হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-২৭)
, ২৫ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)
উক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমভাবে সকলকেই যে কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাও মূলতঃ ‘হিজাব বা পর্দার’ একটি অংশ। পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার উক্ত ২৭নং আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের তাফসীরগ্রন্থ সমূহে অনেকগুলো মাসয়ালা উল্লেখ করেছেন। যা ধারাবাহিক প্রকাশ করা হচ্ছে।
পূর্ব প্রকাশিতের পর...
একাদশ মাসয়ালা:
অনুমতি প্রার্থনাকারী নিজ পরিচয় দেয়ার ‘পরিভাষা’ সম্পর্কে
প্রতিটি সম্প্রদায়ের অনুমতি প্রার্থনার কিছু পরিভাষা আছে, যার মাধ্যমে পরিচয় লাভ করা যায়। যেমন, হযরত আবূ বকর আল খত্বীব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুসনাদে’ হযরত আবূ আব্দুল মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি ছিলেন হযরত উম্মু মিসকীন বিনতে আছিম বিন উমর ফারূক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার মনিব। তিনি বলেন, আমার মনিব আমাকে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে (ডাকতে) পাঠালেন। তিনি আমার সঙ্গে আসলেন। এবং দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললেন, اندر؟ আমি কি প্রবেশ করতে পারি? তিনি বললেন اندرون প্রবেশ করুন। ... তিনি (বর্ণনাকারী) হযরত আহমদ বিন ছালিহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মদীনা শরীফবাসী আছবাহান গোত্রের এক দারাওয়ারদী ব্যক্তি যখন কারো কাছে প্রবেশ করতে ইচ্ছা করত, তখন সে ব্যক্তি বলতো: أندرون আমি কি প্রবেশ করব? এখানে সে লোকটির লক্বব বা উপাধি ছিল ‘আহলে মদীনা আদ্ দারাওয়ারদী।” (দারাওয়ারদী হচ্ছেন, আব্দুল আযীয বিন মুহম্মদ বিন উবাইদ বিন আবূ উবাইদ)। ইহা তাহযীবুত্ তাহযীব কিতাবে আছে।
দ্বাদশ মাসয়ালা:
অনুমতি প্রার্থনাকারী সালাম না দিলে ঘরওয়ালা তাকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া প্রসঙ্গে
হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত কালাদা বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত ছাফওয়ান বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে দুধ এবং কিছু খিরা নিয়ে পাঠানো হলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা শরীফের এক উপত্যকায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি প্রবেশ করলাম কিন্তু সালাম দেইনি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আপনি ফিরে যান এবং বলুন السلام عليكم আস্সালামু আলাইকুম।” এ ঘটনা হযরত ছাফওয়ান বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর সংঘটিত হয়েছিল। হযরত আবূ যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম না দিবে, তোমরা তাকে প্রবেশের অনুমতি দিওনা।”
হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আত্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেছেন, আমি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছ থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি বলে ادخل আমি প্রবেশ করব? কিন্তু সালাম না দেয়, তখন তুমি বলো তুমি প্রবেশ করবে না।
আমি বললাম: السلام عليكم ‘আস্সালামু আলাইকুম’ তিনি বললেন, হ্যাঁ।
ত্রয়োদশ মাসয়ালা:
কোন ব্যক্তির পাঠানো দূতই তার জন্যে প্রবেশের অনুমতি স্বরূপ
হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “কোন ব্যক্তির নিকট কোন ব্যক্তির পাঠানো দূত-ই তার জন্য অনুমতিস্বরূপ।” অর্থাৎ যখন তার কাছে ডেকে আনতে কোন ব্যক্তিকে পাঠানো হবে, তখন আহূত ব্যক্তির প্রবেশের জন্য এটিই অনুমতি স্বরূপ। যার স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফের মধ্যে, “যখন তোমাদেরকে আহবান করা হয় (খাওয়ার জন্য) তখন দূতের সঙ্গেই আসবে, কেননা নিশ্চয়ই এটাই তার জন্য অনুমতিস্বরূপ।” হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ হাদীছ শরীফখানা হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকেও বর্ণনা করেছেন। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












