জীবনী মুবারক
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
বিলাদত শরীফ: ৫৬৬ খৃ: বিছাল শরীফ: ৩২ হিজরী (৬৫৩ খৃ:) বয়স মুবারক: ৮৮ বছর।
, ২২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৫ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বদরের জিহাদে:
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। যখন হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বদরের জিহাদে বন্দী হলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম! আপনি আপনার নিজের, আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র আকিল ও নওফল এবং আপনার বন্ধু-গোত্রের উতবার মুক্তিপণ আদায় করুন, কারণ আপনি বিত্তশীল লোক। ” হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি অন্তরে মুসলমান ছিলাম, কিন্তু লোকেরা আমাকে যুদ্ধে নামতে বাধ্য করেছে। ” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্যক অবগত আছেন। আপনি যা বলছেন যদি তা সত্য হয়, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে পুরষ্কৃত করবেন। কিন্তু আমরা আপনার বাহ্যিক অবস্থার উপর বিচার করবো। তবে যদি উল্লেখিত ব্যক্তিদের মুক্তিপণ না দেন, আপনার মুক্তিপণ দিয়েই মুক্ত হোন। ”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মুক্তিপণ হিসাবে ২০ উকিয়া স্বর্ণ ধার্য্য করেন। হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন, “আমার জন্য মুক্তিপণ রহিত করুন। ” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “না; ইহা এমন এক জিনিষ যা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে প্রদান করেছেন। ” হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন, “আমার যে কোন সম্পদ নেই। ” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনার সেই সম্পদ কোথায়, যা আপনি মক্কা শরীফ হতে রওয়ানা হওয়ার সময় উম্মুল ফজল বিনতে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকট রেখে এসেছিলেন, এবং সেই সময় আপনারা দু’জন ছাড়া আর কেউ আপনাদের সাথে ছিলেন না, তখন আপনি বলেছিলেন, আমি এই ছফরে যদি মারা যাই, তবে ফজলের জন্য এই অংশ এবং আবদুল্লাহর জন্য এই অংশ?”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথায় বিস্মিত হয়ে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন, “সেই মহান সত্ত্বা উনার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! এই ঘটনা আমি এবং উম্মুল ফজল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না এবং আমি জানি যে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ” (দালায়েল, আবু নায়ীম)
তিনি তৎক্ষণাৎ কালিমা শরীফ পাঠ করে আনুষ্ঠানিক ইসলাম কবুল করলেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান ও হিজরত:
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার একটা দীর্ঘ সময় পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান এবং প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের পশ্চাতে এক বিশেষ কারণ ছিলো। তিনি সবসময় মক্কা শরীফ থেকে কাফিরদের গতিবিধি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করতেন। তাছাড়া মক্কা শরীফে যেসব মুসলমান তখনও অবস্থান করছিলেন, তিনি ছিলেন উনাদের ভরসা স্থল। এ কারণে একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হিজরত মুবারকের অনুমতি চাইলে তিনি উনাকে এই বলে বিরত রাখেন যে, “আপনার মক্কা শরীফে অবস্থান করা শ্রেয়। যেভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার উপর নুবুওওয়াত সমাপ্ত করেছেন, তেমনি আপনার উপর হিজরত সমাপ্ত করবেন। ”
পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি হিজরতের অনুমতি লাভ করেন। স্বপরিবারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে হাজির হয়ে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং স্থায়ীভাবে পবিত্র মদীনা শরীফে বসবাস শুরু করেন।
বিছাল শরীফ:
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি হিজরী ৩২ সনে (৬৫৩ খৃ:) বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন। এই সময় উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৮৮ বছর। তৃতীয় খলীফা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কবরে নেমে উনাকে সমাহিত করেন। পবিত্র মদীনা শরীফে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে উনাকে দাফন করা হয়। তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর ৩২ বছর এবং ইসলামপূর্ব যুগে ৫৬ বছর জীবন লাভ করেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৭)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (১)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (১)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত তিন যাত পাক উনাদেরকে মুহব্বত করা সমস্ত মাখলূক্বাতের জন্য ফরয
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












