সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শাহাদাত ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
, ২৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৪ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৩ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ০৮ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইসলামী ইতিহাসে শাহাদাত শব্দখানা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কেন এ শব্দের এত ব্যবহার? কারা এমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কি তাদের পরিচয়?
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও বড় শত্রু হিসেবে ইহুদী ও মুশরিক এই দুই জাতিকে চিহ্নিত করেছেন। একথা দিবালোকের চেয়েও সুস্পষ্ট যে, ইসলামী ইতিহাসের সমস্ত শোক সংবাদের নেপথ্যেই রয়েছে এই দুই জাতির ষড়যন্ত্র। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহাদাত মুবারকের জন্য এই ইহুদীরা সর্বাংশে দায়ী।
মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি বিনষ্টে ইহুদীরা সর্বদা সচেষ্ট। আমিরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারককে কেন্দ্র করে ইহুদীরা মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বেশ অপতৎপরতা চালায়। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাদের অপতৎপরতা শক্ত হস্তে দমন করেন। এই পরিস্থিতিতে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ইহুদীরা প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ মনে করে। বিধায় তারা খারিজী সম্প্রদায়কে লেলিয়ে দিয়ে উনাকে শহীদ করে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল প্রভাব-প্রতিপত্তি ও আধিপত্যকে ইহুদীরা এবং তাদের নিকট বিক্রি হয়ে যাওয়া মুসলমান নামধারী কতিপয় মুনাফিকরা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বাধাস্বরূপ মনে করে। তাই যেই ভাবা সেই কাজ। উনাকেও শহীদ করতে তারা বারবার অপচেষ্টা চালায়।
বর্ণিত আছে, আহলু বাইত শরীফ উনাদের শত্রু মুনাফিকরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য একে একে ৬ বার মারাত্মক বিষ পান করায়। প্রতিবারই তিনি মারীদ্বী শান মুবারক অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম রওযা শরীফ গিয়ে দোয়া করেন এবং সাথে সাথেই তিনি ছিহহাতী শান মুবারক অর্থাৎ সুস্থতা লাভ করেন। কিন্তু শেষবার যে বিষ পান করানো হয় তা ছিলো অত্যন্ত মারাত্মক বিষ তথা হিরকচূর্ণ।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত মুবারক ছিলেন, তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের সময় পানি মুবারক পান করতেন। তিনি যে কলসী মুবারক থেকে পানি মুবারক পান করতেন সে কলসী মুবারক উনার মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যেন কেউ কিছু ফেলতে বা বিষ মিশ্রিত করতে না পারে। কিন্তু শত্রুরা থেমে থাকেনি; তারা হিরকচূর্ণ বিষ কলসীর মুখে বেঁধে রাখা কাপড়ে মিশিয়ে দিলো।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতিদিনের ন্যায় পানি পান করার জন্য কলসী মুবারক থেকে পাত্রে পানি ঢেলে পান করলেন। সাথে সাথে মারাত্মক বিষক্রিয়া শুরু হলো এবং তিনি মারাত্মক মারীদ্বী শান প্রকাশ করলেন। এবার আর উনার পক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ যাওয়া সম্ভব হলো না। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুঝতে পারলেন যে, উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় নিকটবর্তী। তাই তিনি তাড়াতাড়ি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সংবাদ দিলেন। তিনি আসলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে আমার প্রিয় ভাই! এই খিলাফত মুবারক উনার জন্য আমাদের আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়েছেন। আমিও শহীদ হচ্ছি। কাজেই, এই খিলাফত আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এই খিলাফত থেকে দূরে থাকবেন। খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত বাতিল করে দেয়া হলো। (এ কারণেই হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে তিনি খিলাফত ফিরিয়ে নেননি। )
যখন তিনি একথা বললেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, ‘আমি কি তাহলে পানি পান করে দেখবো?’
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিষেধ করে পেয়ালাটি ধাক্কা দিলেন, ফলে পেয়ালায় অবশিষ্ট বিষমিশ্রিত যে পানি ছিলো, তা যমীনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে সেই বিষের তীব্রতায় যমীন ফেটে চৌচির হয়ে গেলো। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!!!
এত মারাত্মক বিষ; যমীনও বরদাশত করতে পারেনি। উক্ত মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণেই ৪৯ হিজরী সনের পবিত্র ২৮শে ছফর শরীফ ৪৫ বছর ৫ মাস ১৩ দিন বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। দিনটি ছিলো ইয়াওমুল জুমুয়াহ।
বর্ণিত আছে- হযরত সাঈদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি মদীনা শরীফ উনার গভর্নর ছিলেন, তিনি উনার জানাযায় উপস্থিত হন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নামায পড়ানোর জন্য সম্মুখে ঠেলে দিলেন এবং বললেন, যদি ইহা সুন্নত না হতো তবে আমি আপনাকে জানাযা পড়ানোর জন্য সম্মুখে ঠেলে দিতাম না। এতদ্ব্যতীত জানাযায় মদীনা শরীফবাসীর অসংখ্য লোক উপস্থিত ছিলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত। (উসুদুল গাবা)
-আল্লামা মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












