সম্মানিত হিজরী তৃতীয় সনে রাজী’র জিহাদ ও মর্মান্তিক ঘটনা (২)
, ০৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন-
حَضْرَتْ أَبُو سُلَيْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَرِيشُ الْمُقْعَدِ ... وَضَالّةٌ مِثْلُ الْجَحِيمِ الْمُوقَدِ
অর্থ: ‘আমি আবূ সুলাইমান, আমি মুকআদ (জনৈক তীর প্রস্তুতকারক)- এর তীরের পালক। আমি দালা বৃক্ষ দ্বারা নির্মিত কামান, যা জাহান্নামের আগুনের মত লেলিহান।
إذَا النّوَاجِي اُفْتُرِشَتْ لَمْ أُرْعَدْ ... وَمُجْنَأٌ مِنْ جِلْدِ ثَوْرٍ أَجْرَدِ وَمُؤْمِنٌ بِمَا عَلَى حَضْرَتْ مُحَمّدٍ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
অর্থ: যখন দ্রুতগামী উটও ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে, তখনও আমার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয় না। আমি গরুর পশমহীন চামড়া দ্বারা প্রস্তুত ঢাল। আর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর অবতীর্ণ সকল বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী।’ তিনি আরও বলেন-
حَضْرَتْ أَبُو سُلَيْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَمِثْلِي رَامِي ... وَكَانَ قَوْمِي مَعْشَرًا كِرَامَا
অর্থ: ‘আমি আবূ সুলাইমান, আমার মত তীরন্দাজ আর কে আছে? আমার গোত্রে আমি অতি মর্যাদাবান ও সম্মানিত।’
হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপনাম ছিল আবূ সুলাইমান। এরপর তিনি শত্রুদের সাথে জিহাদ করতে করতে সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। উনার সঙ্গীদ্বয়ও উনারা সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন।
হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর হুযাইল গোত্রের লোকেরা চাইল, উনাদের মাথা নিয়ে সুলাফা বিনতে সা’দ ইবনে শাহীদের কাছে বিক্রি করবে। সুলাফার দুই পুত্র কাট্টা কাফির সম্মানিত উহুদ জিহাদে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে নিহত হয়েছিল। তাই সে মানত করেছিল, যদি সে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারক হস্তগত করতে পারে, তবে সে উনার মাথা মুবারকের খুলিতে মদ পান করবে। নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু এক ঝাঁক বোলতা বা মৌমাছি হুযাইল গোত্রের ইচ্ছায় বাঁধ সাধলো। তারা হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারক ঘিরে রাখল। দুর্বৃত্তরা বলল, এখন রেখে দাও। সন্ধ্যাবেলা এসব চলে যাবে। তখন আমরা মাথা মুবারক কেটে নিয়ে যাবো। কিন্তু এরই মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেখানে বন্যা নাযিল করে দিলেন। সেই স্রোত হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারক ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুয়া মুবারক করেছিলেন, যেন কোন মুশরিক উনার জিসিম মুবারক স্পর্শ করতে না পারে এবং তিনিও যেন কোনদিন কোন কাফির মুশরিককে স্পর্শ না করেন। তিনি আক্বীদা অর্থাৎ বিশ্বাস করতেন যে, মুশরিকদের দেহ অপবিত্র।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ
অর্থ: “নিশ্চয়ই কাফির মুশরিকরা অপবিত্র বা নাপাক”। (পবিত্র সূরা তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৮)
সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন শুনলেন, বোলতা বা মৌমাছি হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারক হিফাযত করেছে, তখন তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মু’মিন বান্দাদেরকে এভাবেই হিফাযত করেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মানত করেছিলেন, কোন মুশরিক যেন উনার জিসিম অর্থাৎ গায়ে হাত লাগাতে না পারে, আর তিনি নিজেও কোন মুশরিককে জীবনে স্পর্শ করবেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পরও উনাকে তেমনি হিফাযত করেছেন, যেমন তিনি উনাকে জীবদ্দশায় হিফাযত করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
আর হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কঠোর পন্থা অবলম্বন না করে হিকমত মুবারক অবলম্বন করলেন। সে মতে উনারা নিজেদেরকে শত্রুর নিকট হিকমতের সাথে ধরা দিলেন। শত্রুরা উনাদেরকে বন্দী করে পবিত্র মক্কা শরীফের পথে অগ্রসর হলো। উদ্দেশ্য, সেখানে নিয়ে উনাদেরকে তারা বিক্রি করবে। নাউযুবিল্লাহ! জাহরান নামক স্থানে পৌঁছলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি রশি থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিলেন এবং উনার তরবারি মুবারক উঁচিয়ে রুখে দাঁড়ালেন। শত্রুরা খানিক দূরে সরে উনার প্রতি পাথর ছুড়তে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত এভাবেই তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। এই জাহরান নামক স্থানে উনার সম্মানিত কবর মুবারক রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
বাকি হযরত খুবাইব ইবনে ‘আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ও হযরত যায়িদ ইবনে দাসিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তারা পবিত্র মক্কা শরীফে নিতে সক্ষম হলো। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাররার ঘটনা এবং ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহির অপকর্মসমূহ (১)
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৮)
১৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৯)
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১৩ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
০৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত সাবীক জিহাদ
০৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৭)
০৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাসম্মানিত ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার জিহাদ (১৭)
০৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৬)
৩০ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা (১৮)
২৫ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুতার জিহাদ এবং মুসলমানদের বেমেছাল বীরত্ব (৫)
২৩ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বানূ নাযীরের সম্মানিত জিহাদ এবং ইহুদী গোত্রকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করা প্রসঙ্গে (১৭)
১১ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)