ঘটনা থেকে শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী বা হারাম কাজ থেকে খালিছ তওবা করে উনার যিকির ও ইবাদতে খালিছভাবে মনোনিবেশ করলে কুদরতী রিযিক লাভ করা যায়
, ২৯ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১০ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯, মে, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
প্রখ্যাত আলিম ও বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ হযরত ফরীদুদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন হযরত শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়েখ নিযামী ও হযরত মোল্লা জামী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সেই মহান ব্যক্তিত্ব হযরত ফরীদুদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও বহুল পরিচিত তাযকিরাতুল আউলিয়া কিতাবে। এছাড়াও আরো অনেকের দ্বারা প্রণিত তাযকিরাতুল আউলিয়া নামক কিতাবে বর্ণিত- হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ উনার কথা, যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে হাবীব নামে অভিহিত হয়েছিলেন। উনার জীবনীতেও রয়েছে, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইবাদতে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা।
তিনি প্রথম জীবনে সুদের ব্যবসায় জড়িত বিরাট ধনী ব্যক্তি ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে ঘটনাক্রমে তিনি তওবা করে সুদের ব্যবসা ছেড়ে দিলেন এবং প্রত্যেককে তার পাওনা ফিরিয়ে দিলেন, যার ফলে তিনি একরূপ নিঃস্ব হয়ে পড়লেন। কিন্তু সে অবস্থায়ও তিনি খাছভাবে ইবাদতে মনোযোগী হলেন এবং এজন্য তিনি ফোরাত নদীর তীরে একটি ইবাদতখানা তৈরী করলেন। দিনের শুরুতে তিনি হাজির হতেন হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মজলিসে। সেখানে দর্স নিয়ে অতঃপর ইবাদতখানায় গিয়ে সারাদিন ইবাদত করে সন্ধ্যায় বাড়ীমুখী হতেন।
এভাবে কিছুদিন গত হলে, উনার আহলিয়া (স্ত্রী) একদিন খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ইত্যাদি ফুরিয়ে যাওয়ার কথা উনাকে জানালেন। সে কথা শুনে হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাব দিলেন যে, তিনি এক মহান মালিক উনার কাজ করছেন এবং উনার মালিক সময়মত উনাকে মজুরী দিবেন। এভাবে আরো কিছুদিন অতিবাহিত হলে, উনার আহলিয়া (স্ত্রী) পুনরায় আরো ব্যাকুলভাবে উনার অতি জরুরী প্রয়োজনের কথা জানালেন। অবস্থার প্রেক্ষিতে হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল যে, উনার মালিক দশদিন পর পর মজুরী দেন। আর এ কথা বলেই তিনি পুনরায় ইবাদতগাহে গিয়ে ইবাদতে লিপ্ত হলেন। এভাবে যেদিন দশদিন পুরো হবে সেদিন সকাল উনার আহলিয়া (স্ত্রী) বললেন, আজকে তো দশদিন হয়ে যাবে, আজকে মজুরী পাওয়ার কথা, আপনি এই ব্যাগ নিয়ে যান, আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসবেন। আহলিয়ার কথা শুনে তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ব্যাগটি হাতে তুলে নিলেন। কারণ তিনি নিজে ভালভাবে জানেন যে, তিনি কোন কাজ করেননা। অতঃপর তিনি অন্যান্য দিনের মতই স্বাভাবিক তা’লীম গ্রহণ করে ইবাদতখানায় গিয়ে যথারীতি ইবাদতে লিপ্ত হলেন। এরপর যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো, তিনি বাড়ীর দিকে রওনা করলেন এবং পথিমধ্যে চিন্তা করতে লাগলেন, আহলিয়ার নিকট কি জবাব দিবেন। বিশেষ করে দূর থেকে যদি উনার আহলিয়া দেখেন খালি ব্যাগ, তাহলে কেমন হবে। এ কথা ভেবে তিনি প্রথম অবস্থাটা কাটিয়ে নেয়ার জন্য ব্যাগের ভিতর কিছু বালি ভরে নিলেন।
এদিকে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে যুবকের ছূরতে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনারা এক বস্তা আটা, একটি যবেহ করা ছাগল, পাত্রভরা ঘি ও মধু এবং তিনশত দিরহাম থলে নিয়ে হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরজায় আঘাত করে উনার আহলিয়াকে বললেন, আপনার আহাল বা স্বামীর যিনি মালিক তিনি আপনার আহালের (স্বামীর) মজুরী পাঠিয়েছেন। এবং তিনি আরো জানিয়েছেন, আপনার আহাল (স্বামী) সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে আসলে উনাকে বলতে যে, তিনি কাজে যতই উন্নতি করবেন, উনার পারিশ্রমিক ততই বাড়িয়ে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
অপরদিকে সন্ধ্যায় হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন ইতস্ততঃ মনে বালি ভর্তি ব্যাগ হাতে বাড়ী ফিরছিলেন তখন দূর থেকে নানা প্রকার খাদ্য-দ্রব্যের সুগন্ধে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং এভাবে আশ্চর্যান্বিত হয়ে তিনি যখন ঘরে প্রবেশ করলেন তখন উনার আহলিয়া (স্ত্রী) উনাকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন এবং ঘরে প্রবেশ করলে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাগে কি রয়েছে? আহলিয়ার (স্ত্রীর) কথা শুনে হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ থেকে আপসে আপ অর্থাৎ উনার অজান্তেই বের হয়ে গেল, ‘আটা’। আর মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে দেখা গেল, ব্যাগের বালি সত্যিই আটা হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আহলিয়া (স্ত্রী) হাসিমুখে সে আটা নিলেন এবং উনাকে বললেন, আপনি যার চাকরী করছেন, তিনি বড়ই মেহেরবান। তিনি দয়া করে এসব খাদ্য দ্রব্যাদি এবং টাকা-পয়সা পাঠিয়ে দিয়েছেন। এবং সেইসাথে আরো জানিয়েছেন যে, আপনি কাজে যত ভাল করবেন, আপনার পারিশ্রমিক ততই বাড়িয়ে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত হাবীব আযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথা শুনে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ শুকরিয়া আদায় করলেন এবং আরো অধিকভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল হলেন। আর তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে উনাকে কুদরতী রিযিক দ্বারা মদদ করেছেন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও ফিতনা-ফাসাদের মূল
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে মুসলমান যে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর নশর হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












