জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
বিলাদত শরীফ: ৬০৮ খৃ: বিছাল শরীফ: ৭৪ হিজরী (৬৯৪ খৃ:) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর।
, ০৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
ব্যক্তিগত জীবনে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন একজন বিশিষ্ট ছাহাবী। মহৎ ও নিঃস্বার্থ চরিত্রের জন্য তিনি সর্বত্র উচ্চ সম্মান পেতেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে উনাকে অন্যতম মুফ্তি ছাহাবীরূপে গণ্য করা হয়।
হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হিসাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। তিনি নিজের পক্ষ হতে রেওয়ায়েতের মধ্যে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি করতেন না। তিনি ১৬৩০টি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। উনার মধ্যে ১৭০টি মুত্তাফাক আলাইহি অর্থাৎ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উভয়েই বর্ণনা করেছেন। ৮১টি বুখারী শরীফে ও ৩১টি মুসলিম শরীফে এককভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেশীর ভাগ মজলিসেই তিনি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতেন। কোন মজলিসে অনুপস্থিত থাকলে অন্যান্য ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকট থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বর্ণনা মুবারক সম্পর্কে জেনে নিতেন। উনার অজানা নতুন কোন কথা জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অথবা প্রথম রাবীর নিকট উপস্থিত হয়ে তার সত্যতা তিনি যাচাই করে নিতেন। উনার সমসাময়িক লোকেরা বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে কম-বেশী হওয়া সম্পর্কে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অপেক্ষা অধিক সতর্ক ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে আর কেউ নেই।
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাধ্যমে ইলমে হাদীছের বিস্তর অংশ প্রচারিত হয়েছে। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক অর্থাৎ দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর ষাট (৬০) বছরের বেশী সময় জীবিত ছিলেন। এ দীর্ঘ সময় তিনি একাগ্রচিত্তে ইলমে দ্বীনের চর্চা করেছেন।
ইবনে শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ারা আনহুম উনাদের কোন বিষয় হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অজানা ছিল না। ইলিমের এই চর্চা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি কোন সরকারী দায়িত্ব কখনও গ্রহণ করেননি। উনার স্থায়ী “হালকায়ে দরস” ছিল পবিত্র মদীনা শরীফে। হজ্জের এ মওসুমে তিনি ফতওয়া দিতেন। মানুষের বাড়ীতে গিয়েও তিনি হাদীছ শরীফ শুনাতেন।
হাদীছ শরীফের বর্ণনায় উনার অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের কারণে মুহাদ্দিছগণের নিকট উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য হয়।
হযরত ইবনে শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন বিষয়ে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ পেলে আর কারো হাদীছ শরীফের প্রয়োজন মনে করতেন না।
হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের ক্ষেত্রে “মালিক ‘আন নাফে’ আন ইবনে উমর” (مَالِكٍ عَنْ نَافِعٍ عَنْ إِبْنِ عُمَرَ) এই সনদটি মুহাদ্দিছগণ سِلْسِلَةُ الذَّهَبِ সিলসিলাতুয যাহাব বা সোনালী শৃঙ্খল নামে অভিহিত করে থাকেন। কারণ, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রায় ১৫ বছর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে কাটিয়েছেন। তিনি প্রথম খলীফাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের পুরো সময়টা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারকে প্রায় ৩০ বছর অতিবাহিত করেছেন।
এই সনদের দ্বিতীয় ব্যক্তি হযরত নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গোলাম। প্রায় ৩০ বছর তিনি মনিবের খেদমতে কাটিয়েছেন।
সনদের তৃতীয় ব্যক্তি হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি উনার উস্তাদ হযরত নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হালকায়ে দরসে ১০/১২ বছর বসার সুযোগ লাভ করেন।
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবন ছিল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবন মুবারকের প্রতিচ্ছবি। হযরত আবু হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়েছিল, কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম ও উনার পুত্র হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












