সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ১৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আমার যাওজুল মুকাররাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “এ যিকির আলমে আরওয়াহ (রূহের জগতে) সকল ইনসানের জন্য নির্দ্ধারিত ছিলো। এটাই ওই জগতের একমাত্র ইবাদত হিসেবে নির্দ্ধারিত রয়েছে। এ ইবাদতের উপর নির্ভর করেই বান্দাগণ দুনিয়ায় নিজ মর্যাদা-মর্তবা লাভ করে জন্ম নেয়। কেউ ওলীআল্লাহ উনাদের ঘরে, কেউ আলিমের, কেউ জাহিদের ঘরে, কেউ মুমিনের ঘরে, কেউ কাফির বেদ্বীন-বদ্বীনের ঘরে। আর ওই জগতের ইবাদত-বন্দেগীর উপর নির্ভর করেই বান্দাগণ শারীরিক সুস্থতা, অসুস্থতা, অন্ধ, কানা, খোঁড়া ও বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়। কেননা ওই জগতে ইবাদত-বন্দেগীর বিনিময়ে যা প্রাপ্তি ঘটে তাতে সে দুনিয়ায় নিজ মর্যাদা বা স্তর লাভ করে। আলমে আরওয়াহ বা রূহের জগতের কর্মফল দুনিয়ায় লাভ হওয়ার পর সে নিষ্পাপ হয়ে জন্ম নেয়।” আমি আমার স্বামীর এসব জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে মোহিত হয়ে পড়েছিলাম। যে সব তথ্য আমার জানা ছিলো না তাও জানতে পেরে যারপর নেই আনন্দিত হলাম।
এ মাসটি ছিলো আমার সন্তান রেহেম শরীফে অবস্থানের চতুর্থ মাস। এভাবেই একটা মহা আনন্দের মধ্যে আমার সুযোগ্য সন্তান উনার পবিত্র যিকির শুনে শুনে আমার মধ্যেও যযবা ও হালের সৃষ্টি হতো। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম। অবশ্য আমি নিজেও ওই যিকিরের সাথে সাথে যিকির করতাম। এ সোনালী ও স্বর্গীয় আবেশে বিমোহিত দিনগুলো আস্তে আস্তে শেষ হতে হতে আরও ছয়টি মাস অতিবাহিত হয়ে পবিত্র রজব মাস আগমন করলো। যে মাস সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “رجب شهر الله” অর্থাৎ “পবিত্র রজব মাস হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মাস।” এ পবিত্র রজব মাসেরই চৌদ্দ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ রাতে অবসানে দিনের শুরুতে আমার মুবারক সন্তান দুনিয়ার যমীনে আগমন করেন। আলহামদুলিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে আমরা আমাদের সন্তানের নাম মুবারক ‘মুঈনুদ্দীন’ এবং ডাক নাম ‘হাসান’ রাখলাম। আমরা উনাকে আদর করে ‘হাসান’ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেই সবসময় ডাকতাম।
মুবারক লক্বব বা উপাধিসমূহ:
সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য অগণিত লক্বব মুবারক রয়েছে। এক কথায় তিনি ‘নবী-রসূল’ ব্যতীত যত লক্বব রয়েছে সমস্ত লক্বব মুবারকেরই অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ তিনি ছিলেন সকল ছিফত বা গুণ মুবারকের অধিকারী। তন্মধ্যে আমরা কয়েকটি লক্বব মুবারক আলোচ্য নিবন্ধে উল্লেখ করছি।
১। سلطان الـهند (সুলতানুল হিন্দ) অর্থাৎ পাক ভারত উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক বাদশাহ।
২। سيد العابدين (সাইয়্যিদুল আবিদীন) অর্থাৎ ইবাদতকারীগণের সাইয়্যিদ।
৩। تاج الـمقربين والـمهققين (তাজুল মুকাররাবীন ওয়াল মুহাক্কিকীন) অর্থাৎ মুহাক্কিক্ব ও নৈকট্য হাছিলকারীগণের মুকুট।
৪। برهان الواصلين (বুরহানুল ওয়াছিলীন) অর্থাৎ মুবারক দীদার বা জিয়ারত লাভকারীগণের দলীল।
৫। صاحب اسرار(ছহিবে আসরার) অর্থাৎ আসরার বা গুপ্তভেদের অধিকারী বা রহস্যের ভা-ার।
৬। امام الشريعة والطريقة (ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত) অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত এবং সম্মানিত ত্বরীকত উনার ইমাম।
৭। معين الـملة والدين (মুঈনুল মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন) অর্থাৎ সম্মানিত মিল্লাত এবং সম্মানিত দ্বীন উনার সাহায্যকারী বা সহায়ক।
৮। سلطان العارفين (সুলতানুল আরিফীন) অর্থাৎ আরিফ তথ ওলীআল্লাহগণ উনাদের সুলতান বা বাদশাহ।
৯। قدوة الاولياء (কুদওয়াতুল আউলিয়া) অর্থাৎ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের দিশারী বা আদর্শ।
