হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (৩)
, ২১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

(৬) হযরত আহমদ খাযরাবিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, দীর্ঘকাল যাবৎ আমি আমার নফসের উপর কঠোর ব্যবহার করে আসছি। একবার একদল মুজাহিদ জিহাদে যাচ্ছিলেন। আমিও জিহাদে যাবার ইচ্ছা পোষণ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে নফস আমাকে সে সমস্ত হাদীছ শরীফ স্মরণ করে দিলো, যা জিহাদের ছওয়াব সম্বন্ধে এসেছে। তৎক্ষণাৎ আমি মনে মনে ভাবলাম, ইবাদতের উদ্দীপনা তো কোন সময় নফসের তরফ থেকে আসে না। এটা নিশ্চয়ই নফসের ধোঁকা। কেননা আমি নফসকে সর্বদা রোযার উপর রাখি। অনবরত অনাহারে থাকার কারণে আমার পক্ষে এ সফরে যাবার ক্ষমতা ছিলো না। নফস এখন সফরে যাবার জন্য প্রেরণা দিচ্ছে যেন সফরের বাহানায় রোযা ভঙ্গ করি। আমি বিষয়টি ভালো চোখে দেখলাম না।
নফসের ধোঁকা মনে করে তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আমি সফরেও রোযা ছাড়বো না। নফস আমার সিদ্ধান্তে সায় দিলো। তখন আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবলাম, আমি রাত্রে নামাযের জন্য নফসকে জাগিয়ে রাখি, এখন সফরে সে রাত্রে আরাম করে ঘুমাতে পারবে। আমি নফসকে বললাম, আমি তোকে রাত্রে হোক আর দিনে হোক সব সময় জাগ্রত রাখবো। নফস এবারও আমার সিদ্ধান্তে সমর্থন করলো।
অতঃপর আমি চিন্তা করলাম, হয়ত আমি লোক-সমাজ থেকে দূরে থাকি বিধায় নফস বিরক্ত হয়ে গেছে। এখন সে লোক সমাজে মেলামেশা করতে চায় যেন মানুষের সঙ্গে মুহব্বত পয়দা হয়। আমি বললাম, আমি যেখানেই যাই, নির্জন অনাবাদ স্থানে অবস্থান করবো। মানুষের সংসর্গে কখনো বসবো না। নফস বললো, বহুত আচ্ছা, তাই মঞ্জুর।
এবার আমি নফসের কাছে হার মানলাম। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হয়ে বললাম, বারে ইলাহী! আমাকে নফসের ধোঁকা সম্বন্ধে অবহিত করুন। নফস কি করতে চাচ্ছে? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নফসকে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য স্বীকার করবার জন্য প্রস্তুত করে দিলেন। নফস আমাকে বললো, তুমি প্রতিদিন আমার উদ্দেশ্য ও ইচ্ছার বিপরীত কাজ করে শত শতবার আমাকে হত্যা করতে। কিন্তু মানুষ এর কিছুই জানে না। এর চেয়ে উত্তম, আমি একবার জিহাদের মধ্যে নিহত হয়ে সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যাই। এদিকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ুক যে, আহমদ খাযরাবিয়্যাহ কেমন ভাল লোক ছিলেন; শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছেন এবং শহীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! কেমন মহান সেই রব তায়ালা; যিনি এমন নফস পয়দা করেন যা জীবিতকালেও মুনাফিক এবং মৃত্যুর পরেও মুনাফিক। ইহলোকেও মুসলমান হয় না, পরলোকেও না। আমি তো ভেবেছিলাম যে, ইবাদতই করতে চাচ্ছি। আমার তো খবরই ছিলো না যে, সে পৈতা বাঁধছে। অতঃপর আমি সেদিন থেকে আরো দৃঢ়তার সাথে নফসের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে দিলাম।
ফায়দা:
নফসের ধোঁকা বড়ই মারাত্মক। এর অতিসূক্ষ্ম জাল সাধারণ দৃষ্টিতে কখনোই নজরে আসে না। মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ব্যতীত নফসের সূক্ষ্ম ধোঁকা থেকে কেউই রক্ষা পাবে না।
উপরোক্ত ঘটনায় দেখা গেছে যে নফস শুধুমাত্র খারাপ কাজে ধোঁকা দেয়, তা নয় বরং নফস ভাল কাজেও ধোঁকা দিতে পারে যা বুঝতে পারা খুবই কঠিন। কেননা ভাল কাজের বা ইবাদতের উদ্দেশ্য যদি মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক ছাড়া অন্য কিছু হয় তবে বুঝতে হবে যে, এটা নফসের ধোঁকা এবং সাথে সাথে নিয়ত শুদ্ধ করতে হবে। মূল কথা হলো, নফসের ধোঁকায় পড়লে অনেক উত্তম ইবাদতও জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়াবে অথচ বাহ্যিকভাবে মনে হবে তা ইবাদত।
