শিশু লালন-পালন/পরিচর্যা (৪)
শিশু পরিচর্যা (জন্মের প্রথম মাস)
, ০৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
(গত ২৪ যিলহজ্জ শরীফ ১৪৪৪ হিজরীর পর)
জন্মের প্রথম মাস থেকেই শিশুর চেহারা ও শারীরিক বৃদ্ধি ছাড়াও তার ইন্দ্রিয় ও মোটর স্কিল এর উন্নতি হতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে একটি চার সপ্তাহ বয়সের শিশুও “মা” এবং “না” শব্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে। এখনই তারা বিভিন্ন ধরনের শব্দের মাধ্যমে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।
শিশুর জন্মের পর দেখবেন সে সবসময় পা নিজের দিকে একটু বাঁকা করে রাখতে চায় সবসময়। গর্ভকালীন সময়ে এই অবস্থাতে ছিল বলেই সে সবসময় এমনভাবে পা বাঁকিয়ে রাখে। এমনকি তার হাতও পুরোপুরি প্রসারিত থাকেনা। এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। ধীরে ধীরে সে হাত পা মেলতে শুরু করবে এবং ৬ মাস বয়স হতে হতে সে পুরোপুরি সোজা হতে পারবে।
অনেক মা এটি ভেবে চিন্তিত থাকেন যে বাচ্চা পরিমান মত দুধ পাচ্ছে কিনা, কারণ বাচ্চা হয়ত কিছুক্ষন পরপরই কাঁদছে। এটা খুবই স্বাভাবিক কারণ খাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক এর মধ্যেই বাচ্চার খাবার হজম হয়ে যায়।
কিছু কিছু জিনিস খেয়াল করলেই আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে আপনার বাচ্চা পরিমান মত দুধ পাচ্ছে। বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের বুক খালি বোধ হওয়া, বাচ্চার গায়ের রঙ পরিষ্কার থাকা, বাচ্চার শরীরের কোন অংশে চাপ দিলে তা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসা, বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি, দিনে ৬ থেকে ৮ বার ইস্তিঞ্জা হওয়া ইত্যাদি।
প্রথম মাসে বাচ্চার খাওয়া ও ঘুম:
জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শিশু ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমায়। এটা অস্বাভাবিক নয়। ঘুম শিশুদের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এ সময় তাদের মস্তিষ্ক ও শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুধু রাতের ঘুমই যথেষ্ট নয়, নিয়মিত দিনে ভাঙা ভাঙা ঘুম/ন্যাপও তাদের ঘুমের অনেকটা চাহিদা পূরণ করে।
বাচ্চাকে চিত করে শোওয়ানো সবচাইতে নিরাপদ কারণ এতে ঝওউঝ (সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম) এর রিস্ক কমে যায়। কিন্তু বাচ্চা যখন জেগে থাকে, তাকে উপুড় হয়ে থাকতে দিন। এতে ঘাড়ের গোশতপেশী শক্ত হয়।
বাচ্চা যখনি ঘুমায় তখন মায়েরাও কিছুটা ঘুম বা বিশ্রাম এর চেষ্টা করুন। কারণ আগামী বেশ কিছু মাস আপনার নির্ঘুম রাত কাটানোর সম্ভাবনাই বেশী।
প্রথম মাসে বাচ্চা প্রতি দুই বা তিন ঘণ্টা অন্তর খেতে চাইবে। অধিকাংশ নবজাতক শিশু ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৮ বার বা তারও বেশী খায়। শিশু যখনই খাবার খাওয়ানোর ইঙ্গিত করে তাকে খাবার খাওয়ান। যতক্ষণ সে খেতে চায় তাকে ততক্ষণ খাওয়ান।
সে প্রথম স্তনের দুধ খাওয়া থামিয়ে দিলে, তার ঢেকুর উঠান এবং দ্বিতীয় স্তনটি থেকে খেতে দিন। এটি আপনার শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনার বুকের দুধের একটি ভাল সরবরাহ থাকা নিশ্চিত করবে।
মনে রাখবেন প্রতিটি শিশুই আলাদা। প্রত্যেকটি নবজাতকের ঘুম, খাওয়ার অভ্যাসও আলাদা।
প্রথম মাসে বাচ্চার ইস্তিঞ্জা:
জন্মের প্রথম দিকে সবপড়হরঁস (গর্ভে থাকাকালীন অন্ত্রে উৎপন্ন হওয়া একধরনের পদার্থ) এর কারণে বাচ্চার ইস্তিঞ্জা ঘন ও গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। বাচ্চা খাওয়া শুরু করার পর সবপড়হরঁস আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে থাকে এবং ইস্তিঞ্জার রঙ হলুদ এর দিকে যেতে থাকে।
তবে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ডায়েট বা ফর্মুলা খাওয়ানো বাচ্চাদের ফর্মুলার ধরন ও পরিমান এর উপর নির্ভর করে রঙ পরিবর্তিত হতে পারে। একটি নবজাতক দৈনিক ৮ থেকে ১২ বার পর্যন্ত ইস্তিঞ্জা ত্যাগ করতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের ইস্তিঞ্জা সাধারণত নরম অনেকটা ডায়রিয়ার মত দেখতে হয়।
