নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রপ্তানিমুখী শিল্পের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘রপ্তানির বহুমুখীকরণের জন্য আমরা তথ্য-প্রযুক্তিচালিত এবং পরিবেশবান্ধব বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করছি।’
বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস এবং লজিস্টিকসের উন্নতির অঙ্গীকারসহ কিছু ছাড় ও প্রণোদনা অতীত আগে থেকেই অব্যাহত আছে কিংবা বাজেট বক্তৃতায় নতুন করে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৯০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা এবং প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানি বাড়াতে অবকাঠামোগত বিনিয়োগের জন্য এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্পের আওতায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল নিয়ে সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। অন্যদিকে একসময় বিলিয়ন ডলার আয় করা খাতগুলো-হোম টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষিপণ্য-এখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় ও সরকারের পর্যাপ্ত নীতি সহায়তার অভাবে নিজেদের গতি বজায় রাখতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
রপ্তানি শিল্পকে পরবর্তী গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসব কি যথেষ্ট?
রপ্তানি খাতের নেতারা তা মনে করেন না।
রপ্তানি প্রণোদনা বৈষম্যমূলক, এখনও একটি একক পণ্যের প্রতি পক্ষপাতমূলক।
আরএমজির জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা, অথচ প্লাস্টিক ও জুতার মতো তথাকথিত বৈচিত্র্যপূর্ণ খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ কোটি টাকা! তাহলে কেউ বৈচিত্র্য আনতে যাবে কেন?
সরকারের উচিত চামড়া শিল্পসহ বৈচিত্র্যময় রপ্তানি খাতগুলোর জন্য প্রণোদনাসহ বিদ্যমান সহায়তা অব্যাহত রাখা, যাতে খাতগুলো শক্তিশালী হয়ে নিজেদের রপ্তানি বাজার বড় করে দেশের মসৃণ এলডিসি উত্তরণে অবদান রাখতে পারে।
যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য ভিয়েতনাম ১৯৮০-র দশকে চীনের রপ্তানি-প্রধান প্রবৃদ্ধি কৌশলের মডেল অনুসরণ করে এবং তার আমূল সংস্কার পরিকল্পনা দোই মোই (সংস্কার) নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়। এ পরিকল্পনা দ্রুত ফল দেয়। ভিয়েতনামের এখন ব্যাপক বৈচিত্র্যময় রপ্তানি বাজার আছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটির ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি টার্নওভার এনে দেওয়া রপ্তানি গন্তব্য ৩৩টি, ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি টার্নওভার এনে দেওয়া বাজার পাঁচটি এবং ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় এনে দেওয়া রপ্তানি বাজারের সংখ্যা ১১টি।
কফি থেকে ভাত, পোশাক থেকে ইলেকট্রনিক, অটোমোবাইল পর্যন্ত অনেকগুলো পণ্য নিয়ে ভিয়েতনাম তার রপ্তানি ঝুড়িকে বৈচিত্র্যময় করেছে।
ভিয়েতনাম তার রপ্তানি ঝুড়িতে ৪৪টি পণ্য যোগ করেছে, যা ২০২০ সালে মাথাপিছু ১,২৫৪ ডলার অবদান রেখেছে। দেশটির রূপান্তর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এফডিআই ও আঞ্চলিক উৎপাদন নেটওয়ার্ককে টার্গেট করে ভিয়েতনাম সফলভাবে কৃষি থেকে সরে গিয়ে টেক্সটাইল, তারপর ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রপাতি উৎপাদন করে বৈচিত্র্য আনতে পেরেছে। বাংলাদেশও একই কৌশল অবলম্বন করে কয়েকটি নির্দিষ্ট উচ্চ-সম্ভাবনাময় খাত ও পণ্যে বিনিয়োগের মাধ্যমে রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য অর্জন করতে পারে।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)