নছীহতে কায়িম মাকামে উম্মাহাতুল মু’মীনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
সেই ব্যক্তিই মুসলমান যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ-২
, ০১ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০১ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
প্রথমত: অপরাধীর নাম উল্লেখ না করে এভাবে বলবে যে, আমাদের মাঝে এই এই ধরণের দোষ-ত্রুটি রয়েছে। এগুলো থেকে আমাদের বেঁচে থাকা উচিত।
দ্বিতীয়ত: যদি সম্ভব হয় তাহলে সরাসরি তাকেই তার দোষ-ত্রুটি বুঝিয়ে বলতে হবে। অন্য কারো কাছে বলাবলি করা যাবে না।
তৃতীয়ত: যদি এমন স্থান হয়; যেখানে তার দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে অবহিত করলে সে নিজেকে সংশোধন করতে পারবে তাহলে সেখানে বলা যেতে পারে। যেমন: সন্তানের ব্যাপারে পিতা-মাতার কাছে বা তার অভিভাবকের কাছে অর্থাৎ যার কাছে জানালে সে সংশোধন হতে পারবে তাকে জানাতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, উলামায়ে ছূ অর্থাৎ ধর্মব্যবসায়ী আলিম, যাদের সম্মানিত শরীয়তের বিপরীত ফতওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়; তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো অবশ্যই মানুষকে বলতে হবে। কেননা তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার দ্বারা গীবত হবে না।
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, সাত প্রকার লোকের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হয় না।
১. রাজা-বাদশাহ, আমীর-উমরাদের; কেননা তাদের দোষ-ত্রুটি না বললে ইনসাফ ক্বায়েম হবে না।
২. বিচারকের কাছে, সঠিক বিচারের জন্য অন্য পক্ষের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা।
৩. সঠিক ফতওয়া পাওয়ার জন্য মুফতি সাহেবের নিকট অপরের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা।
৪. ফাসিক ব্যক্তি; যে ফরয-ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ তরক করে তার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা।
৫. উলামায়ে ‘ছু’ বা ধর্মব্যবসায়ী আলিমের ভুল ফতওয়া থেকে ঈমান আমল হিফাযতের জন্য তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা।
৬. বিবাহের জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়ের খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা।
৭. কেউ যদি অন্ধ, বোবা, বধির ইত্যাদি নামে মশহুর হয়ে থাকে, তবে পরিচয়ের জন্য তাকে সেই নামে সম্বোধন করলে গীবত হবে না।
উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি হক্বানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনার নিকট বিগত জীবনের গুনাহর জন্য তওবা করে নিজের ইছলাহ বা সংশোধনের জন্য কোশেশ করতে থাকে; তার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করলে গীবত হবে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয়, যারা অপরের ইজ্জত-সম্মান নষ্ট করে, বিনা কারণে অন্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে, অপরের সম্পদ আত্মসাৎ করে, অধিকাংশ পরিবারে দেখা যায়, একভাই আরেক ভাইয়ের, ভাইরা বোনদের সম্পদ আত্মসাৎ করে। তারা প্রকৃত মুসলমান নয় বরং নামসর্বস্ব মুসলমান মাত্র। অতএব, পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য আবশ্যক হলো অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ না করা ও মাল-সম্পদ আত্মসাৎ না করা।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কেউ যদি শয়তান বা নফসের ওয়াসওয়াসায় পড়ে এ ধরণের কাজ করে ফেলে, তবে তার জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে দুনিয়াতে থাকতেই যার দোষ বর্ণনা করা হয়েছে বা সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। যদি সরাসরি ক্ষমা চাইতে গেলে ফিতনা-ফাসাদ, অপমান-অপদস্থ হওয়ার অথবা ভুল বুঝাবুঝির আশংকা থাকে তাহলে আমভাবে এভাবে ক্ষমা চাইবে যে, ‘আমার কোনো ভুল-ত্রুটি, অপরাধের কারণে অথবা আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।’ ক্ষমা চাওয়ার পর যাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে, সাধ্য অনুযায়ী তাকে হাদিয়া তোহফা দিবে। আর যার মাল-সম্পদ, জায়গা-জমি অন্যায়ভাবে নেয়া হয়েছে তাকে তা ফিরিয়ে দিবে। আর যদি উক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয় অর্থাৎ সে ইন্তেকাল করে থাকে তাহলে তার থেকে যে পরিমাণ নেয়া হয়েছে সে পরিমাণ টাকা-পয়সা তার জন্য নেক কাজে খরচ করবে। তাহলে পরকালের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কেননা অপরের হক্ব নষ্ট করলে, যে পরিমাণ হক্ব নষ্ট করা হয়েছে, পরকালে সে পরিমাণ সওয়াব তাকে দিয়ে দিতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সকলকে সমস্ত প্রকার বদ খাছলত পরিত্যাগ করে, নেক খাছলত পয়দা করার মাধ্যমে হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