(৭) বর্ণিত আছে, একরাত্রে এক চোর হযরত আহমদ খাযরাবিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘরে প্রবেশ করলো। তখন তিনি ঘরের এক কোনে নামায আদায় করছিলেন। চোর ঘরের ভেতর এদিক সেদিক হাতড়ে কোথাও কিছু না পেয়ে নিরাশ মনে ফিরে যেতে উদ্যত হলো। এমন সময়ে হযরত আহমদ খাযরাবিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলে উঠলেন, হে যুবক! বালতি দ্বারা কূপ থেকে পানি উঠিয়ে ওযু করো এবং নামাযে মশগুল হও, কাল সকালে কিছু পাওয়া গেলে আমি তা তোমাকে দিয়ে দিবো। আমার ঘর থেকে তোমাকে খালি হাতে যেতে দিবো না। চোর তাই করলো।
পরদিন সকালে জনৈক হৃদয়বান সম্পদশীল ব্যক্তি একশত স্বর্ণমুদ্রা এনে হযরত আহমদ খাযরাবিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারকে এনে দিলো। হযরত আহমদ খাযরাবিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চোরকে বললেন, এই নাও, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে এক রাত্রি ইবাদত করার বিনিময়ে একশত স্বর্ণমুদ্রা দান করলেন।
এ কথা শুনে চোরের মনে এক প্রকার ভাবান্তর সৃষ্টি হলো। তার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, হায় আফসুস! আমি এমন প্রতিপালক/রব তায়ালা উনার নির্দেশিত পথ ছেড়ে বিপথে চলেছি? যিনি মাত্র একটি রাত্র ইবাদত করার বিনিময়ে এতবড় প্রতিদান দান করলেন। এই বলে সেই চোর সর্বপ্রকার খারাপ কাজ থেকে খালিছ দিলে তওবা করে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হলো।
ফায়দা:
মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ ও জ্বীন জাতিকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন কেবলমাত্র উনার ইবাদত করার জন্যই। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দায়েমীভাবে ছলাত পাঠ করা। যা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সমস্ত কায়িনাত, জ্বীন-ইনসান সকলের জন্য ফরজে আইন করে দেয়া হয়েছে। কাজেই সকলের জন্য প্রথম ফরজ হচ্ছে, পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা এবং পবিত্র সুন্নত মুবারকে সুশোভিত থাকা ও প্রচার-প্রসার করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া। আর এর প্রতিদান মহান আল্লাহ পাক তিনি দিবেন পরকালে। যে প্রতিদানের পরিমাণ হিসাব করা কিংবা কল্পনা করা সাধ্যের বাহিরে।
উপরোক্ত ঘটনায় চোরকে একরাত্র ইবাদত করার বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাক উনারই ইশারায় একশত স্বর্ণমুদ্রা দান করা হয়েছে যা কিনা ইবাদতের প্রতিদানের পরিমানে দুনিয়াবী মেছাল। মূল কথা হলো- ইবাদত বা আমলের প্রতিদান অজস্র, অসংখ্য, অগনিত যা পরকালের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু মানুষ দুনিয়াতে নগদ প্রতিদানের আশায় মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগী ছেড়ে দুনিয়ার পিছনে ছুটে বেড়ায়। নাঊযুবিল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: ভারতের মুসলিম নাম পরিবর্তন
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩১)
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৪)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (১১)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩০)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)