হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (৪)
, ২০ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

(৮) হযরত আবুল হাসান বুসঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন গোসল করছিলেন। হঠাৎ উনার মনে খেয়াল হলো যে, উনার একটি জামা একজন দরবেশকে দেয়া উচিত। তিনি তখনই উনার খাদেমকে ডাকলেন এবং বললেন যে, এ জামাটি যেন অমুক দরবেশকে এই মুহূর্তে দিয়ে আসা হয়। খাদেম বিনয় সহকারে বললেন, “হুযূর! এত তাড়া কিসের? আপনি গোসল সেরে আসুন। তারপর ধীরে সুস্থে দিয়ে আসি। ” হযরত আবুল হাসান বুসঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “না, তা হবে না। তুমি এখন এই মুহূর্তে কাজটি সেরে আসো। কেননা আমার ভয় হয় যে, আমি গোসল সেরে আসতে আসতে অভিশপ্ত শয়তান আমাকে ধোঁকায় ফেলে দিয়ে আমার এ খেয়াল অন্তর থেকে দূর করে দিতে পারে। ”
ফায়দা:
মনের মধ্যে নেক কাজ করার ইচ্ছা জাগা মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহমত। আর ইচ্ছা জাগার সাথে সাথেই নেক কাজটি সম্পাদন করা উচিত। কেননা শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান কখনই চায় না; মানুষ নেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হয়ে যাক। মানুষ যখনই কোন নেক কাজের নিয়ত করে শয়তান তখন থেকেই ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে; যাতে মানুষ নেক কাজটি থেকে বিরত থাকে। এজন্য প্রত্যেকের উচিত হবে, কোন নেক কাজের নিয়ত করার বা ইচ্ছা জাগার সাথে সাথে কাজটি সমাধা করা।
(৯) হযরত মুহম্মদ আলী হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাল্যকালে উনার দু’জন সঙ্গীসহ দ্বীনি ইলিম শিক্ষার জন্য তিরমিয শহর হতে অন্যত্র যাবার জন্য মনস্থির করলেন। উনারা যখন যাবার উদ্যোগ নিচ্ছেন তখন একদিন উনার আম্মা উনাকে ডেকে বললেন, “বাবা! তুমি যে দ্বীনি ইলিম শিক্ষার জন্য দূর দেশে যাচ্ছ, খুব ভালো কথা... কিন্তু আমি যে বয়োবৃদ্ধা, আমার কাজ-কর্ম করার জন্য তো একমাত্র তুমিই রয়েছো। তুমি চলে গেলে আমার এসব কাজ-কর্ম কে করে দিবে?”
মায়ের এ প্রাণস্পর্ষী কথা শুনে বালক মুহম্মদ আলী হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আর দূর দেশে গেলেন না, মায়ের সেবার জন্য থেকে গেলেন। উনার অন্যান্য সহপাঠী যারা ছিলো সবাই চলে গেলো ইলম অন্বেষণের জন্য। এর পাঁচ মাস পর একদিন তিনি কবরস্থানে বসে কাঁদছেন আর এই বলে আক্ষেপ করছেন যে, উনার ছাত্র জীবনের সহযোদ্ধারা একেকজন বড় আলিম হয়ে যাচ্ছে, আর তিনি অকর্মন্য হয়ে পড়ে আছেন, জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নূরানী চেহারা সমৃদ্ধ এক বৃদ্ধ ব্যক্তি উনার সামনে এসে হাজির হলেন এবং বললেন, “বৎস! কেন কাঁদছো?”
হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে সেই বৃদ্ধ বললেন, “তুমি যদি সম্মত হও, আমি প্রত্যহ এখানে এসে তোমাকে ছবক পড়িয়ে যাবো এবং তুমি শীঘ্রই তোমার সঙ্গীদের চেয়ে এগিয়ে যাবে। ” হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হযরত! আমার প্রকৃত আরজু তো এই। ” এরপর থেকে তিন বৎসর পর্যন্ত সেই নূরানী চেহারা মুবারকওয়ালা বৃদ্ধ ঐ কবরস্থানে এসে হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দ্বীনি ইলিমের ছবক পড়াতে থাকলেন এবং উনাদের মধ্যে বহু বিষয়ে আলাপ আলোচনা হতে থাকলো। এক পর্যায়ে তিনি একজন বড় আলিমে পরিণত হলেন। সুবহানাল্লাহ!
একবার হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোনভাবে জানতে পারলেন যে, উনার ওস্তাদ স্বয়ং হযরত খিযির আলাইহিস সালাম, তখন তিনি মনে মনে বললেন, “আর কিছু নয়, একমাত্র আমার মায়ের সন্তুষ্টি মুবারক লাভের কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এ মহান দৌলত দান করেছেন। ”
ফায়দা:
মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের হক্ব বা দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে এবং বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাতা-পিতার মর্যাদা ও হক্ব সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেছেন।
অনেক সময়ে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের হক্ব আদায় করতে গেলে সাময়িকভাবে সন্তানের ক্ষতি দেখা গেলেও মহান আল্লাহ পাক তিনি গায়েবীভাবে যে কোন উপায়েই হোক সন্তানকে মদদ করে থাকেন। উপরোক্ত ঘটনায় তাই দেখা যায়, মা-বাবার খিদমত করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি মদদ করে থাকেন। আর বিপরীত করলে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হয় এবং লা’নতগ্রস্ত হতে হয়। নাঊযুবিল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নেই
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রসঙ্গ: ভারতের মুসলিম নাম পরিবর্তন
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩১)
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৪)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (১১)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৩০)
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৭ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)