জীবনী মুবারক
১৩ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাহিদে মিল্লাত, শহীদে বালাকোট, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১২)
বিলাদত শরীফ: ১২০১ হিজরী বিছাল শরীফ: ১২৪৬ হিজরী বয়স মুবারক: ৪৫ বছর
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২১ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২০ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ০৫ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হিন্দুস্থানের বড় বড় আলিম-উলামা উনাদের বাইয়াত গ্রহণ:
যখন আলিম কুল শিরোমনি, হযরত মাওলানা আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হলেন, তখন দিল্লীতে একটা সাড়া পড়ে গেলো। কেউ বললো, আপনি এত বড় আলেম হওয়ার পরেও উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার কি দরকার ছিলো?
জবাবে তিনি বলেন, আমি হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার পিছনে মুক্তাদী হিসেবে দু’রাকাত নামায পড়েছি। ঐ দু’রাকাত নামাযে আমার যা কিছু হাছিল হয়েছে তা সারা জীবনেও হয়নি। ঐ দু’রাকায়াত নামাযে উনার নিকট নামাযের হাক্বীক্বত জাহির হয়েছিলো। তিনি নামাযে সরাসরি পবিত্র কা’বা শরীফ দেখতে পেয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমি হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিছনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ন্যায় নামায পড়ার স্বাদ পেয়েছি। সুবহানাল্লাহ!
হযরত শায়েখ আব্দুর রহীম বেলায়েতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাজার হাজার মুরীদ ছিলো। যিনি হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদা পীর ছাহেব। তিনি সব ত্যাগ করে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, সুলুকের রাস্তায় চলতে কারো নিকট বাইয়াত হওয়ার প্রয়োজন নেই আমার। কিন্তু সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক নিহিত রয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। সুবহানাল্লাহ!
হিজরত ও শিখদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা:
মোঘল সাম্রাজ্য পতনের পর ভারত বিবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। হযরত আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরবর্তী অধিকাংশ শাসকগণ ছিলো বিলাস প্রিয় জীবনে অভ্যস্ত ও দেশ পরিচালনায় অনুপযুক্ত। ফলে বিদেশী শক্তি তাদের উপর চেপে বসে।
প্রথমতঃ যেমন ইংরেজ শক্তি বাণিজ্য করার নামে উপমহাদেশের বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য মোঘল শাসন পতনের অপেক্ষায় ছিলো। এছাড়া ইরানের নাদীর শাহ, আফগানিস্থানের আহমদ শাহ আবদালীর আগমণ বিবিধ সম্পদ লুণ্ঠন, হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষ ধ্বংসের মুখোমুখি হলো।
দ্বিতীয়তঃ মারাঠা ও পাঞ্জাব সীমান্তে শিখদের যুলুম অত্যাচার এর মাত্রা এত বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে, মুসলমানদের শান্তিতে বসবাস করাই অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো। সেই সময় শিখদের অত্যাচারে মুসলমানগণ কত যে অসহায় ছিলো তার সত্যিকার পরিচয় মিলে হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি কবিতার মধ্যে। তিনি উনার স্বচক্ষে দেখা শিখদের অত্যাচার সম্পর্কে কাব্যিক ভাষায় বলেন-
মহান আল্লাহ পাক! শিখ ও মারাঠাদের প্রতিশোধ নিন,
তাদের ঘৃণ্য উপদ্রব নিকটে, দূরে নয়।
তারা আমাদের অনেককে হত্যা করেছে।
শীতকাল প্রায় আগত, তাই মন উৎকক্তিত শিখদের ভয়ে, এবং সেই ভয় যথার্থ।
মহান আল্লাহ পাক তাদের এদেশ থেকে উচ্ছেদ করুন!
যেহেতু তারা নিকৃষ্ট শত্রু আর তারা সন্ত্রাসের সমষ্টি।
হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ কবিতা থেকে বুঝা যায় সে সময় শিখ সম্প্রদায় মুসলমানদের উপর কত জুলুম-নির্যাতন করতো। তারা পাঞ্জাবের মুসলমানদের উপর জোর-জুলুম চালাতো। মসজিদগুলো ঘোড়ার ঘর বানিয়েছিলো। আজানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিলো। মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের মান-সম্ভ্রম নষ্ট করতো এবং তাদের দ্বারা দাসী-বান্দীর কাজ জোর করে করানো হতো। সীমান্তে মুসলমান কৃষকদের শস্যের ক্ষেতগুলো ও তাদের বাড়ী-ঘরে প্রায় সময় আগুন ধরিয়ে দেয়া হতো। অন্যান্য ইসলামী শরীয়ত, হুকুমত সেখানে পালন করা কোন অবস্থাতেই সম্ভবপর ছিলো না।
মোট কথা সেখানকার সমগ্র মুসলমান হতাশা, বঞ্চনা ও অবমাননাকর অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন-রাত অতিবাহিত করছিলো। তারা একজন নিঃস্বার্থ ও নিবেদিত মুসলিম আমীরের প্রতীক্ষায় ছিলো। যিনি তাদের এই অবস্থা থেকে বিশেষ করে শিখদের কবল থেকে মুক্তি দিতে পারেন।
মুজাহিদে মিল্লাত, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুসলমানদের এ অবস্থা লক্ষ্য করে সীমান্তে বিশেষ করে সারা ভারতে তাগুত শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন। এতে উনার সঙ্গী-সাথী, খলীফা ও সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া গেলো। ইতোমধ্যে তিনি কয়েকবার ভারতবর্ষের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত ছফর করে সরেজমিনে মুসলমানদের দূরাবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
১২৪১ হিজরীর ০৭ই জুমাদাল ঊখরা মোতাবেক ইংরেজী ১৮২৬ সালের ১৭ই জানুয়ারী তিনি উনার মাতৃভূমি “রায় বেরেলভীর” নিজস্ব বাড়ি থেকে আহলিয়া-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে সারা জীবনের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের আগ পর্যন্ত আর কোন দিন তিনি নিজ দেশে ফেরেননি।
তিনি রাজপুতনা, মারওয়াড়, সিন্ধু, বেলুচিস্থান, আফগানিস্থান ও সীমান্তের বিভিন্ন গিরি পর্বত, বন জঙ্গল, মালভূমি, নদী-নালা অতিক্রম করে শিখদের এলাকায় এসে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। শিখদের সাথে উনার যে সমস্ত যুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে নওশেরার যুদ্ধ, সিদুর যুদ্ধ, আকোড়ার যুদ্ধ, পানজ তারের যুদ্ধ, মায়ার যুদ্ধ, মর্দান যুদ্ধ ও বালাকোটের যুদ্ধসমূহ প্রধান।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
-মুহাদ্দিস আহমদ হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