নবজাতকের নাভি:
জন্মের এক থেকে তিন সপ্তাহের মাঝে নাভি শুকিয়ে ঝরে পড়ে। এই সময়ের মাঝে নবজাতকের নাভির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত। স্বাভাবিকভাবে নাভি ঝরে পড়লে এটি শিশুর দেহে খুবই সামান্য ক্ষত সৃষ্টি করে। যা অতি অল্প সময়ের মাঝেই ভাল হয়ে যায়।
মনে রাখবেন নাভি সময়ের সাথে সাথে শুকনো, বিবর্ণ দেখানোই স্বাভাবিক। নাভি পড়ে যাবার পর জায়গায় রক্ত থাকতে পারে অথবা জায়গাটি লাল থাকতে পারে। এটি স্বাভাবিক এবং এর জন্য আলাদা কিছু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
আগে নবজাতকের নাভীর যতেœ অ্যান্টিসেপটিক পাউডার বা অ্যালকোহলে ভিজানো তুলা ব্যবহার করা হত। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে নাভী যত শুষ্ক রাখা যাবে তত ইনফেকশন কম হবে।
প্রথম মাসে বাচ্চার কান্না:
সব নবজাতকই কান্না করে, এটাই বাস্তবতা। কান্নাই পৃথিবীতে তাদের প্রয়োজন জানান দেয়ার একমাত্র উপায়। কিন্তু কিছু কিছু নবজাতক (প্রায় ১৫ থেকে ২০ ভাগ) অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী কান্না করে।
বাচ্চা যদি অনেক বেশী কান্না করে, সাধারণত তিন ঘণ্টা বা তার বেশী, সপ্তাহে তিন বা চার দিনের বেশী এবং তার যদি কোন ব্যাখ্যা না থাকে ধরে নিতে পারেন বাচ্চার হয়তো কলিক সমস্যা আছে।
কোন কারণ ছাড়া সুস্থ বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটিকে সাধারণত কলিক বলে। ১৫ থেকে ২০ ভাগ নবজাতক এর ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়। কলিক কি কারণে হয় তা এখনো জানা যায়নি। তবে গ্যাসের সমস্যা, হজমের সমস্যা, ৎবভভষীঁ, বা পরিবেশগত কারণে কলিক হতে পারে মনে করা হয়।
কলিকের কারণে বাচ্চা যে কোন সময় কান্না করতে পারে। তবে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কান্না বেশী থাকে। এতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই কারণ ৬০ ভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রে তা ৩ মাসের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। ৯০ ভাগ বাচ্চা ৪ মাস এর মধ্যে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠে।
এ সময়গুলোতে আপনার আদর এবং মুহব্বত বাচ্চাকে আরাম দিতে পারে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সন্তানদের শিশুকাল থেকেই সঠিক পরিচর্যা করে গড়ে তোলার তাওফিক দান করেন। আমীন। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দার সুমহান বিধান লঙ্ঘন! সহশিক্ষা, সহচাকুরীর ভয়াবহতা: পৃথিবীজুড়ে নারী সংসদ সদস্যরা ব্যাপক হারে যৌন হয়রানি শিকার -আইপিইউ
০৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের জন্য সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (৯)
০৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও পূর্বপরিকল্পনা
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘ই’জায শরীফে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত উম্মুল ফদ্বল বিনতুল হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা (৩)
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এটাইতো সে বিষয় যা বহু বছর ধরে আমি খুঁজছিলাম -মার্কিন নও মুসলিম ডায়না বিটি
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহিলাদের জন্য জামায়াতে নামায পড়া নাজায়েজ : এই নির্দেশনা মুবারক এসেছে সর্বোচ্চ স্থান থেকেই
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
শুধু বোরকা পরার মধ্যেই পর্দা নয়
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: অপ্রয়োজনীয় কথা না বলে চুপ থাকা
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহিলাদের জন্য সুন্নতী লিবাস, অলংকার ও সাজ-সজ্জা (৯)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র আরবী হরফ উনার পরিচয় (১১)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মানবীয় সম্পদের গুরুত্ব কতটুকু
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)