হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (৫)
, ২৩ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(১০) একদিন হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে এক নাপিতের কাছে গেলেন। তখন নাপিত একজন দরবেশের চুল কাটছিলো। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াস্তে তুমি আমার চুল কেটে দিতে পারবে?” নাপিত তৎক্ষনাৎ রাজী হলো এবং তার চক্ষুদ্বয় অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠলো। তখনও দরবেশের চুল কাটা শেষ হয়নি। তথাপি নাপিত দরবেশকে সশ্রদ্ধে বললো, আপনি উঠুন, আপনার কাজ শেষ করতে পারলাম না। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম যখন উচ্চারিত হয়েছে তখন আমি পূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হয়েছি। কাজেই আগে আমাকে সে কাজ করতে দিন।
অতঃপর নাপিত হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছের বা মাথা মুবারক চুম্বন করে চুল মুন্ডন করে দিলো এবং একটি কাগজের পোটলা দিয়ে দিলো। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পোটলাটি খুলে কিছু স্বর্ণমুদ্রা দেখতে পেলেন। নাপিতের এমন উদারতা দেখে তিনি মনে মনে সংকল্প করলেন যে, যখনই টাকা-পয়সা হবে প্রথমেই নাপিতের প্রতিদান দেবেন।
কিছুদিন পরই বসরা থেকে এক থলি স্বর্ণ-মুদ্রা হাদিয়া এলো। তিনি সেগুলো নিয়ে নাপিতের নিকট গেলেন এবং দিতে চাইলেন। নাপিত জিজ্ঞেস করলো, “এটি কি?” তখন হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পূর্বের ঘটনার জের টেনে উনার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলেন।
নাপিত তখন বললো, “আপনি কি মহান আল্লাহ পাক উনার নামে লজ্জাবোধ করেন না? আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াস্তে চুল কেটে দিতে বলেছিলেন, আর এখন তারই বিনিময় নিয়ে এসেছেন স্বর্ণমুদ্রা। আপনি কি এমন কোন ব্যক্তিকে দেখেছেন, যে মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াস্তে কাজ করে তার বিনিময় গ্রহণ করেছে?” একথা শুনে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অবাক হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে তিনি বলেছেন যে, তিনিই ইখলাছ শিখেছেন নাপিতের ঐ ঘটনা থেকে।
ফায়দা:
জিন্দেগীর প্রতিটি মুহূর্তই মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। আর খুলুছিয়ত ব্যতীত যে কোন ইবাদতই অন্তসারশুন্য। খুলুসিয়ত হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রেজামন্দী মুবারক হাছিল করার উদ্দেশ্যে ইবাদত করা; কোন প্রকারের বিনিময়ের আশা না করা, যেমন দুনিয়াবী কোন লাভ বা আখিরাতে বেহেশতের আশা।
(১১) একবার বাগদাদে এক চোরকে তার কৃতকর্মের সাজাস্বরূপ এক বড় রাস্তার পাশে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ঝুলন্ত চোরের পা ধরে চুম্বন করলেন। লোকেরা আশ্চর্য হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলো। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “সে একজন কৃতি পুরুষ। সে যে কাজ আরম্ভ করেছিলো, সেই কাজেই শেষ পর্যন্ত দৃঢ় ছিলো। এমন কি, ঐ কাজে সে তার জান পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে।
ফায়দা:
মুসলমান হিসাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মত ও পথ অনুযায়ী জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সুদৃঢ় থাকাই সকলের একমাত্র কর্তব্য। সাধারণত: যে কোন পেশার লোকজনকেই দেখা যায় যে, তারা মৃত্যু পর্যন্ত তাদের নিজেদের পেশায় অটল থাকে। আর মুসলমানরা মুসলমানদের দৃঢ়তা ছেড়ে দিয়ে ইহুদী-নাছারাদের পথ বেছে নেয়। অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং ওলীআল্লাহগণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে থেকে জান কুরবান করে দিয়েছেন।
(১২) হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার বাগদাদে এলেন তখন লোকজন খলীফাকে সংবাদ পৌঁছালো যে, খোরাসানের জাহেদ বাগদাদে এসেছেন। খলীফা হযরতকে ডেকে পাঠালেন। হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খলীফার দরবারে এসে খলীফাকে জাহেদ সম্বোধন করে সালাম দিলেন। খলীফা বললেন, “সারা দুনিয়া আমার অধীন, কাজেই আমিতো জাহেদ (অর্থাৎ দুনিয়া বিরাগী) নই। বরং আপনিই তো জাহেদ। ”
হযরত হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “না, আপনিই জাহেদ। ” খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, “তা কেমন করে?” হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, দুনিয়ার সম্পদ অতি সামান্য। হে খলীফা! আপনিতো এই সামান্য সম্পদ নিয়েই সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত এবং বেহেশতের পরম সম্পদ হতে সম্পূর্ণ বিমুখ। যেহেতু আপনি অল্পতেই তুষ্ট, কাজেই আপনিই তো জাহেদ। আর আমি এই সামান্য ও নগণ্য দুনিয়াতে সন্তুষ্ট নই, এমনকি আখিরাতের মহাসম্পদেও আমি তৃপ্ত নই, বরং এর পরেও আমার আরও বিরাট আকাঙ্খা রয়েছে। কাজেই আমি কেমন করে জাহেদ হতে পারি?”
ফায়দা:
মহান আল্লাহ পাক কত অল্প সম্পদই না দিয়েছেন এ দুনিয়াতে। আর সমস্ত সুখ এবং সম্পদ তো রেখেছেন পরকালের জন্য। অথচ মানুষ কতই না মূর্খ। পরকালের মহাসম্পদের বিনিময়ে দুনিয়ার যৎসামান্য সম্পদকেই সে গ্রহণ করতে চায়। আর পরকালের মহাসম্পদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার এবং উনার সন্তুষ্টি হাছিলও অন্তর্ভুক্ত। উপরোক্ত ঘটনায় দেখা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধুগণ হচ্ছেন দুনিয়ার জাহেদ (দুনিয়া বিরাগী) আর বাকি সবাই আখিরাতের জাহেদ (আখিরাত বিরাগী)।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












