হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
, ১৯ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৩ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ১১ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا.
অর্থাৎ আপনারা অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যেরূপ ঈমান মুবারক এনেছেন তদ্রƒপ যদি তারা (অন্য লোকেরা) ঈমান মুবারক গ্রহণ করতে পারে তাহলে তারা হিদায়েত মুবারক লাভ করতে পারবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ : আয়াত শরীফ ১৩৭)
এ লিখনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল মহব্বত মুবারক প্রকাশের কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(১৮)
নিজের দেহকে ঢাল বানিয়ে বেমেছাল আত্মত্যাগ
হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহূদ যুদ্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উনার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তেও তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ অটল ও অবিচল থাকেন। সেদিন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মসম্মানিত হাত মুবারক)-এ সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক বরণের জন্য বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন।
যুদ্ধের পূর্বক্ষণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার এক মহাসম্মানিত মহাপবিত্র তরবারী মুবারক মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাপবিত্র হাত মুবারক)-এ নিয়ে বললেন, "এটি কে নিবে?" উপস্থিত সকলেই হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু এ মহাসম্মানিত তরবারী মুবারক উনার সুমহান হক্ব উনার ব্যাপারে আর কেউই কিছু না বলে চুপ থাকলেন; কিন্তু হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি পারবো এর হক্ব আদায় করতে।
কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র তরবারী মুবারক উনার হক্ব কি?” তিনি জবাবে ইরশাদ মুবারক করেন, “এ নিয়ে কোনো মুসলমানকে হত্যা না করা এবং এটি নিয়ে কাফিরদের ভয়ে পালিয়ে না যাওয়া”।
যুদ্ধের সময় মাথায় একটি কাপড়/পাগড়ী বেঁধে রাখা ছিল উনার অভ্যাস। সেটা বাঁধলে বুঝা যেত, তিনি এখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাত মুবারক) থেকে তিনি তরবারিটি নিয়ে মাথায় কাপড়/পাগড়ী বাঁধলেন। তারপর একটা অভিজাত চলনে সৈনিকদের সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। উনার চলার ধরণটা ছিল এক বিশেষ ধরনের যা তখন রীতিমত একটা দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছিল।
'আল-মাশহারা' নামে উনার একটি বর্ম ছিল। যুদ্ধের সময় তিনি সেটা পরিধান করতেন। এ কারণে উনাকে 'যুল মাশহারা' (মাশহারার অধিকারী) বলা হতো। উনাকে "যুস্সাইফাইন (দুই তরবারির অধিকারী)"-ও বলা হতো। কারণ, উহুদ যুদ্ধে তিনি দু'টি তরবারি দিয়ে লড়েছিলেন। একটি নিজের অপরটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার।
সম্মানিত উহুদ জিহাদ উনার কঠিন সময়ে যে মুষ্টিমেয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘিরে নিজের দেহকে ঢাল বানিয়ে অটল হয়ে দাঁড়ান, উনাদের মধ্যে হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্যতম। এদিন তিনি নিজের পিঠ পেতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। তাই শত্রুর নিক্ষিপ্ত তীর-বর্শার আঘাতে আঘাতে উনার পিঠ ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
এ যুদ্ধের এক পর্যায় পৌত্তলিক আবদুল্লাহ ইবন হুমাইদ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে তরবারি দ্বারা প্রচ- আঘাত হেনে বলে ওঠেন, “আমি ইবন খারাশা”। সেই আঘাতে নরাধম ইবনে হুমাইদ ধরাশায়ী হয়। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি সাল্লাম তিনি উনার জন্য এই বলে দু’আ মুবারক করেন, "আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ইবনে খারাশার (হযরত আবূ দুজানা) রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার প্রতি সন্তুষ্ট হন আমি উনার প্রতি সন্তুষ্ট।
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উনাদের পিতা-মাতা, আল-আওলাদ, মাল-সম্পদ এমনকি নিজের জানের চেয়েও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা উনাদের জান-মাল সমস্ত কিছু কুরবান করে দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক উনার ক্ষেত্রে উনারা অন্য আর কোনো কিছুকেই পরওয়া করতেন না। সুবহানাল্লাহ!
যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করার এবং উনাদের ন্যায় পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন মুরাদী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












