হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-৩৭)
, ২৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০২ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اياكم والتعرى فان معكم من لا يفارقكم الا عند الغائط وحين يفضى الرجل الى اهله، فاستحيوهم واكرموهم
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা বস্ত্রহীনতা থেকে সতর্ক থাক।’ অর্থাৎ শরীর থেকে কাপড় সরে যাওয়া থেকে সতর্ক থাক। শরীর থেকে কাপড় সরে যাওয়া থেকে, সতর অনাবৃত হওয়া থেকে তোমরা সতর্ক থাক, সতর খুলে যাওয়া থেকে সর্তক থাক।
ঐ সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম থেকে তোমরা সাবধান থেক, যে ফেরেশতারা তোমাদের থেকে জুদা হয় না। কয়েক সময় ব্যতীত ফেরেশতারা তোমাদের থেকে জুদা হয়না। কাজেই তাদের থেকে সাবধান থেক। মানুষ থেকে তো সতর্ক থাকবেই, জীন থেকেও সতর্ক থাকবে, এমনকি ফেরেশতাদের কাছ থেকেও সতর্ক থেক যাতে তোমাদের সতর খুলে না যায়। কয়েক সময় ফেরেশতারা শুধু সরে যান, যখন তোমরা ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশ করো এবং যখন স্বামী-স্ত্রী নিরিবিলিতে একাকী হয় সে সময় ব্যতীত ফেরেশতারা তোমাদের সাথে থেকে থাকেন, তোমরা তখন সতর্ক থেক। তোমরা তাদেরকে লজ্জা করো। তাদেরকে সম্মান করো। অর্থাৎ তোমরা সে বিষয়ে সতর্ক থাক যে, তোমাদের সতর যেন কোন অবস্থাতেই না খুলে যায়। এক ছাহাবী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিরিবিলিতে একাকী যদি ঘরে আমার সতর খুলে যায় তাহলে অসুবিধা কি? তখন আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছিলেন যে দেখ, সেখানে একে তো ফেরেশতা রয়েছে, দ্বিতীয় মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তো দেখে থাকেন। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তো বান্দার সবই দেখেন, তাহলে কাপড় পরাতে কি সম্পর্ক রয়েছে? আর কাপড় না পরাতে কি সম্পর্ক রয়েছে? এটার ব্যাখ্যায় যারা মুহাক্কিক-মুদাক্কিক উনারা বলেছেন, একটা বান্দা যখন সতর ঢেকে রাখে বা কাপড় পরে থাকে তখন সে মহান আল্লাহ্ পাক উনার কাছে মুয়াদ্দাব অর্থাৎ আদবের সাথে থাকে, শালীনতা বজায় রাখে অর্থাৎ সে শালীন বান্দা, মহান আল্লাহ্ পাক উনার পছন্দনীয় ছুরতে থাকে। যখন সে পোশাক বা সতর খুলে ফেলে তখন সে একটা বেয়াদব হিসেবে থাকে। অশালীন, খারাপ বান্দা হিসেবে মহান আল্লাহ্ পাক উনার কাছে পরিগণিত হয়।
কাজেই সেটাই বলা হয়েছে যে, তোমরা সতর সম্পর্কে সাবধান থেক। যা হাদীছ শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন বসেছিলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম আসলেন, আলোচনা করতে থাকলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম আসলেন, তখনও আলোচনা চলতে থাকল। এরপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন্ নূরাইন আলাইহিস সালাম আসলেন, তখন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইযার বা লুঙ্গি মুবারক টেনে যতটুকু নামানো দরকার পুরাটাই নামিয়ে দিলেন এবং বললেন যে দেখ- সাইয়্যিদুনা হযরত যুন্ নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ফেরেশ্তারাও লজ্জা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ্!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাপড় মুবারক সতর মুবারকের উপর উঠেছিল তা নয়, সতর খুলে গিয়েছিল তাও নয়, নিচেই ছিল। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন্ নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে আরও নামিয়ে দিলেন। যেহেতু ফেরেশতারাও উনাকে লজ্জা করে থাকেন। সেজন্য মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “সতরের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে, সাবধান থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই যেন এর খিলাফ না হয়। সেটাই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেছেন-
ويحفظوا فروجهم - ويحفظن فروجهن
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, ‘পুরুষ ও মহিলা তারা উভয়ে যেন তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে।’
অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج فانه اغض للبصر واحصن للفرج ومن لم يستطع فعليه بالصوم فانه له وجاء
“হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদিন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে কিছু ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কি তাহলে খাসী হয়ে যাব? খাসী হয়ে যাওয়া অর্থাৎ পুরুষত্ব নষ্ট করে দেয়া, সেটা কি আমরা নষ্ট করে ফেলব? আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, “না, সেটা তো জায়িয নেই।” ‘হে যুবক (অবিবাহিত) ছাহাবীগণ! আপনাদের মধ্যে যাদের সামর্থ রয়েছে উনারা বিবাহ করে নিন।’ এটা উনার চোখের জন্য উত্তম হবে এবং উনার লজ্জাস্থানের জন্য হিফাযতকারী হবে।
আর যার সামর্থ নেই বিবাহ শাদী করার; তিনি যেন রোযা রাখেন। সেটাই উনার জন্য হচ্ছে খাসী করা। তিনি যেন রোযা রাখেন। সেটাই উনার হিফাযতের কারণ।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












