হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (২)
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(৪) হযরত সাহল ইবনে আবদুল্লাহ তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইন্তিকালের সময় মারিফতে ও হাক্বীক্বতে কামিল চারশত মুরীদ উনার নিকটবর্তী ছিলেন। একজন জিজ্ঞেস করলেন, “হযরত! আপনার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন? যে আপনার মিন্বরে বসে ওয়াজ করবেন? তিনি বললেন, শাদে-দিল। ”
শাদে-দিল একজন অগ্নিপূজক, তখন যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, উত্তর শুনে সকলে বললেন, হযরত! তিনি মৃত্যু যন্ত্রনায় অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। হযরত সাহল তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সকলের এ মন্তব্য শুনে বললেন, গোলমাল করো না; যাও শাদে-দিলকে ডেকে আনো। তাকে ডাকা হলো। তিনি তাকে দেখে বললেন, তুমি আমার মৃত্যুর তিন দিন পরে মসজিদে যোহরের নামায আদায় করে আমার মিম্বরে বসে ওয়াজ করবে। একথা বলে তিনি ইন্তেকাল করলেন।
তৃতীয় দিন যোহরের নামাযের পর মসজিদে বহু লোক সমবেত হলেন। নির্ধারিত সময়ে শাদে-দিল এলেন এবং মিম্বরে বসলেন। তখন উনার মাথায় অগ্নিপূজক সুলভ টুপি ছিলো এবং গলায় পৈতা জড়ানো ছিলো। শাদে-দিল প্রথমে বললেন, তোমাদের ধর্মীয় নেতা আমাকে তোমাদের হাদী নিযুক্ত করে গেছেন এবং আমাকে বলেছেন, “শাদে-দিল! এখন তোমার পৈতা ছিড়ে ফেলার সময় এসেছে। ” এ কথা বলে শাদে-দিল বললেন, এই নাও; আমি পৈতা ছিড়ে ফেলছি। এই বলে তিনি ছুরি বের করে পৈতা কেটে ফেললেন এবং অগ্নিপূজকের টুপি খুলে ফেললেন। অতঃপর কালেমা শরীফ পড়লেন।
তারপর তিনি বললেন, হযরত শেখ বলেছেন, সকলকে বলো যিনি তোমাদের শায়েখও ছিলেন, ওস্তাদও ছিলেন, তিনি উপদেশ দিয়েছেন ওস্তাদের নছীহত মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। তিনি তোমাদেরকে বলেছেন- দেখো, শাদে-দিল বাহ্যিক পৈতা ছিঁড়ে ফেলেছে। যদি তোমরা কাল ক্বিয়ামতের মাঠে আমার সাহল তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাৎ পেতে চাও তবে তোমাদের জাওয়ামর্দীর কসম তোমরা জাওয়ামর্দের মত নিজের সমুদয় আভ্যন্তরীণ পৈতা ছিড়ে ফেলো। ”
ফায়দা:
শুধুমাত্র বাহ্যিক শিরক বা হারাম কাজ ত্যাগ করাই কামিয়াবী নয়। একই সাথে আভ্যন্তরীণ দোষ-ত্রুটি অর্থাৎ অন্তরের সমস্ত রোগ যা প্রকারান্তরে ইখলাছহীনতা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অংশীবাদীদের সমর্থন করে সেগুলোকে ত্যাগ করতে হবে।
উপরোক্ত ঘটনাটি হযরত সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি কারামত। তিনি ইন্তেকালের পূর্বে একজন অগ্নিপূজককে উনার স্থলাভিষিক্ত করে গেছেন- যা উনার কারামত। অগ্নিপূজক শাদে-দিল যে হযরত সাহল তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন- তার কারণগুলো হচ্ছে-
প্রথমত: তিনি তখন পর্যন্ত বাহ্যিক পৈতা না ছিঁড়লেও অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার শিরক, কুফরী ত্যাগ করে খুলুছিয়ত অর্জন করেছিলেন।
দ্বিতীয়ত: উনার উপর হযরত সাহল তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেক দৃষ্টি ছিলো।
তৃতীয়ত: উনার সকল গুণ অর্জিত হওয়ার মূল কারণ, হযরত সাহল তাস্তারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারক অর্থাৎ ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারকের তাছীর।
(৫) হযরত আবুল হাসান সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, একবার মাত্র শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলার দরুণ বিগত ত্রিশ বছর ধরে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে ক্ষমা প্রার্থনা করে আসছি। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, তা কি রূপে? তিনি উত্তর দিলেন, একবার বাগদাদের বাজারে আগুন লাগলে আমি মনে করলাম যে, আমার দোকানখানিও জ্বলে গেছে। অতঃপর কিছু লোক এসে সংবাদ দিলো যে, আমার দোকান আগুনে পুড়েনি। এ সংবাদে আনন্দিত হয়ে আমি বলেছিলাম, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! এতে প্রাকারান্তরে মুসলমান ভাইদের চেয়ে আমার অবস্থা ভাল থাকুক তাই কামনা করেছি। আর নিজের দুনিয়া নিরাপদ থাকার শোকরস্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ বলেছি। এ লজ্জায় তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ফায়দা:
সর্বাবস্থায় নিয়ামতের শোকর আদায় করা এবং বিপদে ধৈর্য ধারণ করা প্রকৃত মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। উপরোক্ত ঘটনায় হযরত সাররী সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলা যথার্থই হয়েছে। তবে উনার বিনয়, মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় এবং মুসলিম ভাইদের প্রতি সহানুভূতির কারণেই তিনি লজ্জিত হয়েছিলেন। যা উনার মত বুযূর্গ ওলী উনার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।
তাই একজন মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব কি?
মুসলমান হিসেবে সকলের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করা এবং পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম ভাই-বোনদের দুঃখ-কষ্ট অনুধাবন করা। মুসলমানদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। মুসলমানদের কষ্টে কষ্ট পাওয়া, মুসলমানদের সফলতার সংবাদ শুনে খুশি হওয়া। আর কাফির-মুশরিকদের ধ্বংস কামনা করা।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












