সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ফখরুল আশিক্বীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
, ১৫ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ০২ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত:
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত। উনার প্রতিটি দোয়া বা আরজু কবুল করা হতো তাই উনাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত বলা হয়। তিনি যখন যা দোয়া মুবারক করতেন তখন তাই কবুল হতো। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি একদিন ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে এই মর্মে দোয়া করতে অনুরোধ করলেন: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাকে এত অর্থ সম্পদ দান করুন, যাতে সে অনেকবার হজ্জ করতে পারে। তিনি দোয়া করলেন: আয় আল্লাহ পাক! এই ব্যক্তিকে এত অর্থ দিন, সে যেন পঞ্চাশবার হজ্জ করতে পারে। সে মতে লোকটি পূর্ণ পঞ্চাশবার হজ্জ করে। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৫)
একজন রাবী বর্ণনা করেন, একদা আমরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে পবিত্র হজ্জ উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে আমাদেরকে এক জায়গায় শুষ্ক খেজুর গাছের কাছে অবস্থান করতে হলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি চুপিচুপি কিছু পড়লেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। হঠাৎ তিনি শুষ্ক খেজুর গাছগুলোর দিকে মুখ করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের মধ্যে আমাদের জন্যে যে রিযিক গচ্ছিত রেখেছেন, তা দিয়ে আমাদের মেহমানদারী করো। অতঃপর আমি দেখলাম গাছগুলো উনার দিকে ন্যুয়ে পড়লো। টাটকা খেজুরগুচ্ছ ঝুলন্ত অবস্থায়। তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে আসো এবং ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে খাও। আমি উনার আদেশ পালন করতঃ খেজুর খেলাম। এমন মিষ্টি খেজুর আমরা পূর্বে কখনো খাইনি। সেখানে জনৈক বেদুঈনও উপস্থিত ছিল। সে বললো, আজকের মতো যাদু আমি কখনো দেখিনি। নাঊযুবিল্লাহ!
ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ওয়ারিছ। আমরা যাদুকর নই। আমরা কেবল দোয়া মুবারক করি। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কবুল করে নেন। তুমি চাইলে আমার মুবারক দোয়ায় তোমার আকৃতি বদলে যেতে পারে এবং তুমি একটা কুকুরের আকৃতি ধারণ করতে পার। বেদুঈন ছিল নিরেট মূর্খ। তাই বললো, হ্যাঁ, এখনি দোয়া মুবারক করুন। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি দোয়া মুবারক করলেন, সাথে সাথে সে কুকুর হয়ে গেল এবং নিজ গৃহের দিকে পালিয়ে গেল। তিনি বর্ণনাকারীকে বললেন, এই কুকুরের পিছনে পিছনে যাও। বর্ণনাকারী বলেন- আমি তার পিছনে পিছনে চললাম। সে গৃহে গিয়ে আপন সন্তান ও পরিবারবর্গের সামনে লেজ নাড়তে লাগলো। তারা তাকে লাঠি মেরে তাড়িয়ে দিলো। আমি ফিরে এসে ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে ঘটনা শুনালাম। ইতোমধ্যে সেও (কুকুর) এসে গেল এবং ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সামনে মাটিতে গড়াগড়ি করতে লাগলো। তার চোখ থেকে পানি পড়ছিল। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি তার প্রতি দয়ালু হয়ে দোয়া মুবারক করলেন। সে আবার মানবাকৃতি ধারণ করলো। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি বললেন, হে বেদুঈন! আমি যা বলেছিলাম তা বিশ্বাস করো কি-না? সে বললো, হ্যাঁ। একবার নয়, হাজারবার বিশ্বাস করি। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫৪)
