সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩১)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২৩ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩০ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১২ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইলমে তাছাউফ
পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা হতে বিদায় ও স্বতন্ত্র জীবন-যাপন শুরু:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, কুতুবুল বাররি ওয়াল বাহর, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মহান শায়েখের নিকট থেকে বিদায় গ্রহণ করে স্বতন্ত্র জীবন-যাপন শুরু করলেন। সফর তথা দেশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে নতুন জীবনের সূচনা হয়। তিনি উনার মুবারক জীবনের সোনালী দিনগুলো স্বীয় পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খিদমত মুবারকে কাটিয়ে যখন প্রৌঢ়ত্বের দ্বারে পৌঁছেন, তখন তিনি স্বতন্ত্র জীবন-যাপনের দায়িত্ব পেলেন। প্রথমে তিনি ‘আউশ’ নামক স্থানে হাজির হলেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থান মুবারক গ্রহণ করে ইস্পাহানে চলে গেলেন। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে প্রিয় মুরীদ হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সাথে নিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
সুলত্বানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই সফরের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমি আমার মহান মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে পবিত্র কা’বা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরে ছিলাম। একদিন ফজরের নামাযের পর পথ চলা শুরু হলো। পথ চলতে চলতে একটা শহরে পৌঁছলাম। এখানে এক বুযূর্গের সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি উনার খানকা শরীফ-এ অবস্থান করছিলেন। খানকা শরীফ বলতে একটা গুহা; যা ছিল স্বল্প পরিসর। তার মধ্যে যেন একটা শুকনা কাঠের খ- দাঁড়িয়ে আছে। উনার চোখ মুবারক খোলা কিন্তু দৃষ্টি আরশে আযীমে নিবদ্ধ। একমাস পর্যন্ত আমরা উনার নিকট অবস্থান করলাম। এ সময়ের মধ্যে তিনি মাত্র একবার চেতনার জগতে ফিরেছিলেন।
সে সময় আমরা দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জাওয়াব দিয়ে বললেন, হে বন্ধুবর! আমার এ অবস্থা দেখে কি আপনাদের খুব দুঃখ হলো? কিন্তু আপনারা জানেন কি? আপনাদের এ বিষণœতা আপনাদেরকে একটা সৌভাগ্য এনে দিয়েছে। কেননা, সূফীগণ বলে থাকেন- যারা দরবেশদের খিদমত করে তারা দরবারে ইলাহীতে গৃহীত (মকবুল) হয়ে যায়।
তিনি আমাদেরকে বসতে বললেন। আমরা বসলাম। তিনি আমাদের মনের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। আর বললেন, “আমি শায়েখ হযরত আসলাম তুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বংশধর। ত্রিশ বছর যাবৎ আমি এ অবস্থায় আছি। আমি রাত ও দিনের কোনো খবর রাখি না। মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধু আপনাদের জন্যই আজ আমাকে চেতনার জগতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারণ দ্বিতীয়বার আপনাদের এখানে আসতে কষ্ট হবে। তাই আমাকে স্বাভাবিক অবস্থায় এনে আপনাদের কৌতূহল নিবারণ করা হলো।
আমি কিছু বলছি, শুনুন। এ ফকিরের কথা স্মরণ রাখবেন। আপনারা তরীক্বতের পথে চলছেন। মনে রাখবেন, নফছের খাহেশের অনুকূলে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে দুনিয়াদার হয়ে যাবেন না। সাধারণ মানুষ তথা সৃষ্টিকুলের সংস্পর্শে যাবেন না। তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না। যদি কিছু হাতে আসে তাহলে তা দান করে দিবেন। তার মধ্য থেকে কিছু বাঁচিয়ে রাখবেন না। কেননা জমা করা কৃপণের কাজ। কৃপণ ব্যক্তি কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু হতে পারে না। এসব উপদেশ শুনানোর পর ওই বুযূর্গ ব্যক্তি পুনরায় মহান ধ্যানে নিমগ্ন হলেন আর আমরা উনার অবস্থান স্থল ত্যাগ করে সামনে অগ্রসর হলাম। (খাজিনাতুল আছফিয়া ১ম খ- পৃষ্ঠা ২৫৯, ফাওয়াদেুস সালেকীন- পৃষ্ঠা ১৪ ও ১৫, খাজা গরীবে নেওয়াজ-১০৫)
পবিত্র হারামাইন শরীফাইন যিয়ারত:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রিয় মুরীদ সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সাথে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছেন।
তার পূর্বে আরো দু’বার তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে এসেছিলেন। প্রথমবার উনার মহান শায়েখ শায়খুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে।
দ্বিতীয়বার উনার মামা সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে। তখন তিনি ছিলেন সম্মানিত তরীক্বত উনার শিক্ষানবিশ, মুরীদ। আর আজ তিনি পরিপূর্ণ কামিল ওলী। সম্মানিত চীশতীয়া তরীক্বার বিশাল দায়িত্বভার উনার উপর অর্পিত।
বারবার মনে উদিত হচ্ছে যে, উনার দায়িত্ব অপরিসীম। তিনি সমস্ত পথঘাট, বস্তু প্রাণী এবং পবিত্র মাটিতে শায়িত ও জীবন্ত সকল ওলীগণের প্রতি তিনি আদব ইহতিরাম, সম্মান প্রদর্শন করতঃ পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: ইলমে তাছাউফ উনার দৃষ্টিতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলমে তাছাউফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর
২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাযকিয়াহ বা ইছলাহ অর্জন করা ব্যতীত কোনো বান্দার পক্ষে কামিয়াবী হাছিল করা সম্ভব নয়
১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ বা শায়েখ হক্ব বা নাহক্ব তা যাচাই-বাছাই করার পর বাইয়াত হতে হবে
০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তাসাউফ চর্চা ছাড়া দ্বীন ইসলাম কায়েম সম্ভব না (২)
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পিতা-মাতা উনাদের এবং স্ত্রীর জন্য স্বামীর বাধা গ্রহণযোগ্য নয়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)