সম্মানিত বনূ কায়নুকার জিহাদ (৪)
, ১৭ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
يَا أبَا الْحَبَّابِ مَا نَفَسْتَ الْيَهُوْدَ عَلَى حَضْرَتْ عُبَادَةِ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ تَعَالىَ عَنْهُ فَهُوَ لَكَ دَوْنَهُ-
অর্থ: “হে আবুল হাব্বাব! ইহুদীদের বন্ধুত্ব থেকে তোমরা যা অতিরিক্ত গ্রহণ করেছ তা তোমাদের জন্য রইলো। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এর মধ্যে নেই। কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল বলল, তবে তাই হবে।”
অর্থাৎ হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভিতরে কাফির-মুশরিকদের মুহব্বত ও বন্ধুত্ব ছিলো না কারণ তিনি ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। আর উবাই বিন সুলূল ছিলো মুনাফিকদের অন্তর্ভূক্ত, তাই সে চু-চেরা কিলকাল করতে লাগলো ও ইহুদীদের সাথে বন্ধুত্বে অটল থাকলো। নাউযুবিল্লাহ!
মূূলত কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধদের সাথে মুহব্বত রাখা হারাম, নাজায়িয ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কাফির-মুশরিকদের সাথে মুহব্বত ও বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নিষেধ করেছেন। কাজেই কোন মুসলমানদের জন্য জায়িয নেই কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু- বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে মুহব্বত ও বন্ধুত্ব রাখা। আর সমস্ত মুসলমানদের জন্য ফরয সব কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের শত্রু মনে করা।
এজন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আখাছছুল খাছ আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জামিউল আলকাব ওয়া জামিউন নিছবত, সুলত্বানুন নাছীর, ইমামুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সমস্ত মুসলমানদের জন্য উনাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয:
১. প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী সবাইকে আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হতে হবে।
২. আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহওয়ালী হওয়ার জন্য তাকে একজন হক্কানী রব্বানী ওলীআল্লাহ, মুজাদ্দিদ বা আখাছছুল খাছ আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার কাছে যেতে হবে। উনার কাছে গিয়ে উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হতে হবে এবং স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ারের মাধ্যমে হাক্বীক্বী কামিয়অবী হাছিল করা।
৩. অতঃপর নিজ সন্তানকে শত্রু চিনাতে হবে। সমস্ত কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীন তারা মুসলমানদের শত্রু। আর শত্রুর সাথে কোনরকম মুহব্বত রাখা যাবে না।
এ সম্পর্কে একটি ওয়াক্বিয়া উল্লেখ করা হয়, কাদ্বী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একদা ইয়ামেনের গভর্নর হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন আপনি যা কিছু লেনদেন করেছেন তা লিখিত ভাবে উপস্থাপন করুন। হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উজীর ছিলো একজন খ্রিস্টান, সে নিখুঁতভাবে আয় ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এ লোকের স্মৃতিশক্তিতো প্রখর। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার কোন চিঠি যখন আপনার কাছে যাবে তখন আপনি তাকে মসজিদের ভিতরেই চিঠি পড়তে দিবেন। হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, সেতো মসজিদে প্রবেশের যোগ্যতা রাখে না। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, কেনো? সে কি অপবিত্র? তিনি বললেন, সে একটা খ্রিস্টান। হযরত আবূ মূসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমার এই কথা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে অনেক শক্ত কথা বললেন এবং আমার উরুদেশে প্রহার করলেন। তিনি বললেন, এই খ্রিস্টানকে বের করে দিন। অতঃপর তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করলেন । সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
পরবর্তী আয়াত শরীফ উনার মধ্যে, কাট্টা মুনাফিক উবাই বিন সুলূল ও তার সঙ্গী সাথীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে তাদের অন্তরে রয়েছে নেফাকী। উবাই বিন সুলূল সে ছিলো কাট্টা মুনাফিক। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে ভালো ভালো কথা বলতো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার ভিতরটা খুবই খারাপ ও বদ ছিলো, তার অন্তরে নিফাকীতে পূর্ণ ছিলো এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে সে সবসময় ষড়যন্ত্র করতো এবং চুপে চুপে ইহুদীদের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বানূ কাইনুকার ইহুদীদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তবে তাদের সমস্ত ধন-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ মুবারক দান করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তাই করলেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ বনূ কাইনুকাকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের করে দিলেন। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আবেদন করলেন, ইহুদীদের অনেকের সঙ্গেই আমার হৃদ্যতা রয়েছে। কিন্তু আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করেছি এবং ঐ সকল প্রাক্তন বন্ধুদেরকে অস্বীকার করেছি। আমি তাদেরকে অপছন্দ করি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরিপূর্ণভাবে বিজয় মুবারক উনার ঘোষণা দিয়েছেন। বিপরীতে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুনাফিকদের গোপন চক্রান্তকে প্রকাশ করে দিয়েছেন। তাদেরকে অপদস্ত করেছেন। বানী কুরাইজাকে হত্যা করা হয়েছে এবং বানী নাজিরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এভাবে আরব দেশ থেকে ইহুদীদেরকে মূলোৎপাটন করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মুশরিক তথা ইহুদী-নাছারা, কাফির, বেদ্বীন-বদদ্বীনদেরকে পবিত্র আরব দেশ থেকে বের করে দাও”। (বুখারী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, দালায়িলুন নবুওওয়াহ)
উল্লেখ্য যে, মুসলমানগণ সব ক্ষেত্রেই বিজয় লাভ করলেন আর মুনাফিকরা পরাজিত হলো। আর মুনাফিকদের আচরণ ছিলো মুসলমানদের বিপরীত। তাই বিজয়ের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বিস্মিত হয়ে বললেন, এরাইতো সেই লোক যারা দৃঢ়ভাবে ক্বসম করে বলতো! আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি। এই সমস্ত লোক আরও বলতো আপনাদেরকে যদি বহিস্কার করা হয় তবে আমরাও আপনাদের সাথে থাকবো। আর আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলে আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করবো। এভাবে মুসলমানদেরকে মুনাফিকরা প্রতারনা মূলক অনেক রকম কথা-বার্তা বলতো। মুনাফিকদের অভ্যাস মুখে যা বলতো বাস্তবে তার বিপরীত করতো। নাউযুবিল্লাহ!
-সাইয়্যিদ আহমদ শাবীব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১১)
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১০)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র উহুদ জিহাদ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৯)
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
০৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৮)
০১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৭)
২৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (৬)
১৮ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৫ মার্চ, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)