অন্য একজন রাবী বর্ণনা করেন, আমার এক বন্ধুকে খলীফা মনসুর আটক করেছিলো। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে পবিত্র হজ্জ উনার মৌসুমে আরাফাতের ময়দানে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমার বন্ধুর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি বললাম- হুযূর! সে এখনো আটকাবস্থায় আছে। ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মুবারক দোয়ার জন্য হাত উঠালেন। এক ঘণ্টা পরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমার বন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বর্ণনাকারী তিনি বললেন, পবিত্র হজ্জ সমাপনান্তে ফিরে এসে আমি আমার মুক্ত বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কখন মুক্তি পেলে? সে বললো- আমাকে আরাফার দিন, আছরের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত-২৫২)
তিনি ছহিবে কুন ফাইয়াকুন অর্থাৎ কুন ফাইয়াকুন উনার অধিকারী:
ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ছহিবে কুন ফাইয়াকুন উনার অধিকারী। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অতীব নৈকট্য ও তায়াল্লুকপ্রাপ্ত এমন অনেক ওলীআল্লাহ রয়েছেন উনারা যা হতে বলেন- সেটাই হয়।
সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাকীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি সেই ‘কুন ফাইয়াকুন’ গুণের অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে কুতুবুল মাশায়িখ, আশিকে রসূল, আল্লামা মুল্লা আব্দুর রহমান জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ “শাওয়াহিদুন্ নুবুওওয়াত”-এ উল্লেখ করেন- একজন রাবী তিনি বলেন, একদিন পবিত্র মক্কা মোয়াযযমা শরীফ-এ আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে গমন করছিলাম। আমরা ঘটনাচক্রে এক মহিলার পাশ দিয়ে গেলাম। তার সামনে একটি মৃত গাভী ছিল। সে তার বাচ্চাদেরসহ সেই গাভীটির জন্য কান্নাকাটি করছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহিলা! তুমি কি চাও যে, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি গাভীটিকে জীবিত করে দিন? মহিলা বললো, আপনি এমনভাবে পরিহাস করছেন কেন? তিনি বললেন, আমি উপহাস করছি না। আর আমরা কখনো কারো সাথে উপহাস করি না।
অতঃপর তিনি দোয়া মুবারক করলেন। গাভীর মাথা ও পা স্পর্শ করলেন। তারপর গাভীকে ডাক দিলেন। সে গাভীটি তখন তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথে হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি মানুষের মধ্যে মিশে গেলেন। মহিলা উনাকে চিনতে পারলো না। সুবহানাল্লাহ!
আরো বর্ণিত আছে যে, জনৈক রাবী তিনি বলেন, একদিন আমি অনেক মানুষের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। নছীহত মুবারক করার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম উনাকে আদেশ মুবারক করলেন চারটি পাখি ধরুন। অতঃপর এগুলোকে নিজের দিকে ডাকুন। তখন এসব পাখি কি একই প্রজাতির ছিল, না বিভিন্ন প্রজাতির? তোমরা চাইলে আমি তোমাদেরকে তেমনি করে দেখাবো। আমরা বললাম, হ্যাঁ দেখান। তিনি বলেন, হে ময়ূর এদিকে এসো। তৎক্ষণাত ময়ূর এসে হাযির হলো। অতঃপর বলেন, হে কাক, এদিকে এসো। অমনি একটি কাক এসে গেল। তিনি বলেন, হে বাজ, এদিকে এসো। অমনি বাজ এসে গেল। তিনি বলেন, হে কবুতর, এদিকে এসো। তৎক্ষণাত কবুতর এসে গেল। পাখি চতুষ্টয় এসে গেলে তিনি বলেন, এদেরকে যবেহ করে খ-বিখ- করো এবং একটির গোশত অন্যটির মধ্যে মিশ্রিত করে দাও। কিন্তু প্রত্যেকটির শির সযতেœ রাখবে।
এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি ময়ূরের শির ধরে বললেন, হে ময়ূর! এ কথা বলার সাথে সাথে আমরা দেখলাম যে, তার অস্থি, পাখা এবং গোশত এসে শিরের সাথে সংযুক্ত হয়ে গেছে এবং সে একটি আস্ত ময়ূরে পরিণত হয়েছে। অনুরূপভাবে অপর তিন পাখির বেলায়ও তিনি তাই করলেন এবং তারাও জীবিত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












