হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
, ২৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৪ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৮ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান মুবারক এনেছেন তদ্রƒপ যদি তোমরা ঈমান মুবারক গ্রহণ করতে পারো তাহলে তোমরা হিদায়েত মুবারক লাভ করতে পারবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ : আয়াত শরীফ ১৩৭)
এ লিখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মহব্বত মুবারক প্রকাশের কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(১৩)
কুল্লু মুছীবাতিন বা’দাকা জালাল : “আপনাকে দেখার পর সমস্ত বিপদই তুচ্ছ হয়ে গেলো”
সম্মানিত উহুদ জিহাদে কাফিরদের আক্রমণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল ইস্তিক্বামত মুবারক (জিহাদে আহত হওয়া শান মুবারক) গ্রহণ করেন। এরপর হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সা’দ বিন উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উপর ভর করে পর্বতের একটি নির্বিঘœ ঘাটিতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।
হযরত মুসআব বিন উমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেহারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুর রহমত মুবারক (চেহারা মুবারক) উনার সাথে সাদৃশ্য ছিলো। তিনি উহুদের ময়দানে শহীদ হয়েছিলেন। উনার পবিত্র জিসিম মুবারক ময়দানে দেখে কাফিররা চিনতে ভুল করে ঘোষণা দিলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করেছেন। শয়তান মুহূর্তের মধ্যে এ সংবাদ ছড়িয়ে দিলো। এই সংবাদ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মদীনা শরীফ-এ প্রচারিত হওয়া মাত্রই মাতম শুরু হয়ে গেলো। বহু মুসলিম নর-নারী ক্রন্দন করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে উহুদ প্রান্তরের সমরক্ষেত্রের দিকে ছুটে আসতে লাগলেন। উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবিয়াহ আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম) তিনি এসে দেখেন এখনো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুর রহমত মুবারক (মুখম-ল মুবারক) থেকে অজ¯্র ধারায় মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) প্রবাহিত হচ্ছেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পানি আনতে লাগলেন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আনূ নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুন নাজাত মুবারক (মহাপবিত্র রক্ত মুবারক) ধুয়ে দিচ্ছিলেন।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার দীনার গোত্রের একজন আনসারী মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বেকারার-পেরেশান হয়ে ছুটে আসছেন। হঠাৎ কয়েকজন মুসলমান উনাদের সাথে সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন-
مَا بَالُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংবাদ কী?
উনারা উত্তরে বললেন- তা আমাদের জানা নেই। তবে আপনার সহোদর ভাই তিনি শহীদ হয়েছেন।
হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন- ইন্নালিল্লাহ, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ক্ষমা করুন। তিনি আবার সামনে অগ্রসর হয়ে অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করলেন:
مَا بَالُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংবাদ কী?
উনারা বললেন- তা আমাদের জানা নেই। তবে আপনার আহাল (স্বামী) শহীদ হয়েছেন।
হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন- ইন্নালিল্লাহ, উনার প্রতি কল্যাণ হোক। তিনি সামনে অগ্রসর হলেন, আবার কয়েকজন মুসলমান উনাদের সাথে সাক্ষাৎ হলো।
তিনি উনাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন:
مَا بَالُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংবাদ কী?
উনারা উত্তর দিলেন, তা আমাদের জানা নেই। তবে আপনার পিতা শহীদ হয়েছেন।
হযরত মহিলা ছাহাবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন- ইন্নালিল্লাহ, উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত হোক। আগে বলুন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংবাদ কী। আমি তা জানার জন্য অস্থির হয়ে আছি।
উনারা বললেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল ইস্তাওয়া (সুস্থতা) শান মুবারক-এ আছেন। ঐ দেখুন তিনি আপনার সম্মুখে অবস্থান মুবারক করছেন। হযরত মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন- ভাই সকল! আমাকে একবার দেখান, প্রাণ প্রিয় মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুর রহমত মুবারক (মহাসম্মানিত মহাপবিত্র চেহারা মুবারক) উনার দীদার লাভ করে আমার নয়ন যুগল ঠা-া করি। উনারা উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে নিয়ে গেলেন। এবার তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল ইস্তাওয়া (সুস্থতা) শান মুবারক-এ দেখে শান্ত হলেন। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন-
كُلُّ مُصِيْبَةٍ بَعْدَكَ جَلَلٌ
প্রাণ-প্রিয় মহাসম্মানিত মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল ইস্তাওয়া (সুস্থতা) শান মুবারক-এ দুনিয়াবী হায়াত মুবারক-এ অবস্থান মুবারক করলে সমস্ত বিপদই আমার নিকট তুচ্ছ। সুবহানাল্লাহ!
চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কী বেমেছাল ও নজীরবিহীনভাবে মহব্বত মুবারক করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহব্বতে উনাদের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আহাল-ইয়াল, পরিবার-পরিজন এমনকি নিজের জীবনকেও কুরবান করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মহব্বত করার এবং উনাদের ন্যায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন মুরাদী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












