জীবনী মুবারক
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম (২)
বিলাদত শরীফ: হিজরত পূর্ব ৬৭ সন বিছাল শরীফ: ২৮ হিজরী (৬৫০ খ্রি:) বয়স মুবারক: ৯৫ বছর
, ০৫ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(গতকালের পর)
খিদমত মুবারকের সার্বক্ষণিক আঞ্জাম দান:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিদায়ের দুই মাস পরে কোন এক প্রত্যুষে হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ডাকেন। খুশিতে উনার চেহারা মুবারক উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশির আতিশয্যে বললেন, হে বারাকাহ! আমি একটি বিস্ময়কর স্বপ্ন মুবারক দেখেছি। আমি দেখলাম, আমার সম্মানিত নূরুল ওয়ারা’ (পেট) মুবারক হতে একটি মহান নূর মুবারক বের হয়ে পাহাড় পর্বত এবং মক্কা শরীফ উনার সমগ্র উপত্যকা আলোকিত করেছেন। তখন আমি বললাম, আপনি কি রেহেম মুবারকে কোন সন্তান ধারণ করেছেন বলে মনে করেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে অন্যরা যেরূপ অসুবিধা অনুভব করে সেরূপ নয়। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম বললেন, তবে সম্ভবতঃ আপনি এমন একজন ভাগ্যবান সন্তান ধারণ করেছেন যিনি অনেক কল্যাণের অধিকারী হবেন।
যতদিন হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিদেশ সফরে ছিলেন, হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি উনার পাশে থেকে সব সময় সান্ত¡না দিয়ে, উনার সাথে কথা-বার্তা বলে এবং বিভিন্ন ঘটনা মুবারক শুনিয়ে উনাকে খুশি করতে চেষ্টা করতেন।
আবরাহা যখন পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতিসাধনে আসলো তখন হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে অন্যান্য সকলের মত হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঘর ছেড়ে পাহাড়ে উঠতে বললেন। তখন হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে পাহাড়ে উঠতে অস্বীকার করলেন, কারণ উনার জানা ছিল যে, আবরাহা পবিত্র মক্কা শরীফে প্রবেশ করতে পারবে না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতম ঘর মুবারকও ভাঙ্গতে পারবে না। পরবর্তীতে তাই হলো। আবরাহা তার হস্তী বাহিনী নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অদূরে সমূলে বিনাশ প্রাপ্ত হলো।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি রাত-দিন একাকার করে হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সার্বক্ষণিক খিদমত মুবারকে নিয়োজিত থাকেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি উনার বিছানা মুবারকের পাশে ঘুমাতাম এবং রাত্রে হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার জুদায়ীর কারণে উনার নিরব কান্না মুবারক শ্রবণ করতাম। কোন কোন সময় উনার নিরব কান্না মুবারক শুনে আমি জাগ্রত হয়ে উঠতাম এবং উনাকে সান্ত¡না ও সাহস দিতাম।
অনেকদিন পর সিরিয়া-গামী ব্যবসায়িক কাফেলার প্রথম দল ফিরে আসল এবং পবিত্র মক্কা শরীফ উনার ব্যবসায়ী পরিবারগুলি তাদেরকে খুশির সাথে সংবর্ধনা প্রদান করলো। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম গোপনে হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহে গমন করলেন হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার খবর নেয়ার জন্য। কিন্তু উনার কোন খবর পাওয়া গেল না। তিনি হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ফিরে আসলেন, কিন্তু তিনি কি দেখেছেন বা কি শুনেছেন এ সম্পর্কে কিছুই বললেন না, কারণ এতে তিনি আরো মর্মাহত হতে পারেন। ক্রমে সমস্ত কাফেলা ফিরে আসলো, কিন্তু হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ফিরে আসলেন না।
পরবর্তীতে যখন পবিত্র মদীনা শরীফ হতে খবর আসল যে, হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মী বা’দা উম্মী আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি যখন এই খবর শুনলাম, আমার সংজ্ঞা বিলুপ্ত হল। আমি জানি না, এ খবর শোনার পর আমি কি কি করেছি। তবে এইটুকু মনে আছে যে, আমি কান্না করতে করতে অতি দ্রুত হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফে গেলাম। আমরা এতদিন যাঁর আগমন অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলাম, যেই মহান সত্ত্বা মুবারক, পবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সুন্দর যুবক, কুরাইশ গোত্রের গর্ব, সেই হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












