হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-২১)
, ১২ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২১ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
হিজাব বা পর্দা করার পদ্ধতি
মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিন মহিলাদেরকে হিজাব বা পর্দা করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এবং বাইরে বের হওয়ার সময় পুরো শরীর ঢেকে থাকে এমন কাপড় পরিধান করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন তাদের ইজ্জত-সম্মান, মর্যাদা রক্ষা বা হিফাযত করার জন্যই। ব্যাখ্যাকারকগণ এই পর্দার পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। হযরত ইবনু জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন: আমি হযরত উবাইদা সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে يدنين عليهن من جلابيبهن এই পবিত্র আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি একটি বড় ধরনের চাদর নিয়ে যা নিজের কাছে ছিলো তা মাথায় দিলেন, তা দ্বারা পুরো মাথা আবৃত করলেন এবং উনার পুরো শরীর আচ্ছাদিত হয়ে গেল এবং উনার মুখম-লও ঢাকলেন শুধু বামদিকের একটি চোখ বের করে রাখলেন।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিলদ ৩৮১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত ত্ববারী, তাফসীরুল্ খাযিন, হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন)
মহিলাদের জন্য তাদের মুখম-ল ঢেকে রাখা ফরয
মহিলাদেরকে মাহরাম (যাদেরকে দেখা দেয়া জায়িয) পুরুষরা ছাড়া অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (তারা অর্থাৎ মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে আহাল বা স্বামী, পিতা ...... ইত্যাদি মাহরামদের কাছে প্রকাশ করতে পারবে) (পবিত্র সূরা নূর শরীফ ৩১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ)
যখন মুখম-লই সৌন্দর্যের মূল। মুখম-ল থেকেই সৌন্দর্য এবং ফিৎনার সূচনা হয়। এজন্যই সবদিক থেকে মুখম-লের পর্দা জরুরী অর্থাৎ ফরযে আইন। .... যদি ফিৎনা থেকে বাঁচাটা নিরাপদ না হয়, তবে মুখম-ল খোলা রাখা হারাম হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এই আখিরী যামানায় মুখম-ল খোলা রাখার ফিৎনার বিষয়টি নিরাপদ নয়। এজন্যই মুখম-ল ঢেকে রাখা ওয়াজিব (ফরয) মুসলিম নারীদের সম্মান-মর্যাদা হিফাযত করার লক্ষ্যে। পবিত্র সূরা নূর শরীফে (মুখম-ল খোলা রাখা বিদয়াত) নামক অধ্যায়ে আমরা অনেক শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে উল্লেখ করেছি যে, মুখম-ল ঢেকে রাখা ওয়াজিব তথা ফরয, যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যাবে। (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিলদ ৩৮২ পৃষ্ঠা, আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়াহ ১ম জিলদ ১৮৮-১৯২ পৃষ্ঠা)
মূলতঃ হিজাব বা পর্দা এমন হবে, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (তারা অর্থাৎ মহিলারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে) ..... পরিচিত অর্থ الجلباب ‘জিলবাব’ বলা হয় এমন লম্বা কাপড়কে, যা সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। (الادناء ‘ইদ্না’) হচ্ছে ارخاء ‘ইরখা’ ও السدل ‘সদ্ল’ অর্থাৎ বুঝানো। তাই শরীয়তের পরিভাষায় হিজাব বা পর্দা হচ্ছে; যা সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিলদ ৩৮৪, ৩৮৫ পৃষ্ঠা)
হিজাব বা শরঈ পর্দার ব্যাপারে জরুরী কিছু শর্ত-শারায়েত রয়েছে-
(১) সকল মু’মিনের আহলিয়াগণের অর্থাৎ মহিলাগণের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন। এটা শরীয়তের স্থির সিদ্ধান্তে ওয়াজিব বা ফরয। (২) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা হযরত আযওয়াজে মুত্বহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং উনার মহাসম্মানিতা হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সমস্ত মহিলাদের জন্য আদর্শ এবং নমুনা। (৩) ‘শরয়ী জিলবাব’ বা আবরণ বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মহিলার জন্য ওয়াজিব। যা মহিলার সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে বা ঢেকে রাখে। (৪) এমন মুসলমান মহিলার উপর হিজাব বা পর্দা করা (অক্ষমতার কারণে) ফরয নয়, যে অনেক সংকটে, কঠিন অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। তবে তখনও পর্দা করাটা তার জন্য সম্মান ও মর্যাদার কারণ। (৫) শরয়ী হিজাব পালন করার মধ্যে মহিলাদের জন্য সতীত্ব সংরক্ষণ করার বিষয় রয়েছে। আর ফিৎনা-ফাসাদ ছড়ানো থেকে এবং অশ্লীলতা-অশালীনতার প্রসার থেকে সমাজ হিফাযত হয়ে থাকে। (৬) মুসলমান মহিলার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নির্দেশ মুবারক সমূহ আকড়ে ধরা ফরয। আর সেগুলো আদবের সাথে পালন করা, যা সম্মানিত দ্বীন ইসলামে ফরয করা হয়েছে। (৭) মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাগণের প্রতি দয়াশীল যে, তাদেরকে এমন সমস্ত শরয়ী আহকাম দিয়েছেন যাতে তাদের জন্য কল্যাণ এবং ইহ্ ও পরকালের কল্যাণ নির্দিষ্ট রয়েছে। (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিলদ ৩৮৬, ৩৮৭ পৃষ্ঠা)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