১০। مخزن المعرفت (মাখযানুল মা’রিফাত) অর্থাৎ সম্মানিত মা’রিফত-মুহব্বত মুবারক উনার ভা-ার।
১১। دليل العارفين (দলীলুল আরিফীন) অর্থাৎ আরিফ তথা ওলীআল্লাহগণ উনাদের দলীল।
১২। تاج العاشقين (তাজুল আশিক্বীন) অর্থাৎ আশিক তথা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বতে গরক ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মুকুট।
১৩। آفتاب جہاں (আফতাবে জাহাঁ) অর্থাৎ জগতের সূর্য।
১৪। پناہ بےکساں (পানাহে বে কাছাঁ) অর্থাৎ অসহায়দের সাহায্যকারী।
১৫। قطب دوراں (কুতুবে দাওরাঁ) অর্থাৎ যুগের কুতুব বা পথ প্রদর্শক।
১৬। مقتدائے ارباب دین (মুকতাদায়ে আরবাবে দ্বীন) অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ধারক-বাহক উনাদের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব।
১৭। پیشوائے ارباب یقین (পেশওয়ায়ে আরবাবে ইয়াক্বীন) অর্থাৎ হক্বক্বুল ইয়াক্বীন হাছিলকারীগণ উনাদের পথ প্রদর্শনকারী।
১৮। رہنما ئےکاملین (রাহনুমায়ে কামিলীন) অর্থাৎ কামিল শায়েখ উনাদের পথ প্রদর্শনকারী।
১৯। نائب رسول فی الہند (নায়িবে রসূল ফিল হিন্দ) হিন্দুস্থানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিনিধি।
২০। غریب نواز (গরীবে নেওয়াজ) অর্থাৎ গরীব বা দরিদ্রগণের ইতমিনান দানকারী।
২১। عطائے رسول (আতায়ে রসূল) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান দান বা করুনা।
এছাড়া সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, কুতুবুল বাররি ওয়াল বাহরি সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য অগনিত লক্বব বা উপাধি মুবারক রয়েছে। যা উনার সীমাহীন মর্যাদা মর্তবা উনার বহিঃপ্রকাশ। আর মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক হাদিয়া। ঐ লক্বব মুবারকগুলোর মধ্যে কিছু কিছু লক্বব মুবারক আছে যা স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেই লক্বব মুবারক দ্বারা সম্বোধন করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আবার কতিপয় লক্বব মুবারক এমন আছে যা পূর্ববর্তী ও সমসাময়িক অলীআল্লাহগণ উনাদের দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে।
হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আরয করা হলো, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওই ব্যক্তির ফয়সালা কি, যে নেক আমল করে আর লোকেরা সে নেক আমলের কারণে তার প্রশংসা করে। অপর বর্ণনায় এসেছে, সে নেক আমলের কারণে লোকেরা তাকে মুহব্বত করে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহা মু’মিনগণ উনাদের জন্য তাৎক্ষণিক সুসংবাদ।” (মুসলিম শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لـم يبق من النبوة الا الـمبشرات قالوا وما الـمبشرات قال الرؤيا الصالحة
অর্থ: সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার ধারা জারী নেই। তবে মুবাশশিরাত তথা সুসংবাদ বহনকারী উনার ধারা জারী রয়েছে।
অর্থ: সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার ধারা জারী নেই। তবে মুবাশশিরাত তথা সুসংবাদ বহনকারী উনার ধারা জারী রয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, মুবাশশিরাত বা সুসংবাদ বহনকারী কি? তিনি বললেন, সত্য স্বপ্ন। অর্থাৎ সম্মানিত ওহী মুবারক উনার ধারা বন্ধ হয়েছে। তবে ইলহাম-ইলকা উনার ধারা জারী রয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৪)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধিতাকারীদের আপত্তির জবাব
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী ও মুশরিকরা
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গোল্ডেন রাইস (১)
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১০)
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে এবং সমর্থন করেছে, তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক (৩)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)