হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতিও বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা অত্যাবশ্যকীয়
, ০৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ০৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা মু’মিনের অন্তর্দৃষ্টিকে ভয় করো (বিরত থাক), কেননা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নূর দ্বারা প্রত্যক্ষ করেন। ”
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “জেদ্দাতুল আছার”-এ উল্লেখ করেন যে, হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে একজন বিশিষ্ট মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ইন্তেকাল করার পর, একদিন সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পবিত্র মাজার শরীফ উনার সামনে গিয়ে থেমে গেলেন। অতঃপর অনেকক্ষণ তাসবীহ-তাহলীল ও দোয়া-দরূদ পাঠ করে লম্বা দোয়া করলেন। দোয়াতে পবিত্র বাগদাদ শরীফ উনার বিশিষ্ট বুযূর্গ ও আলেমগণ শরীক ছিলেন। দোয়া শেষে হযরত গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেহারা মুবারকে হাসি ফুটে উঠলো। তিনি চলে আসলেন উনার মাদরাসার মধ্যে। তখন উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- হে সাইয়্যিদুল আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি সেখানে কেন এত লম্বা দোয়া করলেন, আর দোয়ার শেষে কেনই বা হাসলেন? জবাবে তিনি বললেন যে, “হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উত্তম হালতে দেখলাম কিন্তু উনার ডান হাতটা অবশ দেখলাম। আরো বললেন, যখন উনার সাক্ষাত হলো, তখন তিনি আমাকে বললেন, হে গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কি আমাকে এখনো ক্ষমা করতে পারেননি? হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ক্ষমা করার মত আমি কিছুতো দেখছিনা। তখন তিনি বললেন যে, আমার হায়াতে কোন এক জুমুয়াবার আমি আপনাকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করার জন্য একটি পুল থেকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি তা বরদাশত করেননি। যার ফলে আমাকে জান্নাত ও তার সাথে নিয়ামতও দেয়া হয়েছে সত্যই কিন্তু হাতটা অবশ করে দেয়া হয়েছে।
হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তখন আমি দোয়া করলাম। আমার সাথে পাঁচ হাজার আউলিয়ায়ে কিরাম কবর থেকে আমার সাথে দোয়ায় শরীক হয়েছেন। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আরজু করেছেন এবং আমার কাছেও বলেছেন যে, দোয়া করুন, যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দিলেন, তিনি সুস্থতা লাভ করলেন। আমার সাথে মোছাফাহা করলেন, তখন আমি খুশি হয়ে হাসলাম। সুবহানাল্লাহ!
যখন তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করলেন, তখন হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ-মু’তাক্বিদ ও খলিফাগণ মনে মনে চিন্তা করলেন যে, হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন বিশিষ্ট মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী। উনার হাত অবশ থাকবে, এটা কি করে সম্ভব? তাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তোমরা হয়তো এ বিষয়ে চিন্তিত রয়েছ। তখন তিনি বললেন, আচ্ছা কোন ব্যক্তি এ বিষয়ে সাক্ষী দিলে তোমরা তা বিশ্বাস করবে যে, এ ঘটনা সত্য? তখন তারা বললো, হযরত শায়খ আবূ ইয়াকুব ইউসুফ ইবনে আইয়ূব হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আবূ মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে শোয়াইব কুরদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনারা যাঁরা কাশফধারী, বিশিষ্ট মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ছিলেন, উনারা দু’জন যদি ৭ দিনের মধ্যে সাক্ষী দেন, তাহলে আমরা তা বিশ্বাস করবো। হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তোমরা এখানে অপেক্ষা করো, এখান থেকে নড়বে না, তোমাদের ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত। তিনি মোরাক্বাবায় বসলেন, উনার সাথে অন্যান্য যাঁরা ছিলেন, উনারাও বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল, হযরত শায়খ আবূ ইয়াকুব ইউসুফ ইবনে আইয়ূব হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খুব দ্রুতগতিতে দৌড়ে এসে মাদরাসায় উপস্থিত হলেন। মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন যে, কিছুক্ষণ আগে হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সামনে উপস্থিত করেছেন এবং হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে বলেছেন, হে আবূ ইয়াকুব! আপনি এখনই যান গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাদরাসায়। উনারা অপেক্ষা করছেন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সত্য বলেছেন কিনা জানার জন্য। আপনি গিয়ে সাক্ষী দিন, আমি হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলছি, অবশ্যই সে ঘটনা সত্য। তিনি সে সাক্ষী দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি ছিলেন, বিশিষ্ট বুযূর্গ হযরত আবূ মুহম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে শোয়াইব কুরদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি এসেও সাক্ষী দিলেন। সুবহানাল্লাহ! অথচ উনারা কাছে ছিলেন না, তখন সকলে মেনে নিলেন।
উল্লেখ্য, বর্ণিত ওয়াক্বেয়ায় হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এখানে বিদ্বেষ পোষণ করেননি। আর তিনি সাধারণ লোকও ছিলেন না। তিনি বুযূর্গ, আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন। এরপরও তিনি পরীক্ষা করার জন্য গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ধাক্কা দিয়েছিলেন উনার মজবুতি কতটুকু রয়েছে, সেটা দেখার জন্য, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, তারপরেও মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত হাম্মাদ দাব্বাছ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত অবশ করে দিয়েছেন।
এখন ফিকিরের বিষয় মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কতটুকু মুহব্বত করেন উনাদের সামান্যতম কষ্ট প্রদানও তিনি বরদাশত করেন না। সুতরাং যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে কি অবস্থা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে ওলীআল্লাহ উনাদের প্রতি মুহব্বত পোষণ করার তৌফিক দিন এবং উনাদের প্রতি যারা বিদ্বেষ পোষণ করে, তাদের থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (৯)
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হালাল হারামের কথা-১৪
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুমহান পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ: মুবারক প্রেক্ষাপট
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে বিভ্রান্তির দলীলসম্মত জাওয়াব
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ্বমিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলিম এবং আলিম উনাদের ফযীলত
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)