সূর্যকে কি পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব?
, ১৭ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১১ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১০ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পাঁচ মিশালী
সূর্যকে নিভিয়ে ফেলতে চাইলে কি করতে হবে? সূর্যকে নেভাতে কি পরিমাণ পানি লাগবে? যদিও প্রশ্নটি হাস্যকর; তবে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আগে বুঝতে হবে, সূর্য জ্বলে কিভাবে?
সূর্য নিয়ে আমাদের প্রথম ধারণাটা আসলে ভুল। এই বস্তুটি আমাদের পরিচিত আগুনের গোলার মতো নয়। সেখানে পৃথিবীর আগুনের মতো জ্বলেও না।
সূর্যের শক্তির উৎস হলো নিউক্লিয়ার ফিউশন বা পরমাণু সংযোজন। আর সেখানে জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে হাইড্রোজেন গ্যাস। প্রচ- ভরের কারণে সূর্যের হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো পরস্পরের সঙ্গে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচ- চাপের মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণু একসঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম পরমাণু। এই প্রক্রিয়াটা ঘটে সূর্যের কেন্দ্রে। সেখানে চাপ অনেক বেশি-পৃথিবীর প্রায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার গুণ বেশি। আর তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অকল্পনীয় পরিস্থিতিতে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একসঙ্গে জুড়ে তৈরি করে হিলিয়াম। একেই বলে ফিউশন বিক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াতে সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে বিপুল পরিমাণ শক্তি।
আসলে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় যখন হাইড্রোজেন পরমাণু মিশে হিলিয়াম তৈরি হয়, তখন কিছুটা ভর হারিয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া ভরই বিখ্যাত সমীকরণ ঊ= সপ২ অনুসারে পরিণত হয় শক্তিতে। এই শক্তিই আমরা পাই আলো এবং তাপ হিসেবে। শুধু তাই নয়, সূর্য থেকে এই প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসছে নিউট্রিনো, পজিট্রন আর গামা রশ্মি। মূল কথা হলো, সূর্য আসলে একটা বিশাল পরমাণু চুল্লি, যা ক্রমাগত হাইড্রোজেন পুড়িয়ে শক্তি তৈরি করছে।
বিজ্ঞানীদের হিসেবে, সূর্য প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন টন (বা ৬,০০,০০,০০,০০০ কিলোগ্রাম) হাইড্রোজেনকে নিউক্লীয় ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়ামে রূপান্তরিত করে। এই রূপান্তরের ফলে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৯৬ মিলিয়ন টন হিলিয়াম তৈরি হয়। আর বাকি প্রায় ৪ মিলিয়ন টন ভর (ঊ=সপ২ সূত্রানুসারে) শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
এবার একটু কল্পনায় ফিরে যাই-
ধরুন, যদি কোনোভাবে সূর্যের সমান পরিমাণ পানি জোগাড় করা যায়! (অসম্ভব শোনাচ্ছে?) কিন্তু কল্পনায় ধরে নিন, কোনোভাবে এতটা পানি যোগাড় হলো। কিন্তু মহাকাশে এই পানি হয়ে যাবে শক্ত বরফের মতো। কারণ সেখানে তাপমাত্রা অনেক কম। এই বিশাল বরফের গোলাটা যদি সূর্যের দিকে ঠেলে দেন, তাহলে কি সূর্য নিভে যাবে?
প্রথম সমস্যা হলো, এই বরফ সূর্যের কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাষ্প হয়ে যাবে। সূর্যের বায়ুম-ল এত গরম যে বরফ টিকতেই পারবে না। ধরুন, কোনোভাবে সেই বাষ্পকে সূর্যের কেন্দ্রে পাঠানো হলো। তাহলে কি সূর্য নিভে যাবে? না। সূর্যের পরিবেশ এতই চরম যে পানির বাষ্পও সেখানে টিকতে পারবে না। প্রচ- তাপে পানি ভেঙে যাবে তার মৌলিক উপাদানে। অর্থাৎ হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন।
এতক্ষণে জেনে গেছেন, সূর্যের জ্বালানি হলো হাইড্রোজেন? তার মানে, পানি ঢেলে সূর্যকে নেভানোর বদলে উল্টো তাকে আরও বেশি জ্বালানি দেয়া হলো! হাইড্রোজেন পেয়ে সূর্য আরও তীব্রভাবে জ্বলবে। সেটা অনেকটা আগুন নেভাতে গিয়ে তেল ঢেলে দেওয়ার মতো ব্যাপার।
শুধু তাই নয়, পানি থেকে অক্সিজেন পাওয়ায় সূর্যে একটা নতুন ধরনের নিউক্লিয়ার ফিউশন শুরু হবে। সূর্যে সাধারণত যে ফিউশন হয় তাকে বলে প্রোটন-প্রোটন ফিউশন। কিন্তু অক্সিজেন পেলে শুরু হবে কার্বন-নাইট্রোজেন-অক্সিজেন বা সিএনও ফিউশন। এ ধরনের ফিউশন অনেক বেশি শক্তিশালী। নতুন হাইড্রোজেন পেয়ে সূর্যের ভর বেড়ে যাবে প্রায় দেড় গুণ (সঠিকভাবে বললে প্রায় ১.৭ গুণ)। আর তখন সূর্য হয়ে উঠবে আগের চেয়ে দেড় গুণ বড়। তার উজ্জ্বলতাও বেড়ে যাবে প্রায় ছয় গুণ।
সেই সঙ্গে সূর্যের রংটাও বদলে যাবে। এখন সূর্যকে দেখা যায় হলুদাভ। কিন্তু দেড় গুণ বড় সূর্যটাকে দেখাবে নীলাভ-সাদা। তখন তাপমাত্রাও হবে বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি। সূর্য থেকে ছড়াতে থাকবে মারাত্মক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি। এর প্রভাবে পৃথিবী হয়ে উঠবে আগের চেয়ে ছয় গুণ বেশি গরম। এই তাপে পৃথিবীতে কোনোকিছুই টিকে থাকতে পারবে না। সবকিছুই পুড়ে স্রেফ ছাই হয়ে যাবে।
এবার আসুন সূর্য না থাকলে কি হতে পারে-
সূর্য না থাকলে পৃথিবীসহ সব গ্রহ জমে বরফ হয়ে যাবে। সূর্যের মহাকর্ষ বল না থাকায় সব গ্রহ মহাকাশে ছিটকে চলে যাবে এলোমেলোভাবে। সৌরজগতের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যাবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভিভিআইপি ও ভিআইপি কারা, কি ধরনের অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন তারা?
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সিসিইউ আর আইসিইউ উভয়ই জরুরি, কোনটার কাজ কি?
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আফ্রিকা ভেঙে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন মহাসাগর
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মৌমাছির বিষে এক ঘণ্টায় ধ্বংস স্তন ক্যানসার কোষ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৩ বছরের অপেক্ষার পর দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ফুলের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যে ৩ ফলের রসে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শুক্র গ্রহে একদিন পৃথিবীর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে মস্তিষ্ক -গবেষণা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাম দিয়েই জমির মালিকানা যাচাই করবেন যেভাবে?
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হারিয়ে যাওয়া সুপারনোভার সন্ধান, পথ দেখালো ইসলামের স্বর্ণযুগের আরবি কবিতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোন বাদামের কেমন পুষ্টিগুণ, খাবেনই-বা কতটুকু?
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পৃথিবীতে প্রাণের প্রাচীনতম নিদর্শন আবিষ্কার!
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












