জীবনী মুবারক
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৭)
বিলাদত শরীফ: ৭১৮ হিজরী (১৩১৮ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৭৯১ হিজরী (১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৭৩ বছর
, ২৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৪ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অন্যান্য বর্ণনা:
হযরত খাজা নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সম্মানিত পীর ছাহিব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশিত কোন কাজ যদি মুরীদের জন্য কঠিন মনে হয়, কিংবা মনে সন্দেহের উদ্রেক করে, তা হলে সে মুরীদ সবর করবে এবং ভক্তি ও বিশ্বাস নষ্ট করবে না। হয়ত এর রহস্য পরে তার নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর যদি মুরীদের প্রাথমিক অবস্থায় এরূপ ঘটে এবং তার সবর করার শক্তি না থাকে, তাহলে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট তা জিজ্ঞাসা করা উচিত। এইরূপ জিজ্ঞাসা হালাল অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত। তবে যদি সালিকের মা’রিফাত হাছিলের মধ্যপথে এইরূপ ঘটে, তাহলে তার ঠোঁট নাড়া (অর্থাৎ জিজ্ঞাসা করা) দূরের কথা, মনের মধ্যে জিজ্ঞাসা করার ইচ্ছা পোষণ করাও উচিত নয়। (হালাতে মাশায়েখে নকশবন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া)
একবার জনৈক ব্যক্তি হযরত খাজা নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামত দেখতে চাইলে, তিনি জাওয়াব দিলেন, কারামত তো প্রকাশ হয়েই রয়েছে। কারণ এত গুনাহ করা সত্ত্বেও আমি যমীনের উপর চলাফেরা করছি এবং যমীন ধ্বসে পড়ছে না।
হযরত খাজা নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন উনার সম্মানিত খলীফা হযরত খাজা আলাউদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পবিত্র যোহরের নামায উনার সময় হয়েছে কি-না জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি জাওয়াব দিলেন, না; এখনও সময় হয়নি। হযরত খাজা নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আসমানের প্রতি লক্ষ্য করুন। হযরত খাজা আলাউদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আসমানের প্রতি দৃষ্টিপাত করে দেখলেন, আসমানের পর্দা সরে গেছে এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ফরজ নামায আদায় করছেন। হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনি তো বলছিলেন, পবিত্র নামায উনার সময় হয়নি। এতে তিনি খুবই লজ্জিত হলেন।
হযরত খাজা নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একবার হজ্জ করতে গিয়েছিলেন। হাজীগণ ঈদের দিনে কুরবানী করলেন। হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মীনার ময়দানেই বললেন, আমিও আমার ছোট বাচ্চাকে উনার রাস্তায় কুরবানী দিলাম। হজ্জ শেষে বোখারায় প্রত্যাবর্তনের পর জানা গেলো, হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোট ছেলে সেই ঈদের দিনে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।
একদিন হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একটি নতুন টুপি তৈরী করে দরবেশদের সম্মুখে পরিধান করলেন। সে সময় মা’রিফাতের সমস্ত দরজা উনার সম্মুখে খুলে গেলো। টুপি পরিধানের পর তিনি বললেন, আমি এ সময় বাদশাহদের তাজ (মুকুট) পরিধান করেছি। তখন একজন দরবেশ মাওরাউন্নাহারের বাদশাহের বিষয় আলোচনা করছিলেন। হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মাওরাউন্নাহারের বাদশাহের জুলুমে আমার বোখারার হাকিম কাবুল পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছেন। আমি তাকে হত্যা করলাম। কিছুদিন পর খবর পাওয়া গেলো যে, মাওরাউন্নাহারের বাদশাহ ঐ দিন নিহত হয়েছিলো।
একবার হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালিকদের সাথে বসেছিলেন এবং হযরত খাজা আমীর কুলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাহেবজাদা হযরত বোরহানুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রুটি পাক করছিলেন। হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টি আরম্ভ হলো। সকলেই বিচলিত হয়ে পড়লেন। হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তৎক্ষণাৎ হযরত বোরহানুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে বললেন, বৃষ্টিকে বলো; যতক্ষণ আমরা এখানে থাকি, ততক্ষণ যেন সে এখানে না আসে।
হযরত বোরহানুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরজ করলেন, এরূপ কথা বলার শক্তি কি আমার আছে? হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি তোমাকে বলছি, তুমি ডেকে বলো। হযরত বোরহানুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেভাবেই হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আদেশ পালন করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারকে সেখানে এক ফোঁটাও বৃষ্টিপাত হলো না। আর অন্যান্য স্থানে প্রবল বৃষ্টি হতে লাগলো। (হালাতে মাশায়েখে নকশবন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া)
বিছাল শরীফ:
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলতেন, যখন আমার শেষ সময় আসবে তখন কেমন করে মৃত্যুবরণ করতে হয়, তা সকলকে শিখিয়ে দিবো। সুতরাং যখন উনার শেষ সময় আসলো, তখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে তিনি দু’ হাত উঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে দোয়া করলেন এবং দু’ হাত মুখের উপর ফিরিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে নিজেকে সমর্পন করে দিলেন।
পবিত্র বিছাল শরীফের সময় তিনি ওসীয়ত করেছিলেন, আমার জানাজা নিয়ে যাওয়ার সময় পবিত্র কালিমা শাহাদাত শরীফ বা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কুরআন শরীফ পড়বে না, ইহা বেয়াদবী হবে। বরং এই কবিতাটি পড়বে-
“মুফলেছান নিম আমদাহ দর কুয়ে তু
শাইয়ান লিল্লাহ আয্ জামালে রুয়ে তু”।
অর্থা: আমি সর্বহারা হয়ে আপনার দরবারে এসেছি অর্থাৎ আমার কোন আমল নেই, আপনার “হুসনে জামাল” থেকে কিছু আমাকে খয়রাত দিন। (মিরাতুল আসরার, হালাতে মাশায়েখে নকশবন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া)
তৈমুর লঙ্গের শাসন আমলে হিজরী ৭৯১ সনে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের ৩ তারিখে বোখারা থেকে ১ মাইল দূরে অবস্থিত কাছরে আরেফানে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৭৩ বছল।
(মিরাতুল আসরার, সফিনাতুল আউলিয়া) (সূত্র: নাফাহাতুল উন্স, মিরাতুল আসরার, হালাতে মাশায়েখে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া, সফিনাতুল আউলিয়া) (সমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












