আলোকিত মহিলা ছাহাবী :
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
, ২৪ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৭ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০১ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
মহাসম্মানিতা হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা উনাদের মধ্যে হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্না ও প্রজ্ঞাবতী ছিলেন।
ঐতিহাসিকগণ উনার পবিত্র নসবনামা বর্ণনা করেননি। শুধু এতটুকু লিখেছেন যে, দাওস গোত্রের সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
ইয়েমেনের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই গোত্র বসবাস করতেন। হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে কখন বা কিভাবে এসেছিলেন তা জানা যায় না। তবে, অনেক ঐতিহাসিকের মতে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহাসম্মানিত নবুয়য়ত মুবারক এবং মহাসম্মানিত রিসালত মুবারক প্রকাশ করেন তখন হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে ছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনাকে অত্যন্ত সুন্দর ও বিনয়ী স্বভাব মুবারক দান করেছিলেন। তিনি নির্দ্বিধায় এবং কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুল করেন। আর এভাবেই তিনি ‘আসসাবিকুনাল আউয়ালূন’ উনাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
তাবকাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুল করলে মুশরিক আত্মীয়-স্বজনরা উনাকে প্রখর রোদে দাঁড় করিয়ে রাখতেন এবং রুটির সঙ্গে মধু খাওয়াতেন। ফলে উনার শরীর মুবারক খুবই গরম হয়ে যেত, কিন্তু উনাকে পানি দেয়া হতো না। এমনিভাবে তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মুশরিকরা উনাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম পত্যিাগের কথা বললো। তিনদিন ও তিনরাতের নির্যাতনে তিনি অনেকটা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। মুশরিকদের কথার অর্থ তিনি বুঝতে পারছিলেন না। যখন তারা আসমানের দিকে ইঙ্গিত করলো, তিনি বুঝতে সক্ষম হলেন যে, তারা পবিত্র তাওহীদ অস্বীকার করার কথা বলছে। তৎক্ষণাৎ তিনি বলে উঠলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি তো ঐ পবিত্র আকিদার উপর কায়েম রয়েছি।”
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি শুধু নিজেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে চুপচাপ থাকেন নি, বরং অত্যন্ত সাহসী তৎপরতার সঙ্গে কুরাঈশ মহিলাদের মাঝেও পবিত্র দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন।
কুরাইশরা যখন হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনার দ্বীন প্রচারের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত হলো তখন উনার প্রতি যুলুম করে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বের করে দিতে চাইলো।
বিভিন্ন কিতাবে এটা প্রমাণিত যে, হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি হিজরত করেন এবং পবিত্র মদীনা মুনাওওয়ারা শরীফে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছিলেন।
সুনানে নাসাঈতে আছে, হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি উনার বাড়ীতে নও-মুসলিমদের দেখাশুনা করতেন এবং খুব সাহায্য সহযোগিতা করতেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনার বেশুমার মুহব্বত ও তাযিম তাকরিম প্রকাশ করতেন। পবিত্র হাদিছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনাকে ঘি হাদিয়া মুবারক করেছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! সেই মুবারক পাত্রের ঘি কখনো শেষ হতো না। তিনি সেই পাত্রের ঘি নিজে ব্যবহার করতেন এবং পরিবারের শিশুদেরকে দিতেন। একদিন তিনি পবিত্র পাত্রটি উল্টিয়ে দেখতে চাইলেন যে, তাতে কি পরিমাণ ঘি অবশিষ্ট রয়েছে। সেদিন থেকেই সেই পাত্র ঘি শেষ হয়ে গেল। হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারকে হাজির হয়ে এই ঘটনা পেশ করলেন। ঘটনা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আপনি পাত্রটি না উল্টাতেন তাতে দীর্ঘদিন যাবত ঘি অবশিষ্ট থাকতো। সুবহানাল্লাহ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দয়া দান ইহসান মুবারক করে সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত সুলতানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারের আহাল ও আহলিয়াকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রচার প্রসারে সাহসী ভূমিকা রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।
-আনজুম রেহনুমা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












