সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার বিচার ব্যবস্থা, ইসলামি অর্থনীতি এবং কৃষিতে অবদান মুবারক
এডমিন, ১৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৩ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০২ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস

আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার ক্রমধারায় একটি আলাদা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সম্মানিত খিলাফত উনার প্রত্যেক অঞ্চলে তিনি বিচারক বা কাযী নিযুক্ত করেছিলেন, কাযীর অধীনে বিভিন্ন শহরে বিচারক নিযুক্ত হতেন। সকলেই সমান বিচার পেতেন। এভাবে তিনি আইনের দৃষ্টিতে সমতা স্থাপন করেছিলেন। জনসাধারণকে সম্মানিত ইসলামি আইন-কানুন সম্পর্কে ওয়াকিফহাল করার জন্য তিনি ফতওয়া বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।
সম্মানিত খিলাফত ব্যবস্থায় অমুসলমানরাও পরিপূর্ণ স্বাধীন আইনি অধিকার ভোগ করতো। এতে করে বিধর্মীরাও মুসলমানগণ উনাদের ইনসাফপূর্ণ বিচারিক ব্যবস্থায় সুবিচার পেয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে সম্মানিত হয়েছিলো।
সম্মানিত খিলাফত মুবারকে অর্থনৈতিক অসামান্য অগ্রগতির মূলেও মূলত তিনিই ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং আর্থিক উন্নতির জন্য বিভাগ সৃষ্টি করেন। সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার অর্থনৈতিক মূল ভিত্তি ছিলেন সম্মানিত যাকাত, খারাজ, জিযিয়া, গণীমাত, ফাই ও উশর। সম্মানিত খিলাফত উনার সমস্ত অর্থ সংগৃহীত হয়ে তা সম্মানিত বাইতুল মাল উনার মূল কোষাগারে জমা হতো এবং সেখান থেকে বন্টন হতো। সম্মানিত বাইতুল মাল থেকে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসারে ব্যয় হতো।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি ভূমি জরিপ করে চাষযোগ্য ভূমির সংস্কার করেন। তিনি ভূমির সুষ্ঠু বণ্টন ও মালিকানা নির্ধারণ করে দেন। এতে কৃষি ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়। তিনি আদমশুমারি করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। উনার আদমশুমারি পৃথিবীর ইতিহাসে রাজস্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ আদমশুমারি। সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বিভিন্ন খাতে খরচ করার পর যে অর্থ থাকত তা দুঃস্থ লোকজনের মাঝে বিতরণ করা হতো। এরজন্যও আদমশুমারি করা হয়। ঐতিহাসিকরা বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার আদমশুমারী পৃথিবীর ইতিহাসে তুলনাবিহীন।
কৃষি কার্যের ব্যাঘাত ঘটবে এবং সেনাবাহিনী সামরিক দক্ষতা হারাবে এজন্য তিনি জায়গীর প্রথা বাতিল করেন। বিজিত অঞ্চলের জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। কৃষির উন্নয়ন, জমির উপযুক্ত ব্যবহার, পতিত জমি চাষের ব্যবস্থা করে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনেন। সেচের জন্য খাল খনন ও সরকারি সহায়তা দান করে কৃষি কাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা হয়। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি অগ্রিম কৃষিঋণ দেয়ার পদ্ধতি চালু করেন। কৃষকের ওপর করের বোঝা কমিয়ে দেন। বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত করার জন্য আমদানি-রপ্তানি কর লাঘব করে দেন। তিনি বাঁধ-সংস্কার ও খাল খনন করে কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নয়ন সাধন করেন।
অক্ষমদের জন্য তিনি খাদ্য-বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ, আবাদ, সেচ ব্যবস্থা, গৃহনির্মাণ খাল, সেতু, দুর্গ, হাসপাতাল, অসংখ্য মাদ্রাসা, মসজিদ ইত্যাদি নির্মাণ করেন। এসব কাজে তিনি অভূতপূর্ব কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
মূলত সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত মুবারককাল ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের সমৃদ্ধশালী ও গৌরবান্বিত একটি যুগ।