সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২৫)
, ২২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৩ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০২ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৯ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
তাদের আরেকটি মিথ্যাচার:
তাদের আরেকটি মিথ্যাচার হলো, জাহিরুর রিওয়াইয়াহ বা হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাকি এই যে-
لاعبرة لاختلاف المطالع
অর্থ: নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত: হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ৬টি কিতাবে উল্লেখিত মাসয়ালা-মাসায়িলকে জাহিরুর রিওয়াইয়াহ বলা হয়। আর উক্ত ৬ কিতাবের কোথাও এই ধরণের ইবারত উল্লেখ নাই যে-
لاعبرة لاختلاف المطالع
অর্থ: নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়। নাউযুবিল্লাহ!
উক্ত ৬টি কিতাব হলো:
(১) কিতাবুল আছল। যাকে অন্য নামে আল মাবসূত বলা হয়।
(২) আল জামিউছ ছগীর।
(৩) আল জামিউল কাবীর।
(৪) আস সিয়ারুছ ছগীর।
(৫) আস সিয়ারুল কাবীর।
(৬) আয যিয়াদাত।
কাজেই জাহিরুর রিওয়াইয়াহ নামে “নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়” এর দ্বারা সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরুর দাবি করা, এটা তাদের মিথ্যা প্রচারণা করা এবং সম্মানিত হানাফী মাযহাবের বিষয়ে তাদের জঘন্য অপবাদ।
সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার কোন কোন কিতাবে জাহিরুর রিওয়াইয়াহ নামে,
لاعبرة لاختلاف المطالع
অর্থ: নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়। এ কথা উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু উক্ত কথার দ্বারা উনারা কেউই একথা উদ্দেশ্য করেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে। যা নিকৃষ্ট বিদয়াতী দাজ্জালে কায্যাবরা মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে।
لاعبرة لاختلاف المطالع (নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়) এর অর্থ ব্যাখ্যা করে হযরত উছমান ইবনে আলী ইবনে মিহজান আল বারিয়ী ইমাম ফখরুদ্দীন যাইলায়ী আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ: ৭৪৩) তিনি উনার তাবয়ীনুল হাক্বায়িক কিতাব উনার মধ্যে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে-
قَالَ رَحِمَهُ اللَّهُ (وَلَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ) وَقِيلَ يُعْتَبَرُ وَمَعْنَاهُ أَنَّهُ إذَا رَأَى الْهِلَالَ أَهْلُ بَلَدٍ وَلَمْ يَرَهُ أَهْلُ بَلْدَةٍ أُخْرَى يَجِبُ أَنْ يَصُومُوا بِرُؤْيَةِ أُولَئِكَ كَيْفَمَا كَانَ عَلَى قَوْلِ مَنْ قَالَ لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ وَعَلَى قَوْلِ مَنْ اعْتَبَرَهُ يَنْظُرُ فَإِنْ كَانَ بَيْنَهُمَا تَقَارُبٌ بِحَيْثُ لَا تَخْتَلِفُ الْمَطَالِعُ يَجِبُ وَإِنْ كَانَ بِحَيْثُ تَخْتَلِفُ لَا يَجِبُ وَأَكْثَرُ الْمَشَايِخِ عَلَى أَنَّهُ لَا يُعْتَبَرُ-
অর্থ: ছহিবু তাবয়ীনুল হাক্বায়িক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, (হযরত ইমাম আবুল বারাকাত আন নাসাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়) এবং কেউ কেউ বলেন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য। যারা বলেছেন-
لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ
অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়, উনাদের উক্ত কথার অর্থ হলো, এক অঞ্চলের অধিবাসীগণ নতুন চাঁদ দেখলো, অন্য অঞ্চলের অধিবাসীগণ নতুন চাঁদ দেখতে পায় নাই। তাহলে যে অঞ্চলের লোকেরা চাঁদ দেখেছে উনাদের দেখার দ্বারা অন্য অঞ্চলের লোকদের উপর পবিত্র রোযা রাখা ফরয হয়ে যাবে। (নিকটবর্তী অঞ্চলের ক্ষেত্রে এটা বলা হয়েছে)। আর যারা বলেছেন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য। উনাদের কথার অর্থ হলো- দেখতে হবে যে, যদি পাশাপাশি দুটি অঞ্চল নিকটবর্তী হয় এবং একই উদয়স্থলের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে রোযা রাখা ওয়াজিব, আর যদি ভিন্ন মাতলা’ভুক্ত অঞ্চল হয় তাহলে তাদের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব হবে না।
(অর্থাৎ যারা বলেছেন لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং যারা বলেছেন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য দুই পক্ষের কথায় কোন মতবিরোধ নাই। পার্থক্য হলো, প্রথম পক্ষের কথা হলো একই মাত্বলা’র অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলসমূহের ব্যাপারে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। আর দ্বিতীয় পক্ষের কথা হলো, ভিন্ন মাত্বলা’র অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলসমূহের ব্যাপারে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য)।
তবে অধিকাংশ মাশায়িখগণ উনারা যে বাক্য ব্যবহার করেছেন, তা হলো لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












