জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
বিলাদত শরীফ: (তারিখ উল্লেখ নেই) বিছাল শরীফ: ৪৩ হিজরী (৬৬৩ খৃ:)
, ১৩ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৬ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উটের গোশত:
বন্টনকৃত উটের গোশতের এক ভাগ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেয়া হলো। ইহুদী ধর্মের বিধান অনুসারে উটের গোশত খাওয়া ছিলো হারাম। যেহেতু উনারা ইহুদী আলিম ছিলেন, ইহুদী থাকা অবস্থায় এ ধর্মের অনুশাসনগুলি ঠিকভাবেই মেনে চলতেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর উটের গোশত খাওয়াতে অভ্যস্ত ছিলেন না।
তাই তিনি যখন উটের গোশত খাওয়া থেকে রোখছত চাইলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ ছিলেন। কারণ তিনি তো ওহী মুবারক ব্যতীত কোনো কথা মুবারক বলেন না, কোনো কাজ মুবারক করেন না এবং কোনো সম্মতি মুবারকও প্রকাশ করেন না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র দ্বীন ইসলামে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও। কখনও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)
এই পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়েছে হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উটের গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে। উল্লেখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত আবদুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উটের গোশত খেলেন।
প্রকৃতপক্ষে উটের গোশত খাওয়া সুন্নত। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন, তাই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য উটের গোশত খাওয়া ফরয হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের পর আরো একদিনের কথা; হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইহুদীরা একটি মিথ্যাবাদী সম্প্রদায়। তারা চরম অবাধ্য, নাফরমান। আমি একজন আলিম পিতার আলিম সন্তান। তেমনি একজন রয়ীস (নেতা) পিতার রয়ীস (নেতা) সন্তান। আপনি ইহুদীদের ডেকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। তবে আমার ঈমান আনার কথা তাদের নিকট দয়া করে গোপন রাখবেন।”
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহুদীদের ডেকে তাদের সামনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পেশ করলেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কে?” তারা বললো, “তিনি তো আমাদের প্রাক্তন রয়ীস (নেতা) উনার ছেলে বর্তমান রয়ীস (নেতা)। আলিম পিতার আলিম সন্তান।” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “আচ্ছা; তিনি কি ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন?” তারা বললো, “কখনই না।” উপরন্তু তারা উনার খুব ছানা-ছিফত করলো।
এদিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘরের এক কোনে আড়ালে ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বের হয়ে আসার জন্য ইঙ্গিত করলেন। তিনি কালিমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করতে করতে বের হয়ে এসে ইহুদী সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। তোমরা ভালো করেই জানো ইনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং উনার দ্বীন সত্য।” উনার এরূপ আবেদন সত্ত্বেও ইহুদীরা ঈমান আনলো না। বরং এমন অপ্রত্যাশিতভাবে তারা যে অপমানিত হলো, তাতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। তারা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো, “আপনি একজন ভন্ড, মিথ্যাবাদী ও বিশ্বাসঘাতক। আপনি আমাদের সম্প্রদায়ের একজন নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। আপনার বাবাও ছিলো একজন ইতর।” (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দেখলেন তো। আমি এই ভয়ই করছিলাম। যখন ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে চলে গেলো, তখন পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা আল-আহক্বাফের দশম আয়াত শরীফটি নাযিল হলো। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা) (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